পর পর তিনজন মধ্যবয়সী যুবক তেতুল তলায় আত্নহত্যা করার পর আমাদের এলাকা এখন থম থমে পরিবেশে রূপান্তরিত হয়েছে!
বাসা থেকে বাবা মা আমাকে একদম বের হতে দেন না। যদিও সেই যুবকরা তিনজনই বিবাহিত ছিলেন!
তিনজন যুবককেই ঠিক আলাদা দিন এ একই সময়ে তেতুল গাছের সাথে ফাঁসি লাগিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশ ময়নাতদন্তের তথ্য থেকে জানতে পেরেছে তাদের আগে খুন করা হয়েছে আর পরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে!
এলাকার মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকান গুলোতে এখন আর তেমন জন মানুষ বসে না, সবাই যে যার কাজ সেড়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় খুনের পর থেকে বেশ শক্ত পোক্ত অচেনা মানুষের সমাগম বেড়ে গেছে এলাকায়।
রহিম চাচা বলেছেন ওনারা নাকি পুলিশ, খুনিকে ধরার জন্য সিভিল পোশাকে এসে চারদিক নজর রাখছেন।
রহিম চাচা রিটায়ার্ড প্রাপ্ত আর্মি অফিসার, ঘরে তার দুই কন্যা আর স্ত্রী। দিন বিশেক আগেও রহিম চাচা বেশ হাসি খুশি থাকতেন আমাদের সাথে। প্রতিবেশী আর একসাথে খেলাধুলা করায় রমিম চাচার সাথে সখ্যতা বেড়ে একদম বন্ধুর মতো হয়ে গিয়েছি আমরা। রহিম চাচা তার মেয়েদের নিজেই স্কুল কলেজে আনা নেয়া করতেন এই বয়সেও। কিন্তু অনেকদিন হয়ে গেলো তিনি তার মেয়েদের নিয়ে বের হন না, মাঝে মধ্যে কলেজ পড়ুয়া বড় মেয়েটাকে দেখা গেলেও তার ছোট মেয়েটাকে অনেকদিন দেখিনি। অথচ তিনি বেশিরভাগ সময় ছোট মেয়েটাকে নিয়েই বের হতেন।
পনির ভাইয়ের দোকানের সোজা ঠিক অপরপ্রান্তে একটা একটা পাগল দেখা যাচ্ছে দিন দশেক হলো। পাগলটা সারাদিন প্রলাপ বকতে থাকে আর মাঝ বয়সী যুবক ভাইদের গালাগালি করতে থাকে অকথ্য ভাষায়! তাই বেশ অল্প দিনেই পাগলের উপস্থিতি আর পরিচিতি লক্ষ্য করেছে সবাই। দিনরাত পাগলটা ওখানেই থাকে, কেউ কেউ শুকনো বোনরুটি ছুড়ে মারে কেউ বিস্কুট দেয় কিন্তু পাগলটা খেতে চায় না। একমনে তাকিয়ে থাকে তেতুল তলার পাণে!
আমি আশ্চর্য হয়েছিলাম যেদিন পাগলটাকে প্রথম দেখেছি, দেখতে অনেকটা সিমিনের মতো লাগে, ওর মতো টানা টানা চোখ মুখ নাক সব কিছুই প্রায় একই শুধু ঠোঁটের কোনে যেখানটায় সিমিনের একটা তিল আছে আর পাগলটার সেখানে কাটা দাগ!
সিমিন হচ্ছে রহিম চাচার দশম শ্রেণিতে পড়া ছোট মেয়েটা, ওর বিষয়ে এতো জানার কারণ হচ্ছে অজানা কোনো কারণে সিমিনকে খুব ভালো লাগে আমার। রহিম চাচা ওরে নিয়ে যখন স্কুলে যেতো তখন খুব ভালো প্রতিবেশীর ভূমিকায় আমিও রহিম চাচার সাথে কথা বলতে বলতে তাদের সাথে আগাতাম। কেন জানিনা সিমিনের আশেপাশে থাকতে আমার বেশ ভালো লাগতো। সিমিনও মাঝে মধ্যে কেমন একটা অন্যরকম চাহনি নিক্ষেপ করতো আমার পাণে। তখন বুকের ভিতর এতো ভালো লাগতো যার তুলনা আমি অন্য কিছুতেই পাইনি।
অনেকদিন ধরে সিমিনকে রহিম চাচার সাথে দেখছি না আর তাকে জিজ্ঞেসও করতে পারছি না যদি সে অন্য কিছু ভেবে বসে এই ভয়ে। কিন্তু হঠাৎ করে ওর মতো দেখতে পাগলটাকে দেখে আমার কেনো যেনো পুরো দুনিয়াটাই অন্ধকার হয়ে এসেছিল! যখন দেখলাম ঠোঁটের কোনে তিলের জায়গায়টা কাটা তখন থেকে মনের ভিতর অন্যরকম ভাবনা চলে এসেছে আমার। তড়িঘড়ি করে রহিম চাচাকে ডেকে এনে যখন দেখালাম,
“দেখুন চাচা পাগলটাকে দেখতে একদম সিমিনের মতো মনে হয় না?”
“কিহ! কক কক কই কই! ধুর কি যে বলো তুমি? সিমিন তো ঘুমাচ্ছে ও এখানে আসবে কি করে!”
“কি বলেন চাচা? এই সন্ধ্যা বেলায় ঘুমাচ্ছে?”
“ও তো এখন সব সময়ই ঘুমায় বাবা”(নিস্তেজ হয়ে)
“মানে কি বলছেন?”
“কি, কই না কিছু না। বলছি একটু অসুস্থ তো তাই বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে থাকে কিনা তাই।”
“কি হয়েছে চাচা সিমিনের? ও ঠিক আছে তো! নাকি এমনিতে জ্বর হয়েছে?”
ওর অসুস্থতার কথা শুনে আমাকে বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করতে দেখে চাচা আমার দিকে আড়চোখে তাকালেন কিন্তু কিছু বললেন না।
“তেমন কিছুনা সুস্থ হয়ে যাবে সমস্যা নেই।”
আমি বুঝলাম না পাগলটাকে আমি সিমিনের মতো বলায় চাচা ওমন ভাবে ঘাবড়ে গেলেন কেনো! আর সিমিন অসুস্থ এতোদিন আমাদের বললেন ও না। হবে হয়তো বলার প্রয়োজন মনে করেনি কিন্তু সিমিনের কি হয়েছে বুঝতে পারছি না।
পুলিশ কাল রাত থেকে খুব কড়াকড়ি ভাবে এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করে দিয়েছে। তিনটা খুন হলো পর পর তিনদিন বাদে নয়দিনের ভিতর অথচ খুনিকে এখনো ধরতে পারছে না তারা। সংবাদ মাধ্যমের লোকজন প্রায়ই এসে পুলিশের ব্যার্থতার কথা তুলে ধরছেন আর তারা এটাও বলছেন যে বারোদিনের মাথায় যদি তেতুল তলায় আরেকটা লাশ ঝুলতে দেখা যায় তাহলে পুলিশ কি করবে! এই নিয়ে এলাকার অবস্থা বেশ গরম। শুনলাম কাল রাত থেকে এখন দুপুর অবদি যাদের সাথে কথা বলে সন্দেহজনক মনে হয়েছে তার ভিতর থেকে জন পনেরো লোকজনকে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ!
বিকেলে বাসার জন্য ডিম কিনতে গিয়ে দেখি তেতুল তলার দিকে যাচ্ছে সবাই আর বলাবলি করছে মিন্টু ভাইকে কে জানি মেরে তেতুল তলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে!….
—
—
চলবে
নেক্সট পর্ব পেতে নিয়মিত চোখ রাখুন সোশ্যালব্লগওয়ার্ল্ড এ