“নুসরাত পুরো ঘরময় পায়চারী করছে। তাতে কাজ হচ্ছে না দেখে বেলকনিময় হাটা শুরু করলো। বিশাল বেলকনি। পুরনো বাড়ি,তবে অতি যত্নে আজো ঝকঝকে।.
নুশরাতের দুশ্চিন্তার কারন একটি চিঠি। যার উপর ঠিকানবিহীন শুধু একটি নাম ” অভিমানী রাজকন্যা “.
আর চিঠির মধ্য শুধু শুকনো কিছু বিভিন্ন রঙের গোলাপের পাপড়ি।”অভিমানী রাজকণ্যা” নুশরাতের ফেসবুক আইডি।।যা অনেক আগে সে ডিএকটিভ করে রেখেছে।।ভার্চুয়াল ভালোলাগে না তার তাই।তবে সমস্যা এখানেই শেষ হলোনা। প্রতিদিন কেউ গোলাপগুচ্ছ দরজায় রেখে যেতে শুরু করলো। বিভিন্ন রঙের গোলাপ।তাও খুব ভোরে। নুশরাতে সকালে হাটতে যাওয়ার জন্য বের হওয়ার সময় পেতো।যারপরনাই অবাকতো নুশরাত তার জন্মদিনে হলো।ঠিক রাত ১২ টায় জানালায় কিছু একটার শব্দ হলে নুশনাত দৌড়ে সেখানে যায়। সজাগ ছিলো। জানতো একটু পর সবাই ফোন করে করে কান ঝালা পালা করে উইস করবে। সেই অপেক্ষায় যেনো ছিলো নুশরাত।
জানালার কাছে গিয়ে দেখলো রাস্তার ওপাশে বকুল তলায় কেউ দাড়িয়ে আছে। একটি ছেলে।নুশরাত কিছু না ভেবে দৌড়ে নিচে গেলো আর দরজা খুলে বের হতেই নিজেকে সামলে নিলো কিছু একটার উপর পা দিতে যাচ্ছিলো।দেখলো দুটো গিফট বক্স আর অনেকগুলো গোলাপ।।অনেক রঙের গোলাপ।তবে বকুলতলা ফাকা। কেউ নাই ।ঘরে যেয়ে অনেকসময় কিছু একটা ভেবে গিফট বক্স খুললো।একটাতে অনেক কিউট একটি কেক।।আরেকটাতে একটি শোপিস।
নুশরাত ভাবলো কেনো বিভিন্ন রঙের গোলাপ দেয় তাকে কেউ?ওর আর বুঝতে বাকি থাকলো না কে দিচ্ছে কেনো দিচ্ছে ।খুব সকালে উঠে নুশরাত হাটতে বের হোলো। তবে আজ উল্টা পথে।পাহাড়িয়া পথ ধরে উপরে উঠতে লাগলো। পাহাড়ের উপরে অভিজাত পরিবাররা থাকে। একটা বাংলোর সামনে দাড়ালো সে। বাংলোটা নানা প্রকার গোলাপে ভরা। একসময় নিয়োমিতো যাওয়া আসা ছিলো এ বাড়িতে তার। এটা নুশরাতের বাবার বন্ধুর বাড়ি ।দীর্ঘকাল বিদেশ থাকার কারনে ভুলে গেছে বাড়িটি আর তার একমাত্র খেলার সাথী নোমানের এর কথা।নোমান সবদিন ফুল পছন্দ করে। প্রতিদিন স্কুলে নুশরাতের জন্য বিভিন্ন রঙের ফুল নিয়ে যেতো।একেকটা রঙের ফুল একেকটা প্রতিক বহন করে। হলুদ গোলাপ বন্ধুত্বের আর লাল গোলাপ ভালোবাসার প্রতীক।
নুশরাত গেট ঠেলে ভিতরে গেলো। বাড়িতে নোমান ছাড়া কেউ নাই। রাতে বাবার থেকে সব জেনেছে নুশরাত । গ্রাম্য হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা দিচ্ছে বর্তমানে নোমান ।বাংলোতে ঢুকছে আর চোখ দুটো জুগিয়ে যাচ্ছে নুশরাতের। অনেক প্রকার পাখির আবাস এখানে।সোজা নোমানের রুমে ঢুকে গেলো সে। রাতদুপুর পর্যন্ত নুশরাতের বাড়ির সামনে ছিলো তাই এখনো ঘুম।নুশরাত পানি ঢেলে দিলো ওর গায়ে। লাফ দিয়ে উঠলো নোমান । নুশরাতকে সামনে দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠলো সে। নুশরাত নকল রাগের ভান করে কঠিন চোখে তাকিয়ে থাকলো ওর দিকে।নুশরাত : কিরে নোমান কি শুরু করছিস তুই?নোমান বুঝলো সব বুঝে ফেলছে নুশরাত। তাই শুধু মিন মিন করে বললোনোমান: সরি দোস্ত।নুশরাত: ঐ শোন গাধা কাল থেকে যদি গোলাপ দিস তোর খবর আছে।কথাগুলো বলে নুশরাত চলে গেলো।পরদিন ভোরে নোমান ঠিকই গেলো গোলাপ দিতে। যখনি রাখবে তখনি দরজা খুলে নুশরাত বেরিয়ে এলো। ফুল হাতে নিয়েই দাড়িয়ে থাকলো নোমাননুশরাত: ঐ তুই প্রতিদিন ফুল দিস কেনো? আজ যদি ন বলিস মেরে ফেলবো তোকে।কথাটা বলে নুশরাত একটা ছুরি বের করলো।
ও জানে নোমান ভিতু টাইপের।নোমান : ভালোবাসি তোকে।নুশরাতঃ- কি বললি?নোমান- আমি ভালবাসি তোকে।নুশরাত: আগে বলিসনি যে?নোমানঃ ভয়ে বলতে পারেনি।নুশরাতঃ- এখন সাহস পেলি কি করে?নোমান: অনেক কষ্টে তোর ফেসবুক আইডি খুজে বের করি। বাট তুইতো রিপ্লাই দেসনাই। পরে ডিএকটিভ করে রাখছিস।
পরে জানতে পারি তুই দেশে। আর তারপর থেকে দুর থেকে দেখি। কাছে আসতে সাহস পাইনি। তাই দূরে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।এক দমে সব কথা বলে দীর্ঘশ্বাস নিলো নোমান ।নুশরাত : ত বাগানে লাল গোলাপ কম নাকি?নোমান: কেনো?নুশরাত: লাভারকে লাল গোলাপ দিতে হয় গাধা। কাল থেকে শুধু লাল গোলাপ আনবি। বুঝলি?নোমান: আচ্ছা।ওদের বিয়ে আগে থেকে ঠিক হয়ে ছিলো। হয়েও গেলো।
ওদের পড়াশুনার শেষ হওয়ার জন্য এতো দিন অপেক্ষা ছিল।তাদের ভালবাসা টুকু ফিরে পেলো। ফিরে পেলো সেই ছোট বেলার খেলার সাথে কেও।
এখনো নোমান নুশরাতের ঘুম ভাঙার আগে লাল গোলাপ এনে পাশে রেখে দেয়। মাঝে মাঝে বেনামি চিঠি রেখে দেয়।
লেখকঃ- Khairozzaman Akash