তুমি ছাড়া পর্ব ২ ভালোবাসার গল্প Love Story

চিৎকার দিয়ে ওঠে দানিয়া। ঘামে সারা দেহ ভিজে গেছে। এতো ক্ষণ ধরে স্বপ্ন দেখেছে দানিয়া। কিন্তু এমন আবার স্বপ্ন হয় নাকি। যেন স্বপ্নের মানুষ গুলোর অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে পারা যাচ্ছে।
,
নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে দানিয়ার। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘরের ভিতর বাবা মা প্রবেশ করে। মেয়ের চিৎকার শুনেই তারা দৌড়ে এসেছেন।
,
মা রে কি হচ্ছে তোর?
মা দানিয়াকে জিজ্ঞাসা করলো।
,
মা আবারও আমি সেই স্বপ্নটা দেখেছি। ( কান্না করতে করতে বলল, সাথে নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে)
,
মারে একটা স্বপ্নের জন্য কেন কষ্ট পাচ্ছিস তুই। তুমি একটা কিছু করো আমি মেয়ের এই কষ্ট যে আর দেখতে পারছিনা। (মিস্টার ওয়াহিদকে বলল)
,
আমি ডক্টর কে ফোন করে দিয়েছি। কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে।
,
তুমি একটু এসির পাওয়ারটা বাড়িয়ে দাও। মেয়েটার সারা দেহ ঘেমে গেছে।
,
এসির পাওয়ার বাড়িয়েও কাজ হচ্ছেনা। দানিয়া খুব ঘামছে। যেন দেহের মধ্যে বন্যা বয়ে যাচ্ছে। সাথে নিশ্বাসের কষ্ট আর কান্না তো আছেই।
,
কিছুক্ষণের মধ্যে কলিং বেল বেজে উঠলো। বাবা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ডক্টর নাওয়াব এসেছে। দানিয়ার বাবার বন্ধু।
,
দেখ না মেয়েটার এই কষ্ট যে আর সহ্য করতে পারছিনা। দশটা বছর ধরে মেয়েটা একি স্বপ্ন দেখে কষ্ট পায় ভয় পায়। মাঝে মাঝে পাগলামিও করে। এখন চেক কর মেয়েটাকে।
,
হ্যা চল।
,
অনেক্ক্ষণ ধরে চেক করার পর। ডক্টর নাওয়াবের মুখে বিষন্নতার ছাপ দেখা যায়। মিস্টার ওয়াহিদ এটা দেখে একটু ঘাবড়ে যায়। মেয়ের বড় কোনো ক্ষতি হলো কিনা এই নিয়ে।
তাই জিজ্ঞাসা করলো,
,
নাওয়াব, কথা বলছিস না কেন? দশ বছর ধরেই তো দেখছিস। মেয়েটার এই অবস্থা হচ্ছে বার বার।
,
ডক্টর নাওয়াব তবুও চুপ করে রয়েছে।
,
কি ব্যাপার তুই কথা বল। একজন ডাক্তার হয়েও চুপ থাকিস কি করে।
,
ওয়াহিদ তোর মেয়েকে নিজের মেয়ের মতই দেখি আমি। কিন্তু আমি আজ হয়তো পৃৃথিবীর সবচেয়ে অবাক হওয়ার ব্যক্তির একজন হতে চলেছি। সাথে তোরাও।
,
মিসেস ওয়াহিদ এবার বললেন,
ভাইয়া আপনি বলুন না আমার মেয়েটার কি এমন হয়েছে যে আপনি খুব অবাক হচ্ছে। আমি যে আর সহ্য করতে পারছিনা।
,
ভাবি দানিয়ার এই মুহুর্তে ব্লাড প্রেসার ২৫০/১৫০।
,
হোয়াট?? চিৎকার করে উঠলো মিস্টার ওয়াহিদ।
এমন ব্লাড প্রেসার হলে তো কেও বাচে না।(বিঃদ্রঃ যদিও আমি জানি না কত ব্লাড প্রেসার হলে মানুষ মারা যায়)
,
বিশ্বাস না হলে তুই দেখ।
,
মিস্টার ওয়াহিদ ব্লাড প্রেসার দেখে অবাক হয়ে যায়। এভাবে চললে যে মেয়েটা মারা যাবে।
,
ডক্টর নাওয়াব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ফোন করে দেই এম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য। এই অবস্থায় দানিয়াকে হাস্পাতালে নিতেই হবে। নাহলে অঘটন ঘটতে সময় লাগবেনা।
,
,
দুইদিন পর,
,
দানিয়া এখন একটু সুস্থ। এই দুইদিনে অনেক ধকল গেছে তার উপর দিয়ে। বিভিন্ন টেস্ট করে কোনো ফল্ট ধরাই পড়েনি। কেন এতো এতো ব্লাড প্রেসার হাই হলো তাও কেও বুঝতে পারেনি।
,
আজকে রিলিজ নিয়ে তার পর সাইকাইট্রিস্ট ডক্টর মেহেরাবের কাছে যাবে দানিয়া। বাবা মাকে ডক্টর নাওয়াব এই পরামর্শ দিয়েছে। কারণ তার কাছে এই স্বপ্ন আর অসুস্থ হওয়াটা এখন আর স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
,
,
ডক্টর মেহেরাবের চেম্বারে,
,
তোমার এই সমস্যা কতদিন ধরে হচ্ছে মা? কবে থেকে এমন স্বপ্ন দেখছো?
,
আমার যখন দশ বছর বয়স বাবামা আর আমি বাংলাদেশ ছেড়ে কাতারে চলে আসি। সেই থেকে প্রায় প্রতি রাতেই এমন অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি। কিন্তু স্বপ্ন গুলোর মানুষের অনুভূতি ভালোবাসা কষ্ট সব কিছু যেন আমি অনুভব করতে পারি। যেন মনে হয় আমি ওখানে উপস্থিত।
,
দানিয়া ডক্টর মেহেরাব কে সমস্ত স্বপ্নের কথা বলে।
,
আচ্ছা মা তুমি একটু বাইরে গিয়ে বসো আমি একটু তোমার বাবা সাথে কথা বলি?
,
জ্বি আংকেল। এই বলে দানিয়া মায়ের সাথে বের হয়ে ওয়েটিং রুমে বসে থাকে।
,
ভিতরে,
দেখুন মিস্টার ওয়াহিদ, আপনার মেয়ের যে সমস্যা এটা কোনো স্বপ্ন না।
,
কি বলছেন ডক্টর। যেটা স্বপ্ন দেখে সেটা স্বপ্ন না কিভাবে?
,
আপনি আমার কথা বুঝতে পারেন নি। আমি বলতে চাচ্ছি। যত দিন ও বাংলাদেশে ছিলো। ওর সাথে এমন হয়নি কিন্তু এখানে আসার পর পর এমন হয়েছে। মানে বুঝতে পারছেন। ওখানে ওর সাথে বা ওর সামনে এমন কিছু ঘটার কারনেই ও এসব স্বপ্ন দেখে। আপনি হয়তো ভালোই জানেন মানুষ স্বপ্নের ১০% মনে রাখতে পারে। কিন্তু দানিয়া সব কথা এমন ভাবে বলছে যেন একটা গল্প বলছে। এটা তখনই হয় যখন কেও কারো ব্রেইন কন্ট্রোল করে।
,
ডক্টর আপনি কি কালোজাদুর কথা বলছেন। একজন ডাক্তার হয়ে??
,
এটা কালো জাদু না। এটা ওর কোনো অতিত।
,
আমার মেয়ের জীবনে এমন কোনো অতিত নেই ডক্টর। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি। মাত্র ২২ বছর বয়স ওর তার ভিতর ১০ বছর ধরে ও বাংলাদেশের বাইরে আছে তাহলে কিভাবে অতিত থাকতে পারে।
,
মনে যেটা ভাবা যায় তার থেকেও বড় ভাবনা আছে। মনের চিবতা ধারার বাইরে চিন্তা করুন দেখবেন সব সমাধান পেয়ে যাবেন। আমি আপনাকে একোটা প্রশ্ন করি। এই দশ বছরে মেয়েকে নিয়ে কয়বার বাংলাদেশে গিয়েছেন?
,
তিন বার। একমাস করে পার করে এসেছি।
,
তখন কি ওর ভিতর এই সব স্বপ্ন নিয়ে কোনো আতংক বা কোনো ধরনের সমস্যা লক্ষ্য করেছেন?
,
না। ইভেন ও নিজেই বলেছে। বাংলাদেশে গেলে ও কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেই না।
,
মেয়েকে নিয়ে দ্রুত দেশে ফিরে যান স্বপ্ন গুলোর উত্তর সেখানেই আছে। ওখানে কোনো সমস্যা হলে আমাকে অবশ্যই জানাবেন।
,
ডক্টরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে। বাসাতে চলে আসলো। সবাই।
,
রাতে ঘুমিয়ে আছে দানিয়া,
,
তোমার অস্তিত্ব আমি
তুমি ছাড়া আমি আলোহীন
আমাকে ছাড়া কেমন আছো তুমি
ভালো নেয় আমি তুমিহীন।
,
কেও একজন কবিতাটা সুর করে গাইছে। আবছা আলোয় মুখটা দেখা যাচ্ছে না। দানিয়া খুব চেষ্টা করছে মানুষটার মুকখানা দেখতে।
স্বপ্ন দেখছে কিনা দানিয়া বুঝতে পারছেনা। মনে হচ্ছে সব ওর চোখের সামনে হচ্ছে।
,
কে আপনি।
,
তোমাতেই আমি। তুমি ছাড়া আমি আলোহীন অন্ধকার।
,
দানিয়ার আবারও ঘুম ভেঙেগেলো। কবিতাটা যেন মনে হচ্ছে জীবন্ত। এটা যে স্বপ্ন সেটা বোঝা দায়। কিন্তু আজকের স্বপ্নে কষ্ট নেয় কেন? ভালোবাসায় ভরা যেন কথাগুলো দানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে। কিছু অনুভূতি মনে থেকেই যায়। যেমিন স্বপ্নের এই মানুষটাকে পাওয়ার ইচ্ছাটা দানিয়ার প্রবল যদিও লোকটার মুখ কোনোদিন দেখেনি স্বপ্নে।
,
আচ্ছা এই লোকটা স্বপ্নের সেই রিতু রিমনের কেও না তো?

৩য় পর্ব জলদি পাবেন।
বানান ভুল হলে মাফ করবেন। ধন্যবাদ।

লেখিকা – রাফিজা আখতার সাথী

………………………………

আপনার লেখা সরাসরি আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন  আমাদের এডমিনগণ আপনার লেখা যাচাই বাঁচাই করে আমাদের ব্লগে মূল পাতাই আপনার লেখাটি প্রকাশ করবেন ।

হেড এডমিন এর fb.com/YousufRanaDhali