তুমি আসবে বলে পর্ব ১

রাফিন ভাই আমাকে ভালোবাসে এটা জেনেছি সে মারা যাওয়ার কিছুদিন পর। রাফিন ভাইয়ের ডায়েরি পড়ে বুঝতে পারি সে আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু স্রষ্টার কি অদ্ভুত নিয়তি মারা যাওয়ার আগে সে আমাকে তার মনের কথাটা বলতেই পারলো না।



একটা মেয়ে কখনো আগে নিজের মনের কথা বলেনা। হয়তো লজ্জা হয়তো জড়তা। সব মিলিয়ে আমি একটু চুপচাপ স্বভাবের। তার মৃত্যুর দিন আমি কান্না করি নি সবার সামনে। তবে একজন প্রতিবেশী মারা গেলে যে টুকু মন খারাপ হওয়ার কথা সেটা দেখিয়েছিলাম। কিন্তু নিজের ঘরে এসে কান্না করতে করতে গড়াগড়ি খাই। সুপ্ত ভালোবাসাটা কোনোদিন আমিও জানাতে পারিনি তোমাকে রাফিন ভাই। শেষ বারে কেন বলে গেলে না তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমিও যে তোমাকেও ভালোবাসি। বলব বলব করে আর কোনোদিন বলাই হয়ে ওঠেনি আমি তোমাকে ভালোবাসি।



নিয়তি এতো অদ্ভুত কেন রাফিন ভাই। আচ্ছা এমন হলে কি খুব ভালো হতো, তোমার মৃত্যটা একটা স্বপ্ন ছিলো। আমার ঘুম ভাঙতেই এই দুঃস্বপ্নের সমাপ্তি হবে। তোমার হাসি মাখা মুখটা আমি দেখতে পারবো। মাথায় হালকা চাপ্পড় মেরে বলবে, রোজা তুই কিন্তু মোটা হয়ে যাচ্ছিস। একটু খাওয়া দাওয়া কম কর। এমন চলতে থাকলে কিন্তু তোর বিয়ে হবেনা কোনোদিন।


আমি রাইসা আহমেদ রোজা, আর এতোক্ষণ ধরে যার কথা বললাম সে হলো আমার ভাইয়ার স্কুল ফ্রেন্ড। তাদের ফ্রেন্ডশিপ এতোটাই মজবুত ছিলো যে আমার বাবামা আর রাফিন ভাইয়ার বাবামা পাশাপাশি বাসা নিতে বাধ্য হয়।
,
কয়েকদিন আগে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ঢাকা গেছিলো রাফিন ভাই। আসার সময় লঞ্চডুবিতে মারা যায় উনি। তার লাশটাও আমরা খুজে পাইনি। বিনা লাশে তার মৃত্যুর শোক পালন করেছি। রাফিন ভাইয়ার মৃত্যুতে আমার ভাইয়া একদম পাগল প্রায় হয়ে যায়। খাওয়া দাওয়া একরকম উঠেই যায় তার।
,
তার মারা যাওয়ার পর সবাই তার শোক প্রকাশ করতে পেরেছিলো। আমি হতভাগী পারিনি কোনোদিন। কারো সাথে ভাগ করে নিতে পারিনি আমার কষ্ট। কাওকে বোঝাতে পারিনি আমার বুকের তীব্র জ্বালা যেটা প্রতি সেকেন্ডে বেড়ে চলেছিলো বয় কমে নি।
কেও আমাকে জিজ্ঞাসা করেনি রাফিনের মৃৃত্যুতে তোর কেমন কষ্ট হয়েছে? কেও না।
,
,
উনি মারা যাওয়ার কয়েক কয়দিন পর, আজকে ওনার ডায়েরিটা হাতে পাই আমি। অবশ্য ডায়েরিটা আমাকে দিয়েছে আমার ভাইয়া।
,
,
“ভালোবাসার মানে আমি বুঝিনা কিন্তু আমি রোজাকে বুঝি।
ভালোথাকার মানে আমি বুঝিনা কিন্তু আমি রোজাকে বুঝি।


তোর ভিতর কি আছে রোজা যেটা বারবার আগে আমাকে তোর কাছে টেনে আনে। তুইকি কোনো চুম্বক? কেন আমি তোর থেকে দুরে থাকতে পারিনা? তুই আমার বেস্টফ্রেন্ডেরবোন না হলে কবেই মনের কথা তোকে জানিয়ে দিতাম। কিন্তু যদি আমি তোকে আমার মনের কথা জানাই, তুই যদি আমাকে ভুল বুঝিস তাহলে হয়তো আমার আর রাব্বির ফ্রেন্ডশিপটা নষ্ট হয়ে যাবে। ইউনো হোয়াট আমার ভালোবাসার থেকেও রাব্বির গুরুত্ব আমার কাছে বেশি। তোকে ভুলে যেতে পারবো কষ্ট হলেও কিন্তু আমার বন্ধুটাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা রে। তাই হয়তো মনের এই টানাপোড়েনের ভিতর কোনোদিন জানাতেই পারবোনা তোকে যে, বুকের ভিতর একটা ঘর বানিয়েছি তোর জন্য যেখানে শুধু তুই থাকবি হাজার ঝড় বাদল আসলেও সেই ঘর কোনোদিন ভেঙে যাবে না। আগলে রাখবো তোকে আমার বুকের পাজরে।
এগুলো তো আমার স্বপ্ন কিন্তু পরিনতি আল্লাহর হাতে।
তিনি যা করবেন তাই হবে। ভালোবাসার কথা গুলো না বলাই থাক। সব ভালোবাসা প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই। আমার ভালোবাসাটা নাহয় ডায়েরিতেই থাকুক।”


ডায়েরিটা বুকের সাথে জড়িয়ে ডুকরে কেদে উঠলাম। বিধাতার কি অদ্ভুত নিয়তি। আমার ভালোবাসা কোনোদিন পরিপূর্ণ হলো না তা নয় বরং শুরুই হলোনা।
,
মাথায় ভাইয়ার হাতের স্পর্শ পেলাম। ভাইয়াকে দেখে তাকে জড়িয়ে ধরে ইচ্ছা মত কাদলাম। আমার কান্না যেন শেষ হচ্ছেনা। কষ্টটা কমছে না আমার।
,
ভাইয়াও কেদে ফেলল,
,
-পাগলটা ভেবেছে তোকে ভালোবাসার কথা জানালে আমি বন্ধুত্ত্ব ছিন্ন করবো। কিন্তু ওর কি এটা জানা নেই যে রাব্বি ওর জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিতে পারে তাহলে কেন নিজের বোনটাকে ওর হাতে দিবেনা? তুইও ওকে ভালোবাসিস তাইনা?
,
ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেদে বললাম,
,
-ভাইয়া আমার রাফিন কে এনে দাও ভাইয়া। এনে দাও ওকে। আমি সত্যি বলছি নিজেকে শেষ করে দেব।
,
-শান্ত হ বোন। যে দুনিয়ায় নেই তাকে কি আনা যায়? ও যদি বেচে থাকতো পৃৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক আমি তোর কাছে এনে দিতাম। আমার হাতে যে কিছুই নেই বোন। স্রষ্টার লেখা নিয়তি আমরা মানতে বাধ্য। তুই চল এখন আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে একসাথে খাবো।


চোখদুটি যখন খুললাম নিজেকে কোনো একটা হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম। মুখে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে।
লঞ্চডুবে যাওয়ার পর আমার আর কিছুই মনে নেই। কিন্তু এখানে আসলাম কি কিভাবে? আর মুখে এতো ব্যাথা কেন করছে। সমস্ত দেহের যন্ত্রণা যেন আমার মুখের উপর এসে পড়েছে।
আশেপাশে আয়না জাতীয় কিছু খুজতে লাগলাম। কিন্তু পেলান না। জানালার গ্লাসে চোখ পড়তেই অবাক হয়ে গেলাম। এটা কে? এটা তো আমি না, মানে রাফিন না। আমিতো রাফিন এটা কার চেহারা? কি হচ্ছে আমার সাথে এসব।
,
আমিতো রাফিন তাহলে আমার মুখে অন্যের চেহারা কিভাবে আসলো?


চলবে

নেক্সট পর্ব পেতে নিয়মিত চোখ রাখুন সোশ্যালব্লগওয়ার্ল্ড এ