আপু শুনলাম আপনি বিয়ের আগেই গর্ভবতী হয়েগেছেন।
কথাটা কি সত্য?”,
কথাটা শোনার সাথে সাথে মায়ের হাতটা চেপে ধরলাম। জানি এখন আমাকে অনেক কথায় শুনতে হবে। কারণ আমি যে বিয়ের আগেই গর্ভবতী হয়ে গেছি। কিন্তু আসল ঘটনা মানুষ জানার চেষ্টা করবেনা এটাও জানি। মায়ের হাত ধরে দ্রুত পায়ে হাটতে লাগলাম। মাও আমার হাত ধরে তাড়াতাড়ি বাসার দিকে হাটতে লাগলো। আবার পিছন থেকে ভেষে আসলো,,
– আন্টি আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেন আপনার মেয়ের চরিত্রের খবর লুকাতে পারবেন না। ছেলে গুলোর কথা শুনে মা দাঁড়িয়ে পড়লো। আমাকে এখানেই দাড়াতে বলে ছেলেগুলোর কাছে গেলো হয়তো। কিছুক্ষণ পর ‘ঠাস’ করে একটা শব্দ শুনতে পেলাম। বুঝতে বাকি রইলো না মা ওদের কারো গালে একটা কষিয়ে থাপ্পড় মেরেছে। তারপরই মায়ের কন্ঠ শুনতে পেলাম, -তোদের লজ্জা করেনা একটা অসহায় মেয়েকে এমন কথা বলতে! আমার এখন বড্ড জানতে ইচ্ছা করছে আসলেই তোদের জন্মের ঠিক আছে কিনা। সব কিছু জেনেও কেন তোরা বারবার আমার মেয়েটাকে অপদস্ত করি বল? ,কোনো একজন ছেলে মায়ের কথার জবাবে বলল,,
– আন্টি চড় মেরে আর কয়েকটা ডায়ালোগ দিলেই আপনাত মেয়েটা সাধু-সন্ন্যাসী হয়ে যাবেনা। এ মহল্লার সবাই জানে সব কিছু।,মা ওই জানোয়ার গুলোর সাথে কেন কথা বলছে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার গা গুলিয়ে উঠছে। মাকে আমি ডাক দিলাম, -মা তুমি ওদের সাথে কথা বলোনা প্লিজ। আমার গা গুলিয়ে আসছে। বাসায় চলো।আমার কথা শুনে ওদের মধ্যে কেও একজন বলল,- পেটে নতুন বাচ্চা গা তো গুলিয়ে উঠবেই। আমার ভাবিও প্রেগ্নেন্ট, সে তো যেখানে সেখানে বমি করে। তুমি করো আপু। হাহাহা।জানোয়ার গুলোর হাসির শব্দ কানে ঝনঝন করে বাজতে লাগলো। ইচ্ছা তো করছিলো অমানুষ গুলোর ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দিই। কিন্তু সব ইচ্ছার পুরনের চেষ্টা করতে নেই। এদেরই মত কয়েকজন জানোয়ারের কাছে আমার সর্বস্ব হারিয়েছি। একটা মেয়ের সবচেয়ে বড় অলংকার হলো তার সতীত্ব, সেটাই যে আমার নেই।,কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম মা আমার হাতটা ধরলো। তারপর আবার আমাকে নিয়ে বাসায় দিকে চলতে লাগলো। পিছন থেকে সেই অমানুষ গুলার কথা শুনে গেলাম।,
এই পৃথিবীর তিনজন পুরুষ কে এখন আমি বিশ্বাস করি, আমার ভাইয়া রোহান, বাবা রফিক আজম আর যার অপেক্ষায় আমার কালো দিনগুলো পাড়ি দিচ্ছি, আমার ভালোবাসা নাইম। আমি জানি আমার সাথে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কথা শুনলে সে আমাকে ফিরিয়ে দেবেনা। কারণ সে বারবার বলতো আমি ছাড়া তার কিছুই চায়না। এই বিশ্বাস বুকে নিয়েই আমি বেচে আছি।,একটু পিছনে যাওয়া যাক। আমি আর মা হাসপাতালে গেছিলাম। ডেয়লি চেকাপের জন্য। হ্যা এটা সত্য বাচ্চার বাবাকে আমি জানিনা। তবে ওর মা তো আমি। মা হয়ে সন্তানের হত্যা করার মত কাজ আমি করতে পারিনা এতে সমাজ যা বলে বলুক। আর আমার এই সিদ্ধান্তের পাশে আছে আমার ভাইয়া। ,বাড়িতে পৌঁছে মা আমাকে আমার ঘরে দিয়ে আসলো। আমি খাটে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর ভাইয়া আসলো। দরজায় দাঁড়িয়ে বলল,- আসতে পারি?- ভাইয়া! আমার ঘরে আসবি তাও আবার পারমিশন নিবি? আয়।ভাইয়া এসে আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।- আমি ভাই হয়েও বনেএ বিপদে ঢাল হয়ে দাড়াতে পারিনি রে। যন্ত্রণাবোধটা আমাকে তিলে তিলে কষ্ট দেয় রে বোন।
– ভাইয়া এসব কেন বলছিস? আমার নিয়তিকে তো আমি অস্বীকার করতে পারিনা। একদিন দেখিস ঠিক আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে ঘুরতে পাহাড়ের চুড়াই উঠে পড়বে।- আমি জানি আমার বোনটা একদিন অনেক বড় হবে কারণ তোর সাথে যে নাইমের মত একজন ছেলে রয়েছে। ছেলেটা দেশে আসলেই তোকে তার হাতে তুলে দিতে চাই আমি।,হঠাৎ টেবিলের উপর আমার ফোনটা বেজে উঠল। ভাইয়া ফোনটা হাতে নিয়ে বলল,- নাইম কল দিয়েছে।- এখন কল কেটে দে ভাইয়া। আমি পরে কথা বলবো।ভাইয়া ফোন আমার হাতে দিয়ে বলল,- কথা বল আমি চলে যাচ্ছি। ছেলেটা কল দিয়েছে তো কোনো দরকারে তাহলে কল কাটবো কেন!ভাইয়া কল রিসিভ করে ফোনটা আমার হাতে দিয়ে চলে গেলো। ঘরের বাইরে গিয়ে দরজাটা আটকে দিলো, আমি শব্দ শুনে বুঝে নিলাম।ফোনটা কানে ধরতেই অপাশ থেকে বলল,- এতো দেরি কেন? কি করছিলে?-ঘরে ভাইয়া এসেছিলো তাই একটু দেরি হলো।,- শোনো আমি আগামী মাসের ১০ তারিখ দেশে ফিরছি। তুমি যেন এটা আবার কাওকে বলো না! সবাইকে চমকে দিতে চাই আমি।,- কাকেই বা বলবো আমি। সপ্তাহে একদিন আমি বাসা থেকে বের হই তাও আবার মায়ের সাথে। আমার মোবাইল থেকে কল দিতে হলেও কারো সাহায্য লাগে। কথাগুলো শুনে নাইমের মনটা খারাপ হয়ে গেলো,
-মায়া, তোমাকে কতবার বলবো এসব কথা বলবেনা। একটা মানুষ চোখে না দেখলেই কি অকর্মা হয়ে যায়। তাছাড়া আমি বাইরের দেশে আছি কিসের জন্য? তোমাকে নিয়ে সুখে থাকার জন্যই তো। তুমি নামক মানুষটা হলেই তো যথেষ্ট। এসব চোখ দিয়ে আমি কি করবো।- সত্যি নাইম, তোমার কথা যতই শুনি আমি ততই অবাক হয়ে যাই। একটা মানুষ এতোটাও ভালো হতে পারে!
– একজন মানুষ হয়ে আরেকজনের কষ্ট না বুঝতে পারলে আমি কিসের মানুষ! আর যেখানে ভালবাসার মানুষটার কথা আসে সেখানে তো আরো ভিন্ন বিষয়। মায়া আর কথা বলছেনা। মানুষটার কথা শুনেই যেতে ইচ্ছা করছে। এতো ভালোবাসা কপালে সইবে তো!আরো কিছু কথা বলে মায়া ফোন রেখে দিয়ে মায়ের কাছে গেলো।ওদিকে নাইম ফোন রাখতেই তার ফোনে অন্য একটা কল এলো। কল রিসিভ করতেই ঝাঝালো কন্ঠে কেও বলল,
– এতোক্ষণ নিশ্চয় ওই ধর্ষিতা, অন্ধ মেয়েটার সাথে কথা বলছিলে!নাইম শান্ত গলায় বলল,- তুমি সব কথা কেন এতো উত্তেজিত হয়ে যাও তিন্নি! আমার সব কথা না শুনেই মন্তব্য করাটা তোমার গেলো না।
– সব কথা কি শুনবো হ্যা। ভালোই জানো তোমার সব কল রেকর্ড আমার কাছে চলে আসে। এখন যে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছিলে সেগুলো তো অস্বীকার করতে পারবেনা। নাইম অনেকটা রেগে বলল,- আরে বাবা আমি কি অস্বীকার করছি নাকি! একটা অসহায় মেয়েকে একটু মনের জোর বাড়িয়ে দিচ্ছি আরকি।- বেশি জোর বাড়িয়ো না তাহলে মাথায় চড়ে বসবে।- আমি নিলে তো বসবে নাকি!- তোমাকে ইদানীং অনেক সন্দেহ হয় নাইম। তুমি সত্যিই আমাকে ভালোবাসোতো?
– আমি আবার কখন বললাম তোমাকে ভালোবাসিনা?- সাফসাফ জবাব দাও। তুমি আমাকে ভালোবাসো নাকি ওই মায়া কে ভালোবাসো।নাইম বলল,- অফকোর্স আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। দেশে যাওয়ার পরই বুঝতে পারবে সব। ওখানে গিয়ে প্রথম কাজ হবে তোমাকে বিয়ে করা। তারপর মায়াকে বোঝানো।- ঠিক আছে রাখছি।এরপর তিন্নি ফোন রেখে দেয়। ২.অফিস শেষ করে আবির বাসায় ফিরছে। আজকে সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে। তার উপর এখন সিগ্নাল লাইটের খপ্পরে পড়েচগে। এক কথায় নাজেহাল একটা অবস্থা। হঠাৎ সামনের রাস্তা দিয়ে একটা রিকশা ক্রস করলো। কিন্তু তাতে বসে আছে আবিরের হবু বউ রিয়া। আর পাশের লোকটার সাথে এমনভাবে মিশে রয়েছে যেন মনে হচ্ছে তারা প্রেমিক প্রেমিকা। এমনকি ঢলাঢলিটাও কম হচ্ছে না। ,আবির ওদের পিছু নেওয়ার অপেক্ষায় আছে। সিগনাল লাইটটা গ্রিন হলে হয়।,
চলবে
লেখনীতেঃ রাফিজা আখতার সাথী