ভৌতিক বিনাশ পর্ব ১ সোশ্যালব্লগওয়ার্ল্ড

ইমরান সাহেবের বউ প্রতিদিন উলঙ অবস্থায় বাথরুমে পড়ে থাকে।এ নিয়ে ইমরান সাহেব খুব চিন্তিত। প্রতিদিন রাতে উনার বউ বাথরুমে কেনো উলঙ হয়ে পড়ে থাকে। এ ঘটনা আজ থেকে না,গত ৭ দিন ধরে হয়ে আসছে। বউকে কিছু জিজ্ঞাস করলে সে উত্তর দেয়,” আমি কিছু জানিনা। কে আমাকে নিয়ে যায়,আর উলঙ করে ফেলে”।ইমরান সাহেব বউকে সন্দেহ করতেও বাধ্য না।কারণ বাড়িতে কেও প্রবেশ করে আবার বের হওয়াটা বড় টাপ বেপার।

ইমরান সাহেব পেশায় একজন ডক্টর। সারাদিন হাসপাতালে রোগী নিয়ে পড়ে থাকে।আর রাতে বাড়ি ফিরে নিজেই এক ধরনের রোগী হয়ে যাচ্ছে। বউয়ের এমন আচার-আচরণ উনার কাছে সুবিধেজনক না। বিয়ে করেছেন আজ ৩ বছর হয়েছে।এখনো কোনো বাচ্চা জন্ম দিতে পারেননি। তিনি নিজেই একজন ডাক্তার, কিন্তু সমস্যাটা উনার নিজেরি।তবে এ নিয়ে ইমরাম সাহেবের বউ চিন্তিত না। তার বউ চায়,উপরওয়ালা যেদিম মুখ তুলে তাকাবেন,সেদিন কিছু হবে। কারণ উপরওয়ালার শক্তির কাছে তো বৈজ্ঞানিক শক্তি তুচ্ছ মাত্র। তবে আজ ৩ বছর পর এমন অদ্ভুত কান্ড ঘটার ব্যাখ্যা তাদের কাছে মিলেনা। কেনো এরকম, কেনো ইমরান সাহেবের বউ রাতে উলঙ হয়ে বাথরুমে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকে। ব্যাপারটা আর মেনে নিতে পারেনা ইমরান সাহেব। অবশেষে তিনি বাসাটা চেঞ্জ করেন আট দিনের মাথায়। নতুন বাসা,নতুন মানুষ,নতুন পরিবেশে চলে আসে ওরা। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।পূর্বের ঘটনার মতো এখনো সেই একই কান্ড ঘটছে। রাতে নিদ্রায় যাওয়ার পর অব্দি সব ঠিক থাকলেও,সকালে বউকে পাওয়া যায় বাথরুমে উলঙ অবস্থায়। ইমরান সাহেব দিন শেষে হয়রান হয়ে যায়।এর সমাধান উনার জানা নেই।কারো কাছে শেয়ারও করতে পারছেনা। দেওয়ালেরও কান আছে।

১ মাস পার হয়ে যায়। ইমরান সাহেব বাসায় এসে দেখেন উনার বউ ফ্লোরে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। হাত থেকে কালো ব্যাগখানা ফেলে দিয়ে দৌড়ে যান তিনি। বউয়ের পাশে হাটু গেড়ে বসে তিনি ডাকতে থাকেন,” এই মুন্নি, কি হলো তোমার,মুন্নি..উঠো..?”।

কোনো সাড়াশব্দ না ফেয়ে উনি বউকে কোলে নেয়। এরপর বিছানায় ধীর করে শুয়ে দেয়। আবার বেডরুম থেকে দৌড়ে ড্রইং রুমে যান। জলের মগটা হাতে নিয়ে ফের আসে বেডরুমে। বউয়ের চোখে মুখে পানি দিয়ে আবার ডাকতে লাগলেন,”এই মুন্নি।
কিছুক্ষণ পর মুন্নি চোখের পাতা খোলে কাঁপতে কাঁপতে। ইমরান সাহেবের মুখে কিছুটা হাসির আলো ফুটে।এরপর তিনি মুন্নির পাশে বসে,তার গালে দু হাত স্পর্শ করে বলেন,
-কি হয়েছে তোমার মুন্নি? এভাবে ছিলে কেন?
– আমার খুব বমি হয়েছে ইমরান। বুঝতেছিনা কি হয়েছে।

ইমরান সাহেব খানিকটা কনফিউজড হয়ে যায়। বমি হবার কারণ ওটা নাতো। তিনি নিজেই আবার দৌড়ে গিয়ে দরজার সামনে থেকে ব্যাগটা নিয়ে আসেন। নিজের বউয়ের পরীক্ষা নিজেই করতে থাকে। চেক করার পর উনি নিজেই হেসে উঠে। যা সন্দেহ করেছিলো,তা হয়েছে। নতুন কারো আগমন হতে চলছে। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।এ কান্নার মাঝে কষ্ট নয়,সুখ লুকিয়ে আছে। ইমরান সাহেব কয়দিনের জন্য হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়ে নেয়। বউয়ের সেবা যত্ন করার জন্য সে ছাড়া তো কেও নেই। ইমরান সাহেবের মা বাবা অনেক আগেই ওপাড়ে পাড়ি জমায়। নিজের মামার বাসা থেকে পড়াশুনা করেন। উনার মানার ছোটখাটো ডিমের ব্যবসা ছিলো। তা দিয়েই ওর পড়াশুনার খরচ চালাতো। কিন্তু তার বিনিময় ইমরানের সকল জায়গা জমি হাতিয়ে নেন তিনি। পড়াশুনা করে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে ইমরান সাহেব। এরপর নিজেই নিজের ঠাই টুকু তৈরি করেন। মুন্নির মা বাবাকে ব্যাপারটা জানায়। উনারাও বেশ খুশি হন,কয়েকদিন পর মুন্নির মা আসবে মুন্নির দেখাশুনা করার জন্য। মাঝখানের সময়টুকু ইমরান সাহেব নিজেই উনার স্ত্রীর পাশে থাকতে চান।
ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে মুন্নির গর্ভে থাকা শিশুটি। কেটে যায় আরো ১০ মাস।

১০ মাস ৬ দিন পর মুন্নির গর্ভবেদনা শুরু হয়। ইমরান সাহেবের মুখে কালো ছায়া নেমে আসে। আজ উনার বউয়ের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে। বউয়ের এমন কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারছেন না।তবে কি বা করার।সব মেয়েকেই যে এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়। ( গর্ভবতী নারী)

হসপিটালে নিয়ে আসা হয় মুন্নিকে। ইমরান সাহেব অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনায় ব্যস্ত। শান্তনা দেওয়ার মত মুন্নির মা এসে দাঁড়ায় উনার পাশে। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার থিয়েটার থেকে বের হয়ে আসে। ইমরান সাহেব দৌড়ে গিয়ে উনার হাত ধরে বললেন,
– কি হয়েছে স্যার?
– কংগ্রেস, আপনার ছেলে সন্তান হয়েছে।
– আলহামদুলিল্লাহ। আর মুন্নি? সে ঠিক আছে?
– সরি ইমরান সাহেব। she is no more..

বলেই ডাক্তার মাথা নিছু করে ফেলেন। ইমরান সাহেব খানিকক্ষণের জন্য স্থব্ধ হয়ে যান। স্বাভাবিক শক্তি হারিয়ে উপচে পড়ে যায়। অতএব, জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সবাই ইমরাম সাহেবকে ধরতে গিয়েও পারেনি। ফ্লোরে পড়ে যায় তার আগেই।
জ্ঞান ফেরার পর মুন্নিকে পাগলের মত খুজতে থাকেন উনি। তবে এইটা কতক্ষণ? উনি নিজেও একজন ডাক্তার।খুব ভালো করেই জানেন যে,সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় অনেক মা জীবন হারায়। ১০ শতাংশের মাঝে ৯ শতাংশ এমনি হয়ে থাকে। সবাই শান্তনা দিয়ে অবশেষে উনাকে কিছুটা শক্তি দেন। নিজের হাতে স্ত্রীকে দাপন করে চলে আসেন। বাড়িতে এসে দেখে উনার বাচ্চাটা কান্না করছে। এ প্রথম তিনি তার বাচ্চাকে নিজের চোখে দেখলেন। এতক্ষণ মুন্নির দাপনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
অবশ্য তিনি মুন্নিকে ছাড়া এই বাচ্চা নিতেন না। কিন্তু ৮ মাস চলাকালীন মুন্নি বলেছিলো,এ বাচ্চার সব দায়িত্ব ইমরানের। ওর যা কিছু হয়ে যাক,তাকে মাথায় তুলে বড় করবে ইমরান। হয়তো আজ সে কথাটাই বাচ্চাটির প্রতি ইমরান সাহেবের মায়া জড়িয়ে আছে।

কিন্তু বাচ্চাটা দেখতে বড়ই অদ্ভুত। আর ১০টা বাচ্চার মতো সে নয়। বাজারকৃত দুধ পান করেনা সে। বাচ্চাদের কোনো খাবারও সে খায়না। শুধু পানি খেলেই সে শান্ত। টানা ১ বছর সে বাচ্চা পানি খেয়ে বড় হয়েছে। ইমরান সাহেব নিজেও বুঝতে পারেনা, উনার বাচ্চার এই অভ্যাসের কারণ। পৃথিবীতে এর আগে,বা তার ডাক্তারি জীবনেও তিনি এমন বাচ্চা দেখেনি।অথচ তার নিজের বাচ্চাটাই এমন।

বাচ্চার জন্মের ২ বছর পর। একদিন রাতে বাচ্চাটাকে ঘুম পাড়িয়ে ইমরান সাহেব ঘুমিয়ে যায় পাশেই। মাঝরাতে উনার কানে ভেসে আসে গুটগুট শব্দ। চোখ মেলেই তিনি দেখলেন উনার বাচ্চা বিছানায় নেই। বেশ ভয় পেয়ে যান তিনি।ঘাবড়ে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ড্রইং রুমে গিয়ে দেখেন,বাচ্চাটা ড্রইং রুমে একা একা পুতুল নিয়ে খেলছে। মাত্র ২ বছরের বাচ্চার দ্বারা এইটা কিভাবে সম্ভব। সে বিছানা থেকে নামলো কিভাবে, আর দরজাটাও খুললো কিভাবে। উনার স্পষ্ট খেয়াল আছে দরজা লক ছিলো। আর এত রাতে সে পুতুলটা খুজে পেলো কোথায়। জানালার গ্লাস ভেদ করে চাঁদের আলো এসে সোজা বাচ্চাটার উপর পড়ছে। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বাচ্চাটা কি করে।ইমরান সাহেব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে কি হয়। কিছুক্ষণ পর বাচ্চাটি পুতুলটার পিছন থেকে ফল কাটার ছুরিটা বের করে। ইমরান সাহেবের চোখ যেনো কপালে উঠে যায়। নিজের চক্ষুটাকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি।
বাচ্চাটা ছুরি বের করে, ফ্লোরে একটা গোলকাকার বৃত্ত একে দেয়। সে বৃত্তের মাঝে পুতুলটিকে শুয়ে দিয়ে ছুরিটা সোজা পুতুলের পেটে ঢুকিয়ে দেয়।ইমরান সাহেব আর দেখতে না পেরে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়।

সকালে সূর্যকিরণ এসে সোজা উনার চোখে পড়ে। চোখটা মেলে প্রথমে কিছু টের না পেলেও, ধীরে ধীরে গত রাতের ঘটনা মনে পড়ে যায়। নিজেকে ফ্লোরে আবিষ্কার করে তিনি এক লাফে উঠে দাঁড়ান। সোজা রুমে গিয়ে দেখে বাচ্চাটা শুয়ে আছে। রাতে যেভাবে শুইয়েছিল, ঠিক সেইভাবে শুয়ে আছে। ইমরান সাহেবের মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। উনার বাচ্চা যদি এখানে শুয়ে থাকে,তাহলে গত রাতে তিনি কি দেখেছিলো। ওটা স্বপ্ন ছিলো? নাকি ঘুমের মাঝে ফ্লোরে পড়ে ঘুমিয়েছে। এদিকে বাচ্চাটির দিকে একবার তাকায়,আরেকবার মাথা চুলকায়। এসব হচ্ছেটা কি উনার সাথে। সব কিছু মাথার উপর দিয়েই চলে যাচ্ছে। মাথা চুলকাতে চুলকাতে তিনি ড্রইং রুমে আসে। এবার উনার সব ঝাপসা চিন্তা ক্লিয়ার হয়ে যায়। ফ্লোরে আকা সে গোলকাকার বৃত্ত এখনো আছে। গলা দিয়ে একটা ডোক গিলে তিনি। তবে কি কাল রাতের ঘটনাটা সত্য? কিন্তু এতটুকু একটা বাচ্চা এসব কিভাবে করতে পারে। আবার নতুন রহস্যে হারায় তিনি।মনে মনে বলেন,’ মুন্নি যদি আজ থাকতো,তাহলে হয়তো কিছু একটা করতো”।

ভাবনার মাঝেই “সাহেব ” বলে কেও ডাক দেয়।ইমরান সাহেব তাকিয়ে দেখে, তার বাচ্চার দেখাশুনা যে করে,সে চলে এসেছে। মেয়েটির নাম প্রিয়া। ইমরানের বাচ্চাকে দেখাশুনা করার তাকে রাখা হয়েছে। দিনে সে ডিউটি করলেও,রাতে চলে যায়। ইমরান সাহেব প্রিয়াকে ডাক দিয়ে কাছে আনলেন।এরপর ধীর কন্ঠে বললেন,
– আচ্ছা প্রিয়া বলো তো? ড্রয়াকে কি তুমি কখনো অদ্ভুত কিছু করতে দেখেছো? সত্য বলবা ( বলা হয়নি,বাচ্চাটির নাম ড্রয়া।ওর জন্মের ৫ দিন পর এক সাধু তাদের বাড়ি আসেন।এবং তিনি এই নাম দিতে বলেন। ইমরান সাহেব আবার এসবে খুব বিশ্বাসী। তাই তিনি ওর নাম ড্রয়া রেখেছে।তবে এর আরেকটা বড় কারণ আছে,সাধু বলেছিলো” ওর নাম ড্রয়া রাখলে মুন্নির আত্মা শান্তি পাবে”।)
– না সাহেব,ড্রয়া ভাইজানরে তেমন কিচ্চু করতে দেহিনাই। কেন,কিছু হইছে নাকি।
– না,তুমি বলো? মনে করার চেষ্টা করো? দেখো মনে পড়বে।
– আপনি কি কইতাছেন সাহেব।এ টুকু একটা বাচ্চা পোলা কিয়া করবো।এহন সরেন,ড্রয়ারে খাওয়াইতে হইবো।
– মানে?
– আরে সাহেব, সুজি খাওয়ামু।
– ঠিক আছে,আমি গেলাম,তুমি খেয়াল রেখো।আর কিছু হলে আমাকে জানাবা।
– ঠিক আছে জানামুনি।

ইমরান সাহেব ফ্রেস হয়ে চলে যায় অফিসে।কিন্তু প্রিয়া যতই সন্ধি করুক,এর কোনো ফন্ধি ইমরান সাহেব মানেনি। প্রিয়া কথা বলার সময় চোখে ভয়ের চাপ দেখা গেছে। এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলো সে।যেনো কেও তাকে হুমকির ভিতর রেখেছে।তবে কিছু তো হয়েছেই।
বাড়িতে আজ তাড়াতাড়ি ফেরে ইমরান সাহেব। তবে তেমন কিছু দেখেনি। এভাবে প্রতিদিন তিনি কিছুনা কিছু লক্ষ করতে চান,তবে কোনো কিছুই চোখে পড়েনা। ধীরে ধীরে কেটে যায় আরো ৫ বছর।

ড্রয়া এখন বড় হয়েছে। প্রিয়া এখন এক হিসেবে সে বাড়িতেই থাকে। একদিন প্রিয়া বাড়িতে না আসলে,ড্রয়া পাগল হয়ে যায়। তাই ইমরান সাহেব প্রিয়াকে টাকার সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে রেখে দেয় বাড়িতে। শুধু সাপ্তাহিক পর পর প্রিয়া একবার বাড়িতে যায়। সেদিন তো আসতে দেরি হয়েছে বলে ড্রয়া নিজেই গিয়ে প্রিয়াকে নিয়ে আসে। ইমরান সাহেব ভাবেন,হয়তো মায়ের আদর প্রিয়ার থেকে পেয়ে,ড্রয়া প্রিয়াকে এত পছন্দ করে। এ ভেবে মুচকি হাসেন তিনি। তবে এখন ড্রয়ার ৭ বছর। খানিকটা বড় হয়েই গেলো।ছোট বেলায় এক অদ্ভুত ঘটনা দেখলেও,এখন আর ইমরান সাহেব কিছুই দেখেনি। বলতে গেলে,তিনি সে ঘটনা প্রায় ভুলেই গেছেন। কিন্তু আবার এমন কিছু হবে,ইমরান সাহেব ভাবেনি।

অফিস থেকে ফেরার সময় তিনি দেখলেন, বিশাল বড় একটা কুকুর রাস্তার পাশে পচা কিছু খাচ্ছে। কুকুরটার উচ্চতা একটা মানুষের সমান।ইমরান সাহেব গাড়িয়ে থামিয়ে দেখছেন কি হচ্ছে। গাড়ির লাইটের আলো কুকুরটার চোখে পড়তেই,সে এক দৌড় দেয়। তবে অবাক করার বিষয়,কুকুরটির গলায় একটা লকেট আছে,যেটা ওর ছেলে ড্রয়ার লকেট। ইমরান সাহেবও সে কুকুরের পিছু নিতে লাগলো। কুকুরটি দৌড়ে গিয়ে সোজা ইমরান সাহেবের দেওয়াল টপকে যায়।ইমরান সাহেব ভয় পেয়ে যায় খুব, গাড়িটা বাসার সামনে রেখে সোজা কলিংবেল বাজায়। প্রিয়া দরজা খুলতেই ইমরান সাহেব বলেন,” ড্রয়া কোথায়”। প্রশ্ন শুনে প্রিয়া চোখ দুটি কানাকানি করতে লাগলো। ইমরান সাহেব আর না দাঁড়িয়ে সোজা ড্রয়ার রুমে যায়। গিয়ে দেখে ড্রয়া তার বিছানায় ঘুমাচ্ছে। ইমরান সাহেব ড্রয়াকে দেখে উল্টো নিজের রুমে আসে। দরজাটা বন্ধ করে, জামা খোলে খালি গায়ে,সোজা ওয়াশরুমে চলে যান।উপরে ঝরনা চালু করে দেওয়ালে দুই হাত রাখেন। চোখটা বন্ধ করে চিন্তায় ঢুবে যায়। ড্রয়া আসলে সাধারণ কেও না। কারণ তিনি এই মাত্র আসার সময় ড্রয়ার রুমের জানালায় রক্ত দেখে এসেছেন। নিজের ছেলে এত বড় একটা বিপদ সংকেত হবে,ভাবেনি তিনি। ফ্রেশ হয়ে রুমে আসেন। খাওয়ার সময়ে খাবার না খেয়ে প্রিয়াকে বলল, চলো,কাজ আছে।
প্রিয়া কথাটা শুনে ভয়ে পেয়ে যায়। তবে কিছু বলার আগেই,ইমরান সাহেব প্রিয়ার হাত ধরে সোজা গাড়িতে তুলে। তুপান গতিতে গাড়ি চালিয়ে চলে আসে একটা নদীর পাড়ে। আবার প্রিয়ার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামায়। এরপর ইমরান সাহেব ভয়ংকর গর্জন ছেড়ে বললেন,
– এত সব কিছু লুকিয়েছিস কেন তুই? বল..?
– সাহেব আমি কিচ্চু করিনাই,আমারে মাফ কইরা দেন।
– আর একটা মিথ্যা বললে তোকে পানিতে ফেলে মেরে ফেলবো।বল প্রথম থেকে এ অব্দি।
– কইতাছি,তবে এক শর্ত আছে।আমারে দেশের বাহিরে পাঠাইয়া দেওয়া লাগবে।কাল সকালে।
– ওকে,বল।
– ড্রয়া ভাইজান কোনো মানুষ না সাহেব। উনি একজন শয়তান। হের অনেক শক্তি। এ পৃথিবীতে নাকি হে রাজত্ব কইরা বেড়াইবো। আমি এগুলা প্রথম থেইকাই জানতাম।
– আমাকে কেনো বলিস নি
– কেমনে কইতাম সাহেব।ড্রয়া ভাইজান ছোট বেলা থেইকা কথা কইতে পারে। যহন ভাইজানের মাত্র ৩ মাস চলে,তহন থেইকা কথা কইতে পারে। তবে ভাইজান দুইরকম কথা কয়,আপনার লগে বাচ্চাগো কন্ঠে,আর একা থাকলে বুইড়া দানবের মতো কথা কয়। আমারে তো ছোট্ট থাকতেই কইছে আমি যেনো কাওরে না বলি।কইলেই আমারে মাইরা ফালাইবো।
– আর?
– আমি আর কিছু জানিনা সাহেব। তবে আরেক্ষান কথা,ড্রয়া সাহেব রুমে কার লগে যেনো কথা কয়। মনে হয় ৫-৬ জন মিইল্লা কথা কইতাছে।
– তুই দেখেছিস কখনো?
– না সাহেব,আমি সামনে গেলেও কাওরে দেখিনা।
-ওকে,সোজা তোর বাড়িতে চলে যা।সকালে তোকে লন্ডন পাঠিয়ে দিবো।

বলেই ইমরান সাহেব বাসায় চলে আসে। ড্রয়া নিজের রুমেই ঘুমাচ্ছে। ইমরান সাহেব টেবিলে বসে ডায়েরীটা খোলেন। মুন্নির কথা আজ যেনো খুব মনে পড়ছে উনার। তাই মুন্নি থেকে শুরু করে A-Z সব ঘটনা ডায়েরীতে লিখেন সারারাত। ভোর সকালে ফোন আসে,প্রিয়া মারা গেছে।সেটাও নোট করেছে ইমরান সাহেব।

– তারপর? তারপর কি হলো..?
– আর তো কিছু লেখা নেই।
– আরে ধুরর,এই ড্রয়াকে মারার কোনো উপায় কি নেই?
– না। ড্রয়াকে মারার জন্য কোনো কারণ না, তাকে লাগবে,যার জন্মই হবে ড্রয়াকে শেষ করার জন্য।

এতক্ষন কবিরাজ মহসিন মোল্লা আর সাকিল ইমরান সাহেবের লেখা ডায়েরীটা পড়েছে। ডায়েরীটা ৯ বছর আগের ডায়েরী। বর্তমানে ড্রয়া নামের একটা শয়তান পৃথিবী শেষ করে দিচ্ছে। প্রতিদিন কয়েকশো কুমারী মেয়ে ও যুবক ছেলেকে নিয়ে সে বলি দেয়। সে নাকি ওমর হবে। ড্রয়ার অত্যাচারিতের স্বীকার হচ্ছে দেশের প্রতিটা মানুষ। সেদিন ড্রয়া নিজেই তার বাবাকে মেরে দেয়। কিন্তু আসলেই কি ড্রয়া ইমরানের সন্তান? নাকি অন্য..?
রহস্য..!!
কবিরাজ মহসিন মোল্লা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলেন আকাশটা মেঘ ছাড়া গর্জনরত হচ্ছে। শীতল বাতাস ছুয়ে যাচ্ছে দেহ। সাকিল এর কারণ জানতে চাওয়াতে,মহসিন মোল্লা বলেন,
– সে আসছে।হা হা হা,হ্যা সাকিল,সে আসছে। যে বিনাশ করবে অশুভ শক্তিকে। সে আসছে কারো গর্ভে।কোনো মায়ের গর্ভ থেকে পা রাখতে চলেছে এ পৃথিবীতে।
– কিন্তু সে কয়দিন পর শেষ করবে ড্রয়াকে।
(বড় বড় চোখ করেন মহসিন মোল্লা,সাকিলের দিকে তাকিয়ে বললেন)
– সে এসে গেছে, সে যুবক হওয়া অব্দি আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। ততদিন নিজেদের বাচিয়ে রাখতে হবেই। শুভ হোক তার আগমন..