“রাফিদ সাহেব আপনি আমার স্ত্রীকে বিয়ে করবেন?”,
অফিসের বসের কাছ থেকে এমন কথা মোটেও আশা করেনি রাফিদ। চায়ের কাপটা হাত থেকে পড়ে গেলো ফ্লোরে। আর সাথে সাথে চুরমার হয়েগেলো। “নিজের স্ত্রীকে কেও অন্যকারো সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা কিভাবে বলতে পারে! এমন নয়তো আমার আর ওনার স্ত্রীর সব কথা উনি জেনে গেছেন!” রাফিদ নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,,- স্যার আপনি এটা কি বলছেন? আপনার স্ত্রীকে আমি কেন বিয়ে করবো!,আকাশ নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে রাফিদের পায়ের কাছে আচমকা বসে তার পা ধরে বলল,,
– আমাকে বলুন রাফিদ সাহেব, আপনি আমার স্ত্রীকে বিয়ে করবেন?,- স্যার আপনার কথার আমি কোনোকিছুই বুঝতে পারছিনা! কেও নিজের স্ত্রীকে কেন অন্যকারো সাথে বিয়ে দিতে চাইবে!,- অনেক কারণ থাকবে পারে রাফিদ সাহেব। আমি জানি আপনি এখনো বিয়ে করেননি সে জন্যই আপনাকে বলছি। আমার এই কথাটা ফেলে দিয়েন না প্লিজ। আমি আপনার বস হিসেবে না একজন বন্ধু হিসেবে রিকুয়েষ্ট করছি।,
– দেখুন স্যার, বন্ধু কোনোদিন বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারেনা। ,
– কেন পারেনা রাফিদ সাহেব। বন্ধু বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে করে এমন ঘটনা তো অহরহ হচ্ছে।,-সে ক্ষেত্রে এক বন্ধুর মৃত্যুতে হয়তো তার স্ত্রীকে বিয়ে করে আরেক বন্ধু।,আকাশ নিজের চেয়ার গিয়ে বসলো। পকেট থেকে সিগারেট বের করেও আগুন লাগালো না। টেবিলের উপর রেখে বলল,,- তাহলে আমার মৃত্যুর পর ওকে বিয়ে করবেন তো?,রাফিদ চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো,,
– স্যার আপনি এসব কি বলছেন? আমাকে সবকিছু খুলে না বললে কিছুই বুঝবো না তো! তাছাড়া আমি এই প্রথম নিজেকে নিয়ে খুব হতাশ ফিল করছি।,
– আচ্ছা শুনুন……………..,,১৫ মিনিট পর রাফিদ আকাশের কেবিন থেকে বের হলো। ফুল পাওয়ারে এসি চালু থাকা সত্ত্বেও গায়ের শার্টটা ভিজে একাকার। যেন মনে হচ্ছে কেও রাফিদের সারা গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছে।,নিজের জায়গায় এসে বসতেই পাশ থেকে রবিউল ভাই বলল,,
– কি ব্যাপার রাফিদ তুমি এতো ঘামছো কেন?,রাফিদ স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারছেনা। বহুদিন পর মনের মধ্যে অন্যরকম একটা সুখ আর একটা দ্বিধা মিশ্রণ চলছে। ভালোবাসার মানুষকে এবার নিজের করে পাবে রাফিদ। আজকে আর অফিস করতে মন বলছেনা। এমনিতেও আকাশ স্যার দুইদিনের ছুটি দিয়েছেন ভাবার জন্য। তবে যায় ভাবা হোকনা কেন উত্তর হ্যা হতেই হবে। পারলে তো রাফিদ এখনই হ্যা বলে দিতো কিন্তু ওইযে কথা আছে না, সবখানে একটু ভদ্রতা দেখাতে হয়। ,রাফিদ রবিউল ভাইকে কোনোরকমে কাটিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। অন্যদিন বাড়িতে ফিরতে সন্ধ্যা বা রাত হয়ে যায়। প্রাকৃতিক আলো চলে যায়। আজকে পৃথিবীটাই যেন অন্যরকম লাগছে। হয়তো ভালোবাসারটা আবার ফিরে পাবে সেজন্য।,,বিকাল ৪টা,আজকে আর অফিসে থাকতে ইচ্ছা করছেনা আকাশের। অনেক চিন্তার অবশান ঘটেছে আকাশের। কাজলকে বিয়েটা দিতে পারলেই সব দ্বায়িত্ব শেষ আকাশের। কিন্তু বুকের এই চিনচিন ব্যাথাটা কে দেখবে। কার সাথে বলবে তার মনের কথা! কিভাবে থাকবে সে কাজলকে ছাড়া! ,অফিস থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে গেলো আকাশ। গাড়ি পার্কিং করে কলিং বেল চাপ দিতেই আকাশের মা রোজিনা চৌধুরী দরজা খুলে দেয়। ,
– মা তুমি দরজা খুলে দিলে যে! কাজের লোক কেও নেই? ,- হ্যা আছে তো। রহিমা রান্না করছে আর রতন ছাদের ফুলগুলোই পানি দিচ্ছে। ,- তাহলে তুমি কষ্ট করে দরজা খুলতে কেনো এলে? কাজল তো আসতে পারতো!,
– তোর বউ এসে দরজা খুলে দেবে? বাহ বাহ! খুব ভালো কথা শুনালি যে!,মায়ের কথা শুনে আকাশের মাথাটা নিচু হয়ে যায়। ইদানীং কাজল যেন একেবারে অন্যমনস্ক হয়ে গেছে। ঠিক মত খায়না ঠিক মত ঘুমায় না। এমনকি কারো কথাও যেন ঠিক মত শুনতে পায়না।,আকাশ জানে মা এখন কাজলকে নিয়ে একটা অভিযোগ দেবে। ঠিক তাই হলো। আকাশের মা কান্নার ভান করে বলল,,- দেখনা বাবা কিছুক্ষণ আগে কাজলে বললাম আমাকে একগ্লাস পানি দাও দুপুরের ওষুধগুলো খাবো। সে বলে কি জানিস?,আকাশ কোনো কথা না বলে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো মায়ের দিকে। রোজিনা চৌধুরী বলল,,- ও বলল, পানি নিজে নিয়ে খান,আমি এখন নিচে নামতে পারবোনা।,এমন অভিযোগ আকাশের কাছে নতুন না। প্রতিদিন বাড়িতে এসে প্রথমেই মায়ের কাছে বউয়ের বদনাম শুনতেই হয় আকাশকে। আকাশ মাকে বলল,,
– আমি ঘরে যাচ্ছি মা। ,এই বলে আকাশ উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। রোজিনা বেগম আকাশকে বলল,,- তুই কেমন সন্তান রে বাবা মা বারবার তার কষ্টের কথা তোকে বলে আর তুই শুধু বলিস মা আমি ঘরে গেলাম।,আকাশ মুচকি হাসি দিয়ে বলল,,- তোমার চাওয়া খুব তাড়াতাড়ি পূর্ণ হবে মা। কিছুদিন অপেক্ষা করো।,রোজিনা চৌধুরী নিজের চোখে কষ্ট করে জমানো পানি মুছে একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো।,,আকাশ ঘরে গিয়ে দেখলো কাজল সেখানে নেই। বারান্দায় চোখ পড়তেই দেখলো কারো শাড়ির কালো আচল উড়ছে। ধীর পায়ে বারান্দায় গেলো আকাশ। উদাস মনে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে আছে কাজল। আকাশের বড্ড ইচ্ছা করছে কাজলের ঘাড়ে নিজের থুতনি রেখে, চার হাত একজায়গায় করে। দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকতে কিন্তু নিয়তি বড়ই অদ্ভুত আজকাল কাজলে ছুয়ে দিতে ইচ্ছা কর করলেও কাজলের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে আকাশ। ,কাজল হঠাৎ ঘরেই থমকে গেলো। আকাশ একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশের চোখের দিকে তাকাতে পারছেনা। যেন এক সমুদ্র ভালোবাসা ওই চোখে। হয়তো চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলেই নিজেই হারিয়ে যাবে। ইদানীং আকাশের ইগনোর করাটা খুব যন্ত্রণা দেয় কাজলের।,- আকাশ!! ,কাজলের কথা যেন আকাশের কানে পৌছায়নি। সে তো ভালোবাসা তৃষ্ণা মিটিয়ে চলছে তার মায়াবতীকে দেখে। ,কাজল আবার ডাক দিলো,,- আকাশ!! ,এবার আকাশ মায়াবতীর মায়াময় চেহারা দেখা বাদ দিয়ে নিজের চেহারাটা রুক্ষ করে বলল,,- আজকাল মাকে খাবার পানিও দেওয়া হচ্ছেনা শুনছি?,- আকাশ আমার কথা শোনো। ,
– শাট আফ। তোমাকে বিয়ে করে আমি আমার মাকে অসুখী দেখি। এর কারণ টা তুমি বোঝোনা?,
– আমি সত্যিই কিছু বুঝিনা আকাশ। আমি তো সারাক্ষণ মায়ের সাথে মিশে থাকতে চাই কিন্তু তার কাছে গেলেই বলে তুমি তোমার ঘরে যাও। নিজের স্বামীলে ভালোবাসো, আমি কে তোমার! এমন কথা বলে। আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেননা।,
– চুপ করো তুমি। তোমার এসব মিথ্যা শুনলে তোমার প্রতি ঘৃণা জন্মায় আমার।,আকাশ টাওয়েল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। কাজল ফ্লোরে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে থাকে। সে কিছুই বুঝতে পারেনা আকাশ কেন এমন করে। কোনো কথা বলতে গেলেও থামিয়ে দেয়। এভাবে কি সংসার করা যায়!,
চলবে
লেখনীতেঃ রাফিজা আখতার সাথী