ছেঁড়া সুতো পর্ব ১

-ইফতি! তোর হবু বউকে দেখলাম একটা ছেলের সাথে রিকশায় চড়ে যাচ্ছে। তাও আবার তার ঘাড়ে মাথা দিয়ে, সে আবার তোর হবু বউয়ের কোমরে হাত পেচিয়ে রেখেছে।
,
রনির কথা শুনে মুডটা নষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু এই পাব্লিক প্লেসে সিন ক্রিয়েট করতে চাইনা তাই চেপে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
,
-দেখ রনি। তোর সাথে আমার ঝামেলা থাকতে পারে, তাই বলে তুই আমার ভালোবাসার নামে এমন অববাদ দিতে পারিস না।
,
-তোর ভালোবাসা কি দিন দুপুরে এমন করে নাকি রাতেও কাস্টোমার রেডি থাকে?
,
রনির কথা শুনে সারা দেহে যেন আগুন ধরে গেছে। খপ করে ওর কলার চেপে ধরলাম,
,
-বাস্টার্ড! মুখ সামলে কথা বলবি। আমার রুবি এমন না।
,
-বাহ! এতো বিশ্বাস নিজের ভালোবাসার প্রতি?
,
-তুই তো কাপুরুষ, বেয়াদব। মেয়েদের সাথে ভালো আচরণ তো কোনোদিন করিস নি। তাই তো দুইদিন পর পর মহল্লার বিচারে তোর গালে জুতার মাইর আর গলায় জুতার মালা পড়ানো হয়।
,
-ইফতি তুই কিন্তু তোর লিমিট ক্রস করছিস?
,
-এই বাস্টার্ড! তুই আমার হবু স্ত্রীকে নিয়ে বাজে কথা বলবি আর আমি চুপ করে থাকবো?
,
– ইফতি,আমি খারাও সেটা আমি মানছি। একবার না, হাজার বার মেনে নেব আমি খারাপ৷ কিন্তু এটা দেখ।
,
এই বলে রনি পকেট থেকে ফোন বের করে। ফোবের গ্যালারি থেকে কয়েকটা ছবি দেখালো। এটা দেখে মাথা ভনভন করতে লাগলো। ৩ বছরের সম্পর্ক আমার আর রুবির কিন্তু সে আমার সাথে এতো বড় প্রতারণা করতে পারেনা।
সে বলেছে আমাকে তার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে।
,
-দেখ ভাই রনি। আমি বুঝতে পারছি তুই এই বিয়েটা ভাঙার চেষ্টা করছিস। কিন্তু এটা করে তোর লাভটা কি বলতো?
,
-আমি জানতান ইফতি, তুই আমার মুখের কথা বা ছবি কোনোটাই বিশ্বাস করবিনা। বলবি ছবি এডিট করেছি। তাই এসব তোকে দেখার আরেকটা ওয়ে দেখাচ্ছি।
,
রনি নিজের ফোন থেকে কাওকে ভিডিও কল দিলো। ওদিক থেকে রিসিভ হতেই ভিডিও ওপেন হয়ে গেল। এটা অবিশ্বাস করার প্রশ্নই ওঠেনা। কারণ ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রুবি একটা ছেলেকে নিজে হাতে খাইয়ে দিচ্ছে আবার ছেলেটাও ওকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে। এটা দেখে মাথায় যেন আগুব ধরে গেলো।
,
রনিকে জিজ্ঞাসা করলাম ওরা কোন রেস্টুরেন্টে আছে। রনি বলল ও নিয়ে যাবে আমাকে। আমি ওর সাথে ওর বাইকে উঠে পাড়লাম।
,
,
🍁
,
রুবিদের পিছনের টেবিলে বসেছি আমি আর রনি। আমি রুবির উল্টোদিকে বসায় আমাকে দেখতে পারেনি। শোনার চেষ্টা করছে ওদের কথোপকথন,
“- আচ্ছা জানু, ইফতি নামের ছেলেটা কি পাগল নাকি? তোমার সাথে যে আমার সাত বছরের সম্পর্ক রয়েছে সেটা কি ও জানে না?
,
-ও তো একটা গাধা জানবে কি করে!
শুধু বড়লোকের ব্যাটাই হয়েছে। শুধু টাকাই আছে মাথায় কোন বুদ্ধি নেই।
,
-তা যা বলেছ। না হলে আর………
আচ্ছা যাই হোক এখন এই নাও খাও তো। দিন দিন কেমন শুকিয়ে যাচ্ছো।
,
রুবি হা করল ছেলেটা ওর গালে খাবার তুলে দিল। রুবি খেতে খেতে বলল,
,
-এত যে খাওয়াচ্ছো বিল তো অনেক উঠে যাবে।
,
ছেলেটা হো হো করে হাসতে হাসতে বলল,
,
-আরে খাচ্ছি তো আমরা বিল দেবে তো তোমার সেই গাধা বয়ফ্রেন্ড যার সাথে তোমার বিয়ে।
,
এই বলে হাসতে হাসতে দুইজনই গড়াগড়ি খেতে লাগলো।
,
-ওর সাথে কে বিয়ে করবে হ্যাঁ? আমাকে পাগলা কুত্তায় কামড়েছে? বিয়ের আগের দিন ও বলেছে ৪০ লক্ষ টাকার গহনা দিয়ে যাবে। আর আমি আর তুমি সেই রাতেই হাওয়া হয়ে যাবো।
,
-যাই বলো না কেন জানু এবার কিন্তু অনেক সময় ব্যায় হলো।
,
-তিন বছর লেগে গেলো। তাতে কি! টাকাও তো ৪০ লক্ষ পাবো। এই দিয়ে আমরা সারাজীবন সুখে কাটিয়ে দিতে পারবো।”
,
ভেবেছিলাম হয়তো ছবি, মোবাইলের ভিডিও সব কিছুই একটা ভ্রম হবে কিন্তু এতো বড় সারপ্রাইজ পাবো ভাবতেই পারিনি। কাকে বিশ্বাস করবো আমি। আমি ছোটো থাকতে আমার মা আমার বাবাকে ফেলে তার প্রেমিকের সাথে চলে যায়। আনার মুখখানা দেখেও তিনি থাকেন নি। আমাকে ফেলেই চলে গেছিলো।
,
এর পর থেকে কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু রুবির মায়া আমাকে বাধ্য করেছিলো ওর প্রতি ভালোবাসা তৈরি করতে। কিন্তু আমাদের সম্পর্কের সুতো এই ভাবে ছিঁড়ে যাবে ভাবতেও পারিনি।

চলবে…..

নেক্সট পর্ব পেতে নিয়মিত চোখ রাখুন সোশ্যালব্লগওয়ার্ল্ড এ