রাতে দিয়া শুয়ে আছে, হুড়মুড় করে দিহান দিয়ার ঘরে ঢুকলো। আচমকা দিহান কে দেখে দিয়া চমকে ঊঠলো। টেবিল থেকে ওড়নাটা নিয়ে দেহে জড়িয়ে নিলো।
,
-দিদিদিহান ভাই। এতো রাতে এখানে ককেন এসেছো।
দিয়া ভয়ে কাপতে লাগলো। কারণ দিহান কে দেখে মনে হচ্ছে ও নিজের ভিতর নেয়।
,
-তোর কাছে আসলাম দিয়া। একটু ভালোবাসতে আসলাম। দিবি একটু ভালোবাসতে?
,
দিহান কথা বলার সময় মুখ দিয়ে উদ্ভট গন্ধ বের হচ্ছিলো। দিয়া যা বোঝার বুঝে গিয়েছে। দিহান মদ খেয়ে এসেছে।
,
-দিহান ভাই, আর কত ভিলেন গিরি করবা? সকালে সিগারেট খাওয়া নিয়ে, সন্ধ্যায় আমার সতিত্ব নিয়ে মজা করেছো। এখন আবার কি চায় তোমার?
,
-তোকে চাই। তোকে ভালোবাসতে চাই। আমার ভালোবাসার সমুদ্রে তোকে ডুবাতে চাই।
,
দিহানের কথা শুনে দিয়া কেপে উঠলো। দিহানের মতিগতি অন্যরকম লাগছে দিয়ার কাছে।
,
-দদিহান ভাই, ননিজেকে সামলাও। তুমি নিজের মধ্যে নেয়।
তুমি মদ খেয়েছো। প্লিজ এখান থেকে চলে যাও।
,
-আজকে তোকে ভালো না বেসে আমি যাবো না।
,
-দিহান ভাই, তুমি আমাকে ভালোবাসো না এটা আমি জানি। আর যদি ভালোবেসেও থাকতে তাহলেও চলে যাও আমার ঘর থেকে। আমার তোমাকে এই অবস্থায় দেখে খুব ভয় হচ্ছে। প্লিজ চলে যাও।
,
-আমাকে ভয় পাচ্ছিস কেন জান। আমিতো তোকে ভালোবাসি। ভালোবাসার মানুষকে কেও ভয় পায় নাকি?
,
-কিন্তু তুমি আজ। তোমার মধ্যে নেয় দিহান ভাই। দুইটা বছর ধরে তুমি তোমার সাইকোগিরি দেখিয়ে গেছো। আমি কিছু মনে করেনি। আজকে সকালের ঘটনাও ভুলে গেছি।সসন্ধ্যার ঘটনাটাও । কিন্তু এখন সত্যি আমার খুব ভয় হচ্ছে।
,
দিহান একপা দুপা করে দিয়ার দিকে এগিয়ে আসে। দিয়া পালাতে চেষ্টা করে কিন্তু দিহান ওকে ধরে ফেলে।
,
দিয়া নিজেকে দিহানের থেকে বাচানোর জন্য শেষ চেষ্টা করতে চিৎকার দিতে চায়। কিন্তু তার আগেই দিহানের ঠোঁট জোড়ে দিয়ার ঠোঁট জোড়াকে আটকে ধরে। দিয়া কোনো ভাবেই নিজেকে দিহানের থেকে আলাদা করতে পারে না।
,
কিছু সময় পর ক্লান্ত দিহান দিয়ার বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে।
দিয়া গায়ে চাদর জড়িয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়ে। সাওয়ার ছেড়ে দিয়ে সাওয়ারের নিচে বসে মুখ চেপে কাদতে থাকে।
,
দিয়ার ভালোবাসা আজকে হেরেগেছে সাইকো দিহানের কাছে।
,
সকালে,
দিহানের ঘুম ভেঙ্গে নিজেকে দিয়ার ঘরে দেখে খুব অবাক হয়। কিন্তু আসেপাশে দিয়াকে দেখে না। ওয়াসরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ পায়। বিছানা থেকে নেমে নিজের দিকে তাকিয়ে দিহান যেন আসমান থেকে পড়ে।
,
-ছিহ এটা আমি কিভাবে করতে পারলাম। ছিহ। নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে আমার। যাকে দুরে রাখতে গিয়ে নিজেকে সাইকো সাজিয়েছি আজ তার সাথেই আমি? ছিহ। মরে যেতে ইচ্ছা করছে আমার। আমি এই মুখ দেখাবো কি করে দিয়াকে।
,
নিজের প্রতি ঘৃণা নিয়ে ওই সকালেই দিহান নিজের বাড়িতে চলে গেলো।
,
হিয়া এসে দিয়ার ঘরে এসে দিয়াকে পেলো না। ওয়াসরুমে পানির শব্দ শুনে ভাবলো ওখানেই আছে। তাই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো হিয়া। ৫মিনিট, ১০ মিনিট করে ৪০ মিনিট পার হয়ে গেলো তবুও দিয়া ওয়াসরুম থেকে বের হলো না।এবার হিয়ার মনে সন্দেহ হতে লাগলো।তাই দিয়াকে ডাকতে লাগলো। দরজা ধাক্কা দেওয়ার পরও যখন দেখলো দিয়ার কোনো সাড়াশব্দ নেয়তখন সেজান আর ওর বাবাকে ডাক দিলো।
,
ওয়াসরুমের দরজা ভেঙ্গে। দেখলো দিয়া গায়ে বিছানার চাদর গায়ে জড়িয়ে সাওয়ারের নিচে পড়ে আছে। হিয়া দিয়া বলে চিৎকার করে ওঠে।।সবাই মিলে ধরাধরি করে দিয়াকে বেডে শুয়ায়ে দেয়।
বাবা আর সেজান বের হলে হিয়া দিয়াকে ড্রেস পরিয়ে দেয়।
,
কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার চলে আসে। চেকাপ করে বলে দিহার অবস্থা খুব খারাপ। সারারাত সাওয়ারের নিচে ছিলো হয়তো এখনি হাসপাতালে নিতে হবে। সবাই দিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে যায়।
,
সাতদিন পর দিয়া পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু মনের অসুস্থতা দুর করা সম্ভব না। দিহান যে মনের অসুখ লাগিয়ে দিগে চলে গেছে।
,
এই মধ্যে দিয়ার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা দিয়া হিয়াকে বলেছে।
,
,
একমাস পর,
দিয়া এই একমাস সবার কাছথেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। দিয়ার এমন অবস্থা দেখে হিয়াও যেতে পারে না। মা বেচে থাকলে হয়তো দিয়াকে মানসিকভাবে এতোটা ভেঙে পড়তে দিতো না।
,
হিয়ার সাথে রান্নার সাহায্য করছিলো দিয়া। হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায় দিয়া। কোনোরকমে দিয়াকে ঘর পর্যন্ত নিয়ে যায়। চোখে মুখে পানি দিতেই দিয়া মিটিমিটি চোখ করে তাকায়।
,
-কি রে দিয়া হঠাৎ তোর কি হলো?
,
দিয়া কিছু জবাব না দিয়ে দৌড়ে ওয়াসরুমের দিকে গিয়ে গড়গড় করে বমি করতে থাকে।
বমি করতে করতে দিয়া ক্লান্ত হয়ে যায়।
,
হিয়া-খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি।
,
-হ্যা, আপু। মনে হচ্ছে পেটের সব কিছু বের হয়ে আসবে।
,
হিয়া কিছুটা ভেবে দিয়াকে বললো,
-তোর কি এই মাসে মান্থলি মিস হয়েছে?
,
-হ্যা, কিন্তু কেন?
,
দাড়া একটু পর বুঝতে পারবি। এই বলে হিয়া নিজের ঘরে গিয়ে একটা প্যাকেট এনে দিয়াকে বলল,
-নে, নেটা দিয়ে টেস্ট কর।
,
-কি টেস্ট করবো।
,
হিয়া দিয়াকে বুঝিয়ে বললো প্রেগ্ন্যাসি টেস্ট করার কথা। দিয়া প্রথম নারাজ হলেও সেদিনের কথা মনে হতেই প্যাকেট টা হাতে নেয়। হিয়া ওয়াসরুমের বাইরে আসলে দিয়া দরজাটা আটকে দেয়।
,
কিছুক্ষণ পর দিয়া বের হয়ে বিষন্ন মুখে বলে,
,
-পজিটিভ দেখাচ্ছে।
,
-তাহলে চল। এখনো সময় আছে। এভর্সনটা করিয়ে আসি।
,
-না আপু। আমি এটা করতে পারবোনা। মানছি দিহান ভাই পৃৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ করেছে। তবে সন্তানটা তো আমারও আমি কোনো ভাবেই একে মেরে ফেলতে পারবোনা।
আত তাছাড়া দিহান ভাইকে তোমরা বলবা। ওতো ওই রাতেই বলেছিলো আমাকে ভালোবাসে।
,
-ও যেটা বলেছিলো সেটা তো নেশারঘোরে। সত্যিটা হলো ও তোকে কোনোদিন বিয়ে করবে না।
,
,
হিয়া দিয়াকে অনেক্ষণ বোঝানোর পর রাজি করাতে পারলো এভর্সন করাতে।
,
গাড়ি নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হলো দুইবোন আর সেজান।
,
মাঝরাস্তাই হিয়ার ফোনে ওর ফুফু অর্থাৎ দিহানের মা ফোন করলো।
,
– দিহানকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ডাক্তার বলেছে হাতে বেশি সময় নেয়। মা তোরা দয়া করে তাড়াতাড়ি চলে আয়।
,
ফোনটা রেখে হিয়া সেজানকে গাড়ি ঘুরিয়ে ফুফুর বলা হাসপাতালে রওনা হয়।
,
,
কেবিনের বাইরে থেকে দিয়া দিহানকে দেখে। একজনের বেশি কেও ঢুকতে পারবেনা তাই বাইরে আছে সবাই। ভিতরে আছে সেজান।
,
দিয়ার কাধে হিয়া হাত রাখে,
,
-দিহান হয়তো আর বাচবেনা।
,
-ও মরলে আমার কি?
,
-অনেক কিছু। তাহলে শোন ও মরলে তোর কি কি
,
“দুই বছর আগে তুই যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাস তখন ও আমাকে ফোন দিয়ে বলে,
-আপু আমার দিয়া তো চান্স পেয়েছে।এখন থেকে আমরা চুটিয়ে প্রেম করবো। আমি আমার মনের কথা ওকে বলে দেব। অনেক অপেক্ষা করেছি আর না। আজকেই তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছি।
,
আমাদের বাড়িতে আসার পথে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। সেদিন তো ওকে দেখতে তুইও গেছিলি। কিন্তু সবাইকে একটা জিনিস জানালেও তোকে জানানো হয়নি। সেটা হলো অর ব্রেইনটিউমার। যেটা অপারেশন করলে ওর মরার চান্স ৯০%।
তখন ও আমার সাথে একটা কথা বলেছিলো,
,
-আপু আমি অপারেশনটা করবো না। এমনিতেও তো মারা যাবো। তবে মারা যাওয়ার আগে দিয়ার মন থেকে আমার নামটা মুছে দিতে চাই। আমি নিজেকে সাইকো বানাবো ওর কাছে। এমন এমন ভিলেনি করবো যাতে করে আমার নামটা ওর মন থেকে চলে যায়।
,
সেদিন সিগারেট খাওয়া নিয়ে, তোর ভার্জিনিটি নিয়েও কথা বলেছিলো সেগুলোও আমাকে জানিয়েছিলো।
তার পর রাতে তোর সাথে যা হয়েছিলো সকালে যাওয়ার সময় আমাকে বলেগিয়েছিলো। আমি ওকে থাপ্পড় মারি কিন্তু ও আমার পা জড়িয়ে ধরে বলে,
,
-আপু আমি আমার জ্ঞান থাকতে আমার ভালোবাসাকে নষ্ট করবো তুমি ভাবলে কি করে। কালকে একটা কষ্টেই মদ খেয়েছিলাম যে আমার দিয়াকে কোনোদিন আমার বউ রূপে পাবো না। আমি যে এই দুনিয়ায় কয়দিনের অতিথি মাত্র। কিন্তু সকালে নিজেকে দেখে খুব ঘৃণা হচ্ছিলো আপু। আমি নিজেই আমার পবিত্র ভালোবাসাকে অপবিত্র করে ফেলেছি।
,
এই বলে দিহান আমাদের বাড়ি থেকে চলে আসে ঐদিন”
,
দিয়া হাটু গেড়ে বসে চিৎকার করে কাদতে থাকে আর নিজের চুল ছিড়তে থাকে। কেও ওর কান্না থামাতে পারে না।
,
কিছুক্ষণ পর দিয়াকে দিহানের কেবিনে পাঠানো হয়।
,
-কেন করলে দিহান ভাই? কেন? কেন নিজের মনের কথা বলোনি?
,
দিহানের কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তবুও কথা বলছে। প্রিয়তমার সাথে এটাই হয়তো শেষ কথা।
,
-বলে কি হতো। মরে তো যাবো। ভেবেছিলাম তোকে আমার প্রতি ঘৃণায় পরিপূর্ণ করে দেব কিন্তু উপর আল্লাহ হয়তো এটা চায়নি। তাই আজকে আপু তোকে সব কিছু বলে দিয়েছে।
,
-দিহান ভাই, তুমি বাবা হবে। তোমার সন্তান আমার গর্ভে।
,
-এভর্সনটা করিয়ে নিস।
,
– আজকে যেহেতু সব জেনেগেছি আর আর কোনো সংশয় নেয়। আমাদের বাচ্চা বড় হবে। বৈধতা অবৈধতার দেয়াল পার করে আমাদের মেয়েকে আমি বড় করবো। তবে মনে রেখো ম এর বিয়েই বড় বিয়ে যেটা তোমার সাথে আমার অনেক আগেই হয়ে গেছে।
,
দিহান মুচকি হেসে দিহার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে।
,
ভালো থাকিস দিয়া। আমাদের মেয়েকে বড় ডাক্টার করবি।
এজীবনে তোকে না পেলাম তো কি হয়েছে। মৃত্যুর পর তোর অপেক্ষায় থাকবো।
,
দিয়ার সামনেই দিহান শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।
,
২৫ বছর পর,
“আজকে তোমার মেয়ে ডাক্তার হয়েছে দিহান ভাই। আমি তোমার কথা রেখেছি। ওকে এয়ারপোর্টে আনতে যাচ্ছি। তোমার কাছে যে খুব যেতে ইচ্ছা করে দিহান ভাই।”
,
ডায়েরি লিখে দিয়ানাকে আনার জন্য এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় দিয়া।
,
সব জায়গায় পূর্ণতা আসেনা। কিছু জায়গায় অপূর্ণতার মধ্যেও পূর্ণতা আছে। মায়ের কাছে সন্তান সন্তানই হয়। সমাজের কাছে হয়তো বৈধ্য অবৈধ্যর ধারণা থেকেই যায়।
,
,
সমাপ্ত
লেখিকা – রাফিজা আক্তার সাথী
………………………………………………………
আপনার লেখা সরাসরি আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের এডমিনগণ আপনার লেখা যাচাই বাঁচাই করে আমাদের ব্লগে মূল পাতাই আপনার লেখাটি প্রকাশ করবেন ।