আমার স্ত্রী রেহেনা, দুইদিন আগে আমাকে আর আমার ৬ বছরের মেয়েকে ফেলে আমাদেরই পাশের বাসার উজ্জ্বলকে বিয়ে করে পালিয়ে গেছে।গ্রামে এই নিয়ে বিচার বসবে আগামী পরসু।
দীর্ঘ ৫ বছরের প্রবাস জীবন পার করে আজকে দেশে ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু মনের ভিতর এক সমুদ্র হাহাকার। ,আমি সাইফুল ইসলাম সাইফ। আজ থেকে ৫ বছর আগে মালয়েশিয়ার পথে পাড়ি জমাই। চিন্তাটা ছিলো এরকম যে, ৫/৬ বছর যদি বিদেশের বুকে কাজ করি আল্লাহর অশেষ রহমতে যা আয় করবো তাই দিয়ে আমাদের বাকি জীবন আমার মেয়ে সায়মার জীবন খুব সুখেই পার হয়ে যাবে। ,
মালয়েশিয়াতে আসার পরও আল্লাহ যেন আমার রিযিকের দুয়ার খুলে দিয়েছিলো। যেখানে দেশে থাকা অবস্থায় সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেও ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় করতাম সেখানে এই দেশে আসার পর গড়ে প্রতিদিন বাংলাদেশি ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা আয় করতাম। প্রতিমাসে দেশে ৪০০০০ হাজার টাকা পাঠাতাম। ১০ হাজার টাকা দিয়ে সংসারের যাবতীয় খরচ আর ৫ হাজার হাত খরচ করতে বলতাম। বাকি ২৫ হাজার টাকা প্রতি মাসে ব্যাংকে রাখতো আমার স্ত্রী রেহেনা। ,আমি সবাইকে চমকে দেওয়ার জন্য কাওকেই বলিনি যে আমি চারদিন পর বাড়িতে ফিরবো। কিন্তু বিধাতা হয়তো অন্যকিছুই চেয়েছিলেন। যেদিন কনফার্ম হলাম আর চারদিন পর দেশে ফিরবো সেদিনই আমাকে চমকে দিলো আমার স্ত্রী রেহেনা। আমার মা ফোন দিয়ে জানালো যে আমার স্ত্রী পাশের বাসার উজ্জ্বলের সাথে পালিয়ে গেছে। পালিয়ে যাওয়ার দুইদিন পর কোর্ট থেকে তালাক নামা আর একটা চিঠি এসেছে বাড়িতে। ,বাগেরহাট জেলার ছোট্ট একটা গ্রামে বাড়ি আমাদের। রেহেনার সাথে আমার বিয়েটা ছিলো প্রেমের। আমার বাবা-মা সহজে মেনে নিলেও রেহেনার বাবা এলাকার ধনী ব্যক্তি হওয়াতে আমাদের বিয়ের পর তিনি রেহেনার সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে। এমনকি ও বাড়ির কেও আমাদের সাথে কোনোদিন দেখা করা কিনবা কথা বলার সাহস পেতো না। অবশ্য এতে রেহেনার কোনো আপসোস ছিলো না। সে বারবার বলতো, “সাইফ, জীবন একটাই। একজীবনে ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া বেচে থাকবো এটার মানেই হয়না। তাই বাবা-মাকে ছেড়ে দিতেও রাজি। কিন্তু তোমাকে ছাড়তে পারবোনা। ” ,এখন বুঝতে পারছি যে আমাকে আমার জন্য নিজের বাবা-মাকে ছেড়ে দিতে পারে সে যখন তখন আমাকেও ছেড়ে দিতে পারবে।
আর সেটাই হলো আমার সাথে। আমার সোনার সংসার ছেড়ে চলে গেলো। কিন্তু একবার কি আমার মিষ্টি মেয়েটার মুখের দিকে তাকায়নি ও? নিজের গর্ভে যে মেয়েকে প্রায় ১০ মাস রেখেছে তাকে ফেলেই অন্যের হাত ধরে চলে গেলো? তোমাকে অভিশাপ দেবোনা রেহেনা। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো, মাথার উপর আছে বিশাল আকাশ, পায়ের নিচে জমিন। ওই বিশাল আকাশ আর জমিনের মালিক কিন্তু সব দেখেছে। তোমার করা অন্যায়ের শাস্তি সে তোমাকে দেবেই। পাপ কারো পিছু ছাড়ে না।,

আজকের দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম বিগত কয়েক বছর ধরে। কবে দেশে যাবো তারপর জমানো টাকা দিয়ে একটা বড়সড় কাপড়ের দোকান দেবো। কিন্তু সেসব ভাবনা যেন মরুভূমির মধ্যে পানি খোঁজ করার সমান। সত্যি আমার জীববটা আজকে তিক্ত মনে হচ্ছে। একটা কথা আছে, সুখে থাকতে ভুতে কুলায়। আমার স্ত্রীর অবস্থাটাও ঠিক তাই হবে। উজ্জ্বলের মত লম্পটকে বিয়ে করা ওর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। যাক সে বিষয়ে এখন ভাবার সময় নেই। এখন এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। ,ব্যাগ গোছাতে গিয়ে হঠাৎ নেকলেসটা হাতে পড়লো। মালয়েশিয়ার প্রায় ১৫ হাজার দাম নিয়েছে। যেটা বাংলাদেশের টাকায় ৩ লক্ষের একটু বেশি হয়। হ্যা, এটা আমার স্ত্রীর জন্যই কিনেছি। কিন্তু এখন আমার স্ত্রীই যে নেই। যায়হোক এখন তাড়াতাড়ি গুছিয়ে এয়ার্পোরটের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। ,,

,পিঠে একটা ব্যাগ আর হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে গ্রামের মাটিতে পা দিলাম। মনে হয় কিছুক্ষণ আগে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। গ্রামে পা দিতেই নিজের জন্মভূমির চিরচেনা সেই মিষ্টি গন্ধে মন ভরে উঠছে। মেটে রাস্তা হওয়াতে রাস্তার মাটিও কিছুটা নরম হয়ে গেছে। পায়ের জুতা খুলে একটা পিলিথিনের ব্যাগে নিলাম। হেটে চলেছি বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিছুদুর যেতেই ছোটোবেলার বন্ধু রাকিবের সাথে দেখা।,-বন্ধু তোর বউটাকে তো উজ্জ্বলে খেলে দিলো!,কি বলবো কিছুতো বলার নেই আমার। আমার মুখে যেন কেও তালা লাগিয়ে দিয়েছে। ,রাকিবের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের দুইকোনা কিঞ্চিৎ প্রশস্ত করে একটা মৃদূ হাসি দিলাম। আমাকে আর মাথা উঁচু করে চলার মানাই না। তাই মাথাটা নিচু করে রাকিবের সামনে থেকে বিদায় নিয়ে হাটতে লাগলাম। পিছন থেকে,,- সাইফ, আমার কথায় কষ্ট পায়লেও কিছু করার নেই দোস্ত। গ্রামের প্রত্যেকটা মানুষ এর থেকেও বাজে কথা তোকে শোনাবে রে। তোর মেয়েটাকে দেখলে সবাই কি বলে জানিস? বারোভাতারির মেয়ে। গতকাল এই নিয়ে দুই একজন কে মেরেছিও। পরসু সন্ধ্যায় যে বিচার বসবে সেখানে আমার কথাও উঠবে। যায়হোক। আগের কথাগুলো বলার জন্য দুঃখিত দোস্ত। তুই আমার ছোটো কালের বন্ধু। নিজের ভাইয়ের সমান। ইচ্ছা ছিলো তোকে দেখলে বুকে জড়িয়ে ধরবো কিন্তু তোকে কষ্ট দেওয়া লাগলো। কারণ সহ্য ক্ষমতা বাড়াতে হবে।,রাকিবকে একটু বুকে জড়িয়ে ধরতেই মন বলছিলো। আসলেই তো এর থেকেও বাজে বাজে কথা শোনা লাগবে আমাকে। আবারও রাকিবের দিকে তাকি মৃদু একটা হাসি দিয়ে বাড়ির পথে এগিয়ে যেতে লাগলাম।
,,চলবে,
১ম পর্বলেখনীতেঃ সাথী
,বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা ছেলের ক্যারেক্টর নিয়ে লিখছি তাই গঠনগতও কিছু ভুল থাকতে পারে। সেগুলো ধরিয়ে দিতে পারেন। গল্পটা কিছুটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা শুরু করলাম। আসাকরি সবার ভালো লাগবে গল্পটা। ভালো খারাপ মিলেই পৃথিবী। হ্যাপি রিডিং।