আজ আমার বিয়ে হয়েছে ২য় বারের মত। আমার প্রথম স্বামী রায়হান মারা গেছে আজ দুই বছর। এখন
আমাকে আমার দুই ননদ বাসরঘরে বসিয়ে দিয়ে গেছে। বাসর
ঘরটা গোলাপ ফুল,সাদা কি একটা ফুল
দিয়ে সাজানো নাম জানি না। আর সেই সকাল থেকে বসে
আছি তাই কোমর টা ব্যথা করছে। তাই একটু হাটি বলে খাট
থেকে নামলাম। তারপর গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে
দাঁড়ালাম। আয়নায় আজ আমাকে সুন্দরই লাগছে কিন্তু
প্রথমবারের মত না। সেই সময় মুখে একটা লজ্জা লজ্জা ভাব
ছিলো। রায়হানের সাথে ৩বছর প্রেম করে তারপর বাবা মায়ের
আর্শীবাদ নিয়েই বিয়ে করেছিলাম। সেই বাসর রাতে চোখে
লজ্জা ছিলো। কিন্তু সেদিন রায়হানের ভালোবাসার ই ছোয়ায়
সব ভুলে গেছি। রায়হানের কথা আজ আমার ২য় স্বামীর ঘরে
মনে পড়ছে হায় রে জীবন।
এমন সময় হঠাৎ কার যেন পায়ের শব্দ পেলাম। ছুটে খাটে উঠে
বসলাম। নতুন বউ যেহেতু এভাবে ত আর ঘোরাঘুরি করতে পারি
না। মা খুব অসুস্থ। বলতে গেলে মারাই যাবে এত অসুস্থ। কিন্তু
মারা যাবার আগে আমার খুশি দেখতে চায় সে। তাই বাবা
তাড়াতাড়ি আমার জন্য ছেলে খুঁজে বিয়ে দিলো তাও এক
সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে দিয়েছে।
শুনেছি ছেলের সাথে নাকি তার আগের বউয়ের ডিভোর্স
হয়েছে। (মানে ছেলের জন্যেও এটা দ্বিতীয় বিয়ে)
তাই আমি বিয়েতে এক্টু অমত করেছিলাম। চেয়েছিলাম যার
স্ত্রী মারা গেছে এমন কাউকে বিয়ে করতে সে হয়তো
হারানোর ব্যথা বুঝবে। তাহলে দুজন দুজনকে সান্তনা দিতে
পারতাম। এখন কাকে দিব?
সে হয়তো নিজ ইচ্ছাতে তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছে। সে
কি বুঝবে আমার কষ্ট। নাকি রাতে শুধু আমার শরীর খুঁজবে আর
দিনে কাজের মেয়ে। এসব কথা মাকেও বলেছিলাম। কিন্তু মা
তখন বললো।
—জামাই মানেই এগুলোরে মা। তোকে মানাইয়া নিতে হবে।
উত্তরে আমিও মাকে বললাম।
—মা রায়হান তো এমন ছিল না।
তারপর মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমাকে বললো।
—বেশী সুখ কপালে সই না’রে তোর তাই আল্লাহ নিয়ে গেলো
জামাইবাবাকে।
আমিও মায়ের কথা শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারতাম না।
তাই আর কথা বাড়ায় নি তাদের কথানুযায়ী রাজী হয়ে যাই।
আমাকে বাবা ছেলের ছবি দেখাতে চেয়েছিল কিন্তু আমিই
দেখি নি। অবশ্য ছেলে দেখাও করতে চেয়েছিল আমিই দেখা
করি নি। এমন কি ছেলের নাম পর্যন্ত শুনতে চাই নেই।
তখন বাবা শুধু বলেছিলো ছেলে নাকি খুব ভালো।আমাকে খুশী
রাখবে।
আমি বাবার এমন কথা বললেই তখন আমার ঘরে চলে যেতাম।
তারপর আমার লকেট টা খুলতাম। ওখানে রায়হানের ছবি আছে।
আজ বধুসাজে অনেক গহনা ই আছে কিন্তু আমার কাছে অমুল্য
সেই লকেট। কিন্তু ভয় লাগছিলো। যদি সে এই বাসরঘরের সব
গহনার সাথে সেটাও খুলে ফেলে।
আমি আমার মনকে রেডি করেছিলাম আমার দেহ নিয়ে যতই সে
খেলুক কিন্তু আমার এই মন শুধু রায়হানের। ভালোবাসাও শুধু
রায়হানের জন্য।
এসব চিন্তা নিয়ে যখন মাথা ঘোরপাক খাচ্ছিলো আমার তখন
কে যেন দরজা খুলে ভেতরে আসলো।
কে আর হবে আমার নতুন স্বামী। আমার খুব ভয় লাগছিলো। আজ
আমি আর রায়হানের থাকব না। তারপর সে আমাকে ডাক দিলো।
–মিরা……..
ডাক শুনে হঠাৎ আমি চমকে উঠলাম। কারন এটা আমার পরিচিত
কন্ঠ। কিন্তু কে সে?
তারপর সে আবার ডাক দিলো।
–মিরা বুচি.?
এবার আমি রীতিমত অবাক। কে ইনি?
এইভাবে তো আমাকে শুধু রায়হান ডাকতো। এখন আমার
রায়হানের কথা মনে আসছিলো খুব। চোখ আর ধরে রাখতে
পারলাম না। রায়হান বলে চিৎকার করে কান্না করতে লাগলাম।
তারপর সে এসে আমার কাধে হাত রাখলো। কিন্তু আমি ক্রমশ
কান্না করে যাচ্ছি।
তখন এক পর্যায়ে আমার মনে হল এক ফোটা পানি আমার কাধে
পড়লো। আমি কান্না থামালাম, তারপর
মাথা উঠিয়ে দেখলাম। ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কাব্য।
হ্যাঁ কাব্য……
ভার্সিটিতে আমি, রায়হান, আর কাব্য খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।
আমার আর রায়হানের সর্ম্পক হওয়ার পর ই ও ওর পরিবারের
সাথে বিদেশ চলে যায়। ওর জন্য আমি প্রচুর কেঁদেছিলাম। কারন
সে আমাকে কিছু না বলেই চলে গিয়েছিলো।
কিন্তু আজ এমন সময়ে ওর সাথে আবার দেখা যখন আমি তার ২য়
স্ত্রী। আমার চোখে জল দেখলে কাব্য আগেও আমার সাথে
কান্না করতো। আজো কান্না করছে। তারপর আমি ওকে দেখার
পর আমার কান্না থামালাম। আমি এ মুহুর্তে বুঝতেই পারছি না
কি করবো। পুরানো বন্ধুকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে খুশী হয়ে
তাকে জড়িয়ে ধরবো? না কি নতুন স্বামী হিসেবে ওকে সালাম
দিবো।
আমার জীবন যেন এক মোড়ে এসে থেমে গেছে। আমার একদম
স্তব্ধ হয়ে গেলাম। তারপর কাব্য আমার স্তব্ধটা বুঝতে পেরে।
চটজলদি ছুটল পানি আনতে আর ছুটতে গিয়ে পড়ে গেলো।
আর তা দেখে আমি সাথে সাথেই হেসে উঠলাম। আজ অনেকদিন
পর আমি হেসেছি রায়হান যাবার পর এই প্রথম আমার মুখ দিয়ে
হাসি ফুটলো।