সময়টা ২০১৩।অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী আমি। ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে বেশ ঝামেলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। বান্ধবীদের মাঝে আমি ছিলাম সবচেয়ে চঞ্চল আর নরম প্রকৃতির মানুষ। নানা কারনে ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম। একা একা কান্নাকাটি করতাম, অন্ধকারে একা বসে থাকতাম। বান্ধবীদের অনেকেই মনে করত আমি হয়তো কিছু একটা করে ফেলব।
১৭ অগাষ্ট ২০১৩, হঠাৎ মোবাইলে একটা SMS, আমার খুব কাছের বান্ধবী সুইসাইড করে। অবাক করার বিষয় সুইসাইডের আগের দিনই সে আমাদের সাথে নাচ করেছে, গান করেছে, হাতে মেহেদী লাগিয়েছে। এবং আমাকে শান্তনাও দিয়েছে জীবন নিয়ে। সুইসাইডের আগের দিন কেউ এরকম হাসতে পারে, পজিটিভ থাকতে পারে আমার তা জানা ছিলনা।
তবে ওর সুইসাইড ছিল আমার জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট। কারন? কারন হলো, নিজ চোখে দেখেছি সবাই নিজ নিজ জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেখেছি আন্টি আংকেল কতটা একা হয়ে পড়েছে তাদের একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে। বুঝতে পেরেছি সুইসাইড কখনই কোন কিছুর সমাধান হতে পারেনা।
তাই আমার জীবনের একটা মটো দাড় করে ফেলেছি তখন থেকে, সেটা হলো থেমে থাকা যাবেনা।
এমন না আমি অনেক সুখী মানুষ, আমিও কাঁদি, মাঝে মাঝে চিৎকার করেই কাঁদি, মাঝে মাঝে মনেও হয় জীবনের কোন মানে নেই, মাঝে মাঝে মনে হয় আমার থেকে ইউজলেস আর একটাও নেই। কিন্তু তারপরও ওইযে বললাম, নিজের সাথে নিজের ওয়াদা নিজের ক্ষতি করা যাবেনা। মন খারাপ হলে প্রচুর কান্না করি, মাঝে মাঝে কান্নাও করতে পারিনা, কিন্তু ঠিক ৩ দিন পর নিজেকে আবার দাড় করিয়ে নেই। কারন আমি বিশ্বাস করি, খারাপ সময়ের বিপরীত শব্দ ভালো সময়। বলতে পারেন এই বিশ্বাস আর সবকিছুর শেষ দেখার ইচ্ছাই আমাকে সাহস যোগায়।
আমার টেবিলের উপর ৬ মাস ধরে পড়ে আছে অর্ধেক পড়া একটা গল্প বই। প্রতিদিনই ভাবি আমি পড়ব কিন্তু পড়া হয়না। কিন্তু আবার ফেলেও দেইনা, কারণ আমি জানি সময় সুযোগ পেলে গল্প বইটা একদিন শেষ করব। আমার বিশ্বাস আমি গল্পের শেষটা জানব। এবং আমি জানি আমি শেষ করব।
জীবনটাও ঠিক এমন, সব কিছু মুহুর্তের মাঝে দেখা হয়ে যায়না, জানা হয়ে যায়না। সময় সুযোগের অপেক্ষা করতে হয়, গল্পের শেষ দেখতে হয়, গল্পের শেষ হয়তো হ্যাপি কিংবা স্যাড হবে, এই দুই শব্দের মাঝেই তো হবে, কিন্তু একটা রেজাল্ট তো জানা যাবে। ওখান থেকে নাহয় নতুন করে আবার শুরু করা যাবে।
আমি কাজে কখনও খারাপ করলে, মন খারাপ হলেও খুব বেশি বিচলিত হইনা। কারন আমি জানি এমন একটা দিন আসবে আমি পারব এবং আমাকে পারতেই হবে। সেটা শুধু কাজেই না জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে। চলার পথে অনেকেই অনেক কথা বলবে, কেউ উৎসাহিত করবে তো কেউ নিরুৎসাহিত। এই দুইটা শব্দের বাইরে তো আর কিছু কেউ করতে পারবে না তাইনা?
তাই কারো ক্ষতি না করে, নিজের ক্ষতি না করে, এই পৃথিবীতে নিজের সার্ভাইভাল গেইমে নিজেকে আসক্ত করে ফেলুন। কারন সার্ভাইভাল থেকে সুন্দর আর কিছুই হতে পারেনা। কিছুইনা।
আসুন আমরা সুইসাইড থেকে বিরত থাকি
লেখা – পারি