বলোনা ভালোবাসি পর্ব ১

ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে পা দুলিয়ে টিভি দেখছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে রোজ।টিভিতে সে এতই মগ্ন যে তার হাতের আইসক্রিম নিয়ে অন্য কেউ খাচ্ছে এতে তারই কোনো খেয়ালই নেই।সে আগের মতোই এক ধ্যানে টিভি দেখছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে হঠাৎ তার মনে হলো মুখে আইসক্রিম নয় নরম জাতীয় কিছু যা হাতে কাতুকুতু দিচ্ছে।কিছুটা ভয় পেয়ে হাতের দিকে তাকালো।তাকাতেই অবাক ওমা একি!!আমার আইসক্রিম কই গেল! তাহলে আইসক্রিম ভেবে এতক্ষণ নিজের হাত খাচ্ছিলাম।কিন্তু আইসক্রিম শেষ হলো কখন আমার তো স্পষ্ট মনে আছে আমার আইসক্রিম শেষ হয়নি তাহলে গেলো কোথায়।আমার এই কান্ড দেখে পাশ থেকে রোদ ভাইয়া হুংকার করে হু হা করে হেসে দিলো।অপলক দৃষ্টিতে তার হাসি দেখছি।ছেলেদের হাসি এত সুন্দর হয় কেন?প্রকৃতি যেখানে নিজ হাতে মেয়েদের সব সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে সেখানে এই ছেলেটা এত সুন্দর হাসি পেলো কোথা থেকে?চুরি ডাকাতি করেনি তো করতেও পারে এই ছেলেকে বিশ্বাস নেই।


.
কিরে তুই এমন পেটুক মেয়ে আমাদের বাসার সবকিছু খেয়েও তোর শান্তি হয় নাই এখন নিজের হাতও খাচ্ছিস।এজন্য আমি ভয়ে তোর থেকে দূরে দূরে থাকি তুই যেই রাক্ষস মেয়ে কখন না আবার আমাকে খেলে ফেলিস।
.
রোদ ভাইয়ার কথায় ঘোর কাটলো।রোদ ভাইয়া আয়েস করে আমার আইসক্রিম খাচ্ছে আর আমাকে পঁচাচ্ছে। যা মোটেও সহ্য হচ্ছে না আমার।তাই এমনি রেগে মেগে দিলাম ওর হাতে কামড় বসিয়ে।
.
আহহ!বুচিঁ পেঁচী তুই আমাকে কামড় দিলি কেন?
.
তুই আমার আমার আইসক্রিম নিলি তাই!
.
রাক্ষস মেয়ে এইটুকু আইসক্রিমের জন্য কামড়ে দিলি!(হাত ঝাকিয়ে)
.
হুম বেশ করেছি।(গাল ফুলিয়ে)
.
দাঁড়া বলেই আমার হাতে একটা কামড় বসিয়ে দিলো।
.
আহহ!ওমা গো এই রাক্ষস ছেলে আমায় খেয়ে ফেলল গো।ওই তুই এটা কি করলি….
.
কেন কামড় দিলাম।তুই আমাকে কামড় দিয়েছিস আমিও তোকে কামড় দিলাম। কামড়ের বদলে কামড় শোধবোধ।এই রোদ কারো কাছে ঝণী থাকে না বুঝলি(ভাব নিয়ে)
.
তাই আচ্ছা বলে উম্মাাা!! গালে একটা ডিপ কিস করলাম।আমার(গাল এগিয়ে দিয়ে) নে এবার ব্যাক কর।


.
ঘটনার আকস্মিকতায় রোদ পিলে চমকে উঠলো।এখনও হা হয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।।এসব কাজ এই মেয়ের দ্বারাই পসিবল।পৃথিবীর যেই কাজগুলো অন্য কেউ করতে পারবে না সেই কাজগুলো এই নির্লজ্জ মেয়ে অনায়াসে করতে পারে।এহহ তোর মতো বেহায়া মেয়েকে আমি করব কিস ওয়াকক জীবনেও না।
.
কেন তুই এখনই বললি তুই কারো কাছে ঋণী থাকিস না তাহলে….(ঠোঁট উল্টিয়ে)
.
কামড় আর কিসি এক না।রোদ যাকে তাকে কিস করে না।রোদের চয়েজ এখনও এতটা খারাপ হয়নি তোর মতো বুচিঁ পেঁচীকে কিস করবে।
.
কেন রে আমি কি সত্যি দেখতে খুব খারাপ।একটা কিসই তো করনা।(অভিমানি সুরে)
.
না করবো না।।আমার বউয়ের ভাগের কিস তোকে দেব কেন?দেব না।ওটা আমার বউয়ের জন্য তুলে রাখছি।
.
কথাটা শুনেই খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম আমি!তুই সত্যি বলছিস তাহলে তোর বউ আমিই হবো চিন্তা করিস না।আর কিসিগুলো আমিই পাবো।কারন আমি ছাড়া তোর কপালে বউ জুটবে না।


.
আমি মরে গেলেও তোকে বিয়ে করবো না।তারছিড়া মেয়ে কোথাকার তুই যাবি এখান থেকে না কানের নিচে দেব একটা।ফাজিল মেয়ে আমার হাতটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিস।(হাত ঝাকিয়ে)
.
ওই বকবি না।।তুই ও তো আমার এত সুন্দর তুলার মতো নরম হাতটা কামড়ে খেয়ে নিয়েছিস দেখ একটা টুকরো মাংস উঠে গেছে মনে হয়।(হাত এগিয়ে দিয়ে)
.
কই দেখি দেখি খুব ব্যাথা পেয়েছিস তাই নারে।বলেই কামড়ে দেওয়া জায়গায় এরেকটা কামড় বসিয়ে দিলো রোদ।
.
আহহহ (চিৎকার দিয়ে)ও ফুপ্পি গো তোমার রাক্ষস জলহস্তী কুমির ছেলে আমায় খেয়ে ফেলল গো।দেখে যাও আমাকে একা পেয়ে কি অত্যাচারটাই না করছে ।কামড়টা খুব বেশি গভীর হওয়া হাত থেকে রক্ত বের হয়ে গেলো।কামড়ে দেওয়া জায়গায় রোদের দাঁতের দাগ ফুঁটে উঠেছে। ।রোদের দিকে তাকিয়ে দেখলো তৃপ্তির হাসি হাসছে।আস্ত শয়তান ছেলে আমি এত কষ্ট পাচ্ছি তাও দাঁত কেলাচ্ছে।
.
ওদের চিৎকার শুনে রোদের মা মিসেস আয়েশা রুমে আসলেন।এদের কান্ড দেখে উনি কি বলবেন বুঝতে পারছেন না।কারন এরকম ঘটনা তিনি পাঁচ বছর ধরে দেখে আসছেন। সবসময় কিছু না কিছু নিয়ে ঝগড়া লেগেই তাকে কিন্তু এতকিছুর পরও কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারে না।
.
মাইশা শাহরিয়ার রোজ ফুপ্পির বাসায় থাকে।আদিব আয়মান রোদের বড় মামার মেয়ে।রোজ ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার আর রোদ কেমিস্ট্রি নিয়ে অনার্স করছে থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট।।রোদের কোনো বোন নেই সেজন্য রোদের মা বাবা ওকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসেন। ফুপ্পির কোনো মেয়ে না থাকায় আর রোদের জন্য রোজ তাদের বাড়িতে থাকে।হুম রোজ রোদকে পাগলের মতো ভালোবাসে।কিন্তু রোদ বাচ্চা মেয়ের ফাজলামো ভেবে পাওা দেয় না।আবার রোদ রোজকে ছাড়া এক মিনিটও থাকতে পারেনা।কিন্তু কেন ওকে ছাড়া থাকতে পারে না তার উওর নিজেরই অজানা।সারাক্ষণ ঝগড়া ঝাটি মারামারি এসবেই দুজনে অভ্যস্ত।।রোজের বাবা মা এই শহরেই থাকেন।রোজের দুই বোন এক ভাই।রোজ সবার ছোট।দুজনের এমন কান্ডে তিনি হতবাক। তিনি নিজের ছেলেকে ধমক দিয়ে বললেন….
.
রোদ সবসময় মেয়েটাকে এত জ্বালাস কেন।তোর জন্য আমার বাসায় একটা দিনও শান্তি পেলো না।।দেখ তো হাত থেকে কতটা রক্ত ঝরছে।।এভাবে কেউ করে!
.
আহহ মা পরতে দাও তো!(গেমস খেলতে খেলতে)আমাকে কামড় দিলে পরে কি ঘটতে পারে এটা ওর আগে ভাবা উচিৎ ছিলো!আমি কি আগে ওকে কামড় দিছি ও প্রথমে দিয়েছে তাই আমিও দিয়েছে ইট’স রিভেঞ্জ মম!
.


থাম!ইট’স রিভেঞ্জ! ও না হয় বাচ্চা এত বুঝে না কিন্তু তুই তো বুঝদার ছেলে তাহলে।
.
রোদের এই কথায় রোজ খুব কষ্ট পেলো।সত্যি রোজ মরে গেলেও হয়তো রোদের কিছু আসবে যাবে না।রোক একমিনিটও সেখানে না দাঁড়িয়ে নিজের রুমে এসে ঠাসস! দরজা লক করে দিলো।মিসেস আয়েশা ডাকছেন হাতে মেডিসিন দেওয়ার জন্য কিন্তু শুনলো না।তাই তিনি রোদের উপর বিরক্ত হয়েই নিজের কাজে গেলেন।
.
মেঝেতে রক্ত দেখে রোদের মনে পরলো তখন রোজের হাত থেকে রক্ত বেরিয়ে ছিলো।আর এটাও জানে রোদ মেডিসিন না লাগিয়ে দিলে হাতটা যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।তাই আর দেরি না করে দৌড়ে মিসেস আয়েশার কাছে গেলো।
.
মম রোজের হাত থেকে কি খুব বেশি রক্ত ঝরছিল।আর হাতে কি মেডিসিন দিয়েছে।
.
এখন আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছিস।তখন মেয়েটার দিকে ফিরেও তাকালি না। তোর কথা শুনেই তো মেডিসিন না দিয়ে রেগে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে অনেকবার ডাকার পরও এখনও খোলেনি।এখনও খায়ও নি।যাক বাবা এখন তোর একটু শান্তি লাগবে মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে।ও কষ্ট পেলেই তো তোর আনন্দ হয় যা গিয়ে আরাম করে টিভি দেখ।
.
দেখ মম আমি কিন্তু ইচ্ছা করে কিছু করিনি।ও ই বা কি একটা আইসক্রিমের জন্য আমায় কামড়ে দিলো।তার উপর উল্টো পাল্টা কথা বলছিলো তাই রাগটাকে কনট্রোল করতে পারিনি।ফাস্ট এইড বক্সটা দাও তো
.
এই নাও(রোদের হাতে দিতে দিতে)।মেডিসিন দিয়ে আমাকে উদ্ধার করো।দেখ গিয়ে দরজা খুলতে পারো কিনা।।মেয়েটাকে আর কত কষ্ট দিবি বল।
.
রোদ কথা না বাড়িয়ে মাথানিচু করে চলে গেলো।রোজের দরজায় এখন সারাদিন ডাকলেও দরজা খুলবে না সেটা রোদ ভালো করেই জানে।তাই ব্যালকোনি দিয়ে রুমে চলে গেলো।রুমে ঢুকে দেখলো রোজ কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছে।চোখের পাপড়ির মধ্যে দু-এক ফোঁটা পানি এখনও লেগে আছে।হাতে রক্ত পরা বন্ধ হয়ে গেছে।রোজকে না ডেকে রোদ তার হাতে মেডিসিন লাগাতে লাগলো।হঠাৎ হাতে ঠান্ডা কিছু ফিল হওয়ায় রোজের ঘুম ভেঙে গেলো।রোদকে হাতে মেডিসিন লাগাতে দেখেই এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিলো।
.
কি হলো হাত সরালি কেন?
.


আমি ঔষধ লাগাবো না তুই যা আমার রুম থেকে।আমার রুম তো লক!তাহলে নিশ্চয় ব্যালকোনি দিয়ে ঢুকেছিস।
.
হুম এবার হাতটা দে নাহলে তো জানিস আমার কথার অবাধ্য হওয়ার জন্য কি শাস্তি পেতে পারিস।(চোখ রাঙিয়ে)
.
রোজ জানে এখন কথা না শুনলে এক ঘন্টা হা পা টিপাবে,কাপড় ধোয়াবে, রুম মুছাবে দরকার পরলে মারবেও।তাই বাধ্য মেয়ের মতো হাত এগিয়ে দিলো।
.
এই তো গুড গার্ল এভাবে বাধ্য মেয়ে হয়ে থাকতে পারিস না।তোর আইসক্রিম আমি খেয়েছি সেটা ফেরত দেব চিন্তা করিস না।তুই থাক আমি আসছি বলেই চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর রোদ আবারও রোজের রুমে ফিরে এলো হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে।
.
নে এবার খেয়ে নে।
.
না আমি খাব না।আমার ক্ষিদে নেই।
.
মম বলল এখনও কিছু খাস নি।তাহলে ক্ষিদে নেই কেন?
.
এমনি!ভালো লাগছে না।
.
ভালোয় ভালোয় খেয়ে নে।নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
.
তুই খাইয়ে দিলে খাবো নাহলে লাগবে না।(করুন কন্ঠে)

.
রোজের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো রোদ।ফোনটা হাত থেকে রেখে রোজকে খাওয়াতে শুরু করলো।রোজ খাচ্ছে আর রোদকে দেখছে আর ভাবছে।আমার এত খেয়াল রাখে আমার দিকে কেউ কুনজরে তাকালো তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করতেও পিছ পা হয় না তাহলে আমাকে ভালোবাসে না কেন?কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আনমনেই বলে উঠলো ভাইয়া বলোনা ভালোবাসি ♥

নেক্সট পর্ব তারাতারি আসছে …………………………………………………………।