সাদা কালোয় রাঙানো পর্ব ১

নিঝুম রাত,স্তব্ধ চারপাশ। তার মাঝে ঝকঝক শব্দে ,বিনা বাধায় চলছে ট্রেন।

কামরার লাইটের হালকা আলোতে সমরেশ মজুমদারের “সাতকাহন” হাতে গভীর মনোযোগ নিয়ে বসে আছে আয়াত।
যদিও হালকা আলোতে পড়তে একটু সমস্যা হচ্ছিলো,তবুও জার্নিতে বই পড়ার মতো আনন্দ সে মিস করতে চায় না।
যেকোনো জার্নিতে জানালার পাশে সীট, জার্নির আনন্দ দ্বিগুন করে দেয়।
জানালা দিয়ে আসা হালকা বাতাস সারাদেহে শিরশির অনুভূতি ছড়াচ্ছে ।ক্লিপ দিয়ে অর্ধেক আটকানো চুলগুলো, বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে নেচে বেড়াচ্ছে। মাঝেমাঝে আয়াতের মুখের সামনে এসে পরছে। এতে অবশ্য আয়াত বিরক্তবোধ করছে না। কারন সে এখন উপন্যাসে মগ্ন।
সাহিত্যের প্রতি প্রবোল আগ্রহ মেয়েটার,তবে নিজে কিন্তু দু’টি লাইনও লিখতে পারে না।হয়তো কখনো এ বিষয়ে ভাবে নি তাই।কলম নিয়ে বসলে লিখলেও লিখতে পারে।

একাডেমিক বইয়ে প্রচুর এলার্জি। বই ছেড়ে উঠে পারলেই বাঁচে। অথচ উপন্যাসের বই হাতে ধরিয়ে দেও, পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্যকোন দিকে তাকাবেও না।এই নিয়ে মায়ের কতো না বকুনি খেয়েছে।
পড়ার মাঝে টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করলো। প্রকৃতির ডাক উপেক্ষা করার সামর্থ্য তো কারো নেই।
অনেক দূর পথের জার্নির ক্ষেত্রে ট্রেন জার্নি সবচেয়ে আরামদায়ক।
টয়লেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো ঝামেলা করতে হয় না। বাসে তো বাস চালক কখন গাড়ি থামাবে তার অপেক্ষা করতে হয়। গাড়িতে তেল নেওয়ার জন্য ফিলিং স্টেশনে কিংবা খাবার ব্রেকের জন্য কোনো রেস্টুরেন্টে।

আরো কিছু সুবিধা আছে, যেমন: বসে থাকতে থাকতে কোমড়ে ব্যাথা ধরে গেলে ,বগির এপাশ ওপাশ একটু হেঁটে নেও,ব্যস হয়ে গেল।আবার বসে পরো সিটে। খাবারের জন্য আলাদা বগিও আছে। ক্ষুধা লাগলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে দামটা ঐ একটু বেশি আরকি।

কিন্তু এই মুহুর্তে আয়াত খুব বিরক্তিবোধ করলো। কারন তার পাশের দু’টো সীটে দু’জন মধ্য বয়স্ক মানুষ নিশ্চিন্ত ঘুমাচ্ছেন। বগিতে অবশ্য কমবেশী সবাই ঘুমুচ্ছেন।তাতে আয়াতের কোনো মাথা ব্যাথা নেই,সমস্যা শুধু এই অপরিচিত দুই মানুষের ঘুমে। কারন টয়লেট যেতে হলে এনাদের জাগাতে হবে।

বর্তমানে ট্রেনগুলোতে চেয়ারের সীট করা হয়েছে।
ট্রেন জার্নির ঠিক আগের ফিলটা আসে না। সামনাসামনি বেঞ্চের মতো সীট থাকবে,একে ওপরের মুখোমুখি হয়ে বসে বিভিন্ন বিষয়ের গল্পে মুখরিত সময় কাটবে।তা নাহ, এখন এই যে সাহেবের মতো নিজের চেয়ারে বসে থাকো, আর ঘুমোও।ধুর! মনে হয় প্লেনে বসে আছি।

মানুষগুলোও বলি হায়, এমন পা ছড়িয়ে বসে ঘুমানোর মানে কি।
প্রচন্ড বিরক্তি মনে লুকিয়ে রেখে, মুখে হালকা হাসি ঝুলিয়ে খুব নম্রভাবেই পাশে বসা লোকটিকে ডাকলো আয়াত,
“এই যে আঙ্কেল,শুনছেন?”
লোকটি চোখ মেলে তাকাতেই আয়াত বলে উঠলো,
” আমি একটু বাইরে বের হবো,একটু যদি সাইড দিতেন।”
লোকটি খুব দ্রুত পাশে থাকা লোকটিকেও জাগিয়ে তুললেন।দুজনে নিজেদের পাগুলো কিছুটা গুটিয়ে আয়াতকে জায়গা করে দিলো।
স্বল্প জায়গায়, অপরিচিত দুটো মানুষের সামনে দিয়ে কিছুটা আড়ষ্ট হয়েই বাইরে বের হলো আয়াত।
খুব দ্রুত পায়ে টয়লেটের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বগির চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো। কিছু মানুষ ঘুমে বিভোর,কেউ কেউ ফেসবুকিং করছে,কেউবা কানে ইয়ারফোন গুজে গান শুনছে,আবার কেউ আয়াতকে হাঁটতে দেখে উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।

লেখনিতে: হৃদা