হিমুকে বর্ষা সর্বশক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আর হিমু ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। এতে বর্ষা বিরক্ত হয়ে হিমুকে বলল-
-‘কি ব্যাপার তুমি এরকম ছটফট করছো কেনো? আমি যে তোমায় এখন পেতে চাচ্ছি তুমি কি সেটা বুঝতে পারছোনা?’
হিমু বর্ষার কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে গেল। মনে মনে ভাবলো, যেই মেয়ে আমাকে টাচ করতেই দিতে চায়না সেই মেয়ে এখন নিজ থেকে আমার কাছে ধরা দিচ্ছে! নিশ্চয় এর পেছনে কোন রহস্য আছে। অথবা নতুন কোন ফাঁদ পেতেছে। ভুল করেও এই ফাঁদে আমার পা দেওয়া যাবে না।।
হিমু এবার জোর করেই বর্ষার বাহু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলো। বেড থেকে নেমে গিয়ে মাথার চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলল-
-‘আমি খুব মেন্টালিভাবে ডিপ্রেসড্ হয়ে আছি। আশা করি তুমি এই অবস্থায় এমন কিছু করবেনা যাতে আমি আরো বেশি ভেঙে পরি। ডাইনিং রুমে আসো সবাই আমাদেথ জন্যে ওয়েট করছে।’
হিমু রুমের বাইরে চলে গেল। বর্ষা বেড থেকে নেমে আয়নার সামনে গিয়ে শাড়ি ঠিক করতে লাগলো। মাথার চুল গুলোও আঁচরে নিলো।
রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে ধরে আবার কি মনে করে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ একটানা নিজের মুখর দিকে তাকিয়ে থেকে আয়নার উপরে একটা কিস্ করলো । ওর দু ঠোঁটের ছাপ স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠলো। ও সেদিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ডাইনিং রুমে চলে গেল।
বাসায় ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে রায়ান। মাথা ভর্তি একগাদা চুল। পরনে থ্রি কোয়ার্টার একটা প্যান্ট আর টি শার্ট। গায়ের রং কিছুটা শ্যামলা প্রকৃতির হওয়ায় সবুজ রঙের টি শার্ট টা ওকে ভালোই মানিয়েছে। বেশি লম্বা না। বেশি মোটাও না। তবে সবমিলিয়ে একপ্রকার সুন্দর বলাই যায়।
ও এখন ভিশন দুশ্চিন্তাই আছে। অলরেডি দুইটা গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফ্লার্ট করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরে পরেছে। এদিকে বর্ষাও ওকে পেনডিং অবস্থায় রেখে দিয়েছে। বেচারির মন মানসিকতা ধীরে ধীরে খুব হাইপার হয়ে যাচ্ছে।
পৃথিবীতে এমন কিছু শ্রেণীর মানুষ আছে যারা অতি দেহ ভোগেও তৃপ্ত হয়না। রায়ান সেই দলেরই এক জন। বর্ষাকে বহুদিন ধরে টার্গেটে রেখেছে ফিজিক্যালি রিলেশন করার জন্যে কিন্তু সাপে বরে মেলেনি। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওমন পরীর মতো একটা মেয়েকে সে ছেড়ে দেওয়ার সাহস পায়নি। অন্য কোন মেয়ে হলে অনেক আগেই মামলা টা চুকে দিতো। কিন্ত বর্ষা অনেক বেশি সুন্দরী হওয়ায় রায়ান ফেসে গিয়েছে। ওক ছাড়তেও পারেনা ঠিক মতো রাখতেও পারেনা।
বর্ষার নাম্বারে রাত থেকে রায়ান ট্রাই করছে। কিন্তু সুইচড অফ বলছে। আবার লাস্ট বার যে নাম্বার থেকে বর্ষা কল করেছিল সেই নাম্বার থেকেও ওর নাম্বার ব্লাক লিস্ট করে রাখা আছে। শেষে উপায় না পেয়ে ব্লাক লিস্ট করা ঐ নাম্বারেই একটা মেসেজ করলো। মেসেজ টা এমন-
“প্লিজ বর্ষা তুমি আমায় ভুল বুঝিওনা। আমি অন্য কোথাও কিছু করিনি। তুমি আমায় বিশ্বাস করো। আর পারলে আমায় ক্ষমা করে দাও কারন আমার উচিত ছিলো তখনি তোমাকে তোমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। আমি আমার এক ছেলে ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলেছিলাম। যাই হোক প্লিজ তুমি আমার সাথে একটা মিনিট কথা বলো আমি তোমার সব ভুল ভেঙে দিবো।”
এদিকে হিমু ওর ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে বসে লাঞ্চ করছিলো। এমন সময় ওর ফোনে মেসেজ নোটিফিকেশন আসলো। ও পকেট থেকে ফোন টা বের করে দেখে রায়ানে নাম্বার। সাথে সাথে ওর মাথায় আগুন ধরে গেলো। ওর সামনে বসেই বর্ষা খাচ্ছিল। ও সিংহের মতো হিংস্র দৃষ্টিতে একবার বর্ষার মুখের দিকে তাকালো। দুই জনের চোখা চোখি হলো। বর্ষা ঠিক বুঝতে পারলোনা হিমু কেন ঐরকম করে ওর দিকে তাকালো।
তারপর হিমু ঠিক মতো খেতেও পারলোনা। বাকি খাবার রেখেই রুমে চলে আসলো। ওর এমন আচরন বর্ষার কাছে ঠিক সুবিধার মনে হলোনা। ও খুব তাড়াহুড়ো করে খেয়ে রুমের দিকে আসতে লাগলো।
এদিকে হিমু রুমে এসে মেসেজ সিন করেই পুরো শক্ খেয়ে গেলো। রাগে ওর মুখ চোখ লাল হয়ে যেতে লাগলো। ও রায়ানের নাম্বারে সাথে সাথে কল করলো। একবার কল হতেই রায়ান রিসিভ করলো। হিমু কোন কথা না বলে চুপ করে আছে। ওপাশ থেকে রায়ান বলল-
-‘বর্ষা? আমি জানি তুমি খুব রাগ করে আছো। কিন্তু আমায় তো কিছু বলার সুযোগ দাও নাকি?
হিমু যথাসম্ভব নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল-
-‘সরি। আপনি কে বলছেন?’
-‘আপনি কে? আর এই নাম্বার আপনার কাছে কেনো?
-‘আমি হিমু। আমার নাম্বার আমার কাছে থাকবেনা তো কি পাড়া পড়শীর কাছে থাকবে?’
-‘এই নাম্বার থেকে তো গতকাল রাতে আমার গার্লফ্রেন্ড বর্ষা আমায় কল করেছিল। তাই….
রায়ানের কথা শেষ না হতেই হিমু ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল-
-‘ওয়েট। কি বললেন বর্ষা?’
-‘জ্বী!’
-‘সরি বাট বর্ষা তো আমার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী।’
-‘ক্যামনে?’
-‘গত দুই দিন হচ্ছে পারিবারিকভাবে ওর সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তবে হ্যাঁ, আমি আপনার সাথে আমার অনেক কথা ছিলো! যদি আপনি চান সাক্ষাতে কথাগুলো বলতে চাই!’
রায়ানের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। এতো বড়ো একটা পার্টনার অল্পের জন্য হাত ছাড়া হয়ে গেল। ওর খুব আফসোস হতে লাগলো! অন্তত মিথ্যে বিয়ে করেও ওর সাথে কিছু করা যেতো। সেটাও সে করতে পারলোনা। তার আগেই বর্ষা ওকে ফুল ডোজ দিয়ে দিলো। রায়ানের খুব রাগ আর জিদ হতে লাগলো। সে মনে মনে বর্ষার উপরে প্রতিশোধ নিতে চাইলো। তাই একটু পর ই হিমুকে বলল-
-‘ঠিক আছে। আমি মিট করতে রাজি আছি। তবে তার আগে একটা শর্ত আছে!’
-‘কি শর্ত বলুন?’
-‘আমি বর্ষারসাথে এক মিনিট কথা বলতে চাই!’
-‘ওকে লাইনে থাকুন!’
হিমু ফোন টা হোল্ড করে বর্ষাকে ডাকতে লাগল। এতোক্ষণ বর্ষা আড়ি পেতে হিমুর সব কথাই শুনছিল। ও এটাও বুঝতে পেরেছিলো যে হিমু কার সাথে কথা বলছীলো। হিমু ওর নাম ধরে ডাকতেই ও খুব দ্রুত পায়ে রুমে ঢুকে পড়লো। যাতে হিমু ভাবে বর্ষা ওর ডাক শুনেই দুরে কোথাও থেকে চলে আসলো।
বর্ষা হিমুর সামনে যেতেই হিমু ওর হাতে ফোন দিয়ে বলল রায়ান ওর সাথে কথা বলতে চায়। বর্ষা কিছুটা ইতস্তত করতে করতে ফোনটা কানে ধরে বলল-
-‘হ্যালো….
-‘Congratulation!! আশা করি অনেক সুখে আছো! কিন্তু কাজ টা কি তুমি ঠিক করলে? না জানি এর মুল্য তোমায় কিভাবে দিতে হয়!’
বলেই রায়ান লাইনটা কেটে দিলো। বর্ষা ওর কথা শুনে জাস্ট একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ফোনটা হিমুর হাতে দিলো। হিমু অবাক হয়ে গেলো। যাকে কিনা ও জীবন দিয়ে ভালোবাসে আজ তাকেই আমার জন্য হারিয়ে ফেললো। তবু এতোটা নরমাল হয়ে হাসলো কিভাবে?
হিমুর কমলা রঙের গায়ের বর্ণ নিমিষেই লাল হয়ে গেল। চোখ দিয়ে আগুন ঝরতে লাগলো। বর্ষা এহেন অবস্থাতেও একটুও বিচলিত হলো না। যা হিমুর টেনশন বেড়ে যাওয়ার আর একটা কারন।
হিমুর ফ্যামিলির সবাই বর্ষাকে খুব আদরে রেখেছে। এতো সুন্দর পুতুলের মতো একটা বউকে কে না আদরে রাখে? বর্ষাও খুব অল্প সময়ের মধ্যে সবাইকে আপন করে নিয়েছে। ও সবার সাথে এতোটাই মন খুলে কথা-বার্তা, হাসি-ঠাট্টা করে যে দেখে বোঝার উপায় নেই ওর অমতে বিয়েটা হয়েছিলো।
বর্ষা ওর ফ্যামিলির সকলের সাথেও খুব নরমালি ভাবে কথা বলে। সবাই যেনো হাফ ছেড়ে বেঁচেছে ওর এভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়া দেখে।
রাতে বর্ষা বেডে শুয়ে পড়লো আর হিমু সোফায়। রায়ানের সাথে কথা বলার পর থেকেই হিমুর মাথা গরম হয়ে আছে। ও চাইলেও আর আগের মতো নরমাল ভাবে বর্ষার সাথে মকথা বলতে বা মিশতে পারছেনা। বর্ষাও সেটা আন্দাজ করতে পেরে চুপচাপ হয়ে আছে।
হিমু রাতে রায়ানের সাথে মেসেজ করে ডেট আর জায়গাটা ফিক্সড করে ফেলল। তারপর ফোন চাপাচাপি করতে করতেই ঘুমিয়ে পরলো।
ঘুম ভাঙলো মাঝরাতে বর্ষার হাতের ছোঁয়া পেয়ে। ওর দুই গালে বর্ষা হাত রেখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে লাইট অন করা ছিলো। হিমু চোখ মেলাতেই বর্ষা ওর হাত দুটো হিমুর গাল থেকে সরিয়ে নিলো। হিমু যতোটা অবাক হলো তার চেয়েও বেশি রাগান্বিত হয়ে বলল-
-‘কি হচ্ছে এসব?’
-‘কেনো তুমি বুঝতে পারছো না?’
-‘তুই আমায় তুমি তুমি করে বলছিস ক্যান?’
-‘তো কি তুই তুই করে বলবো? স্বামীকে কেউ তুইতুই করে বলে?’
-‘কেউ না বলুক, তুই বলবি! আর এখন আমায় বিরক্ত করিসনা প্লিজ একটু শান্তিতে ঘুমাতে দে!’
হিমু গতকাল সারারাত জেগে ছিলো। ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল কিন্তু সেই ঘুম দিয়ে রাতের ঘুমের ঘাটতি মেটেনি। ও বর্ষাকে কথাটা বলেই আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
বর্ষা হিমুর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। কি অপরূপ লাগছে ওকে দেখতে। হিমু অনেক বেশি লম্বা। ছিপছিপে শরীর। ভরাট ঠোঁট। গভীর তার চোখের চাহনি। ধনুকের মতো জোর ভ্রু। ও হাসলে যেনো মুক্তো ঝরে। ওকে দেখলেই মনে হয় খুব সযত্নে সৃষ্টিকর্তা ওকে তৈরি করেছে।
ওর কপালের উপর পরে থাকা চুল গুলো বর্ষা সরিয়ে দিতে দিতে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল-
-‘আমি তোমার ছোঁয়া খুব মিস করছি।’
হিমু খুব ক্লান্ত হয়ে ছিলো। একে তো রাত জাগা তার উপরে আবার টেনশন। ও বর্ষার হাত দুটো চেপে ধরে বলল-
-‘প্লিজ আমায় বিরক্ত করিসনা। একটু শান্তিতে ঘুমাতে দে।’
কে শোনে কার কথা। বর্ষা খুব জেদি মেয়ে, নাছোড়বান্দা! ও হিমুর পার্শে কোন মতে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কিস করতে লাগলো।
প্রথম প্রথম হিমু ওকে বাধা দিলো। তারপর বিরক্ত হয়ে উপায় না দেখে ডুব দিলো বর্ষার মাঝে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই বর্ষা ফ্রেস হলো। তারপর শাশুড়ির সাথে রান্না-বান্না করতে লাগলো।
আজ বিকেলে রায়ানের সাথে হিমুর দেখা করার কথা ছিলো। হিমু যথাসময়ে ফিক্সড জায়গায় এসে ওয়েট করছে। একটু পর রায়ান কে কল দিলো কিন্তু রায়ান রিসিভ করলোনা। পরপর কয়েকবার কল করলো। তবু রায়ান একবারও রিসিভ করলো না। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলো। রায়ানের কোন খবর নেই। রাগ করে হিমু বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে ধরলো। বাইক স্টার্ট করতে যাবে এমন সময় রায়ানের নাম্বার থেকে কল আসলো।
হিমু রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে এক মহিলা কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল-
-‘বাবা কে তুমি? রায়ানের নাম্বারে এতোবার ফোন দিচ্ছো কেনো?
-‘আমি হিমু! আপনি কে? আমার সাথে আজ ওর দেখা করার কথা ছিলো!’
-‘মহিলা টি এবার কান্না করে ফেলল। একটু পর কান্না থামিয়ে বলল-
-‘বাবা রায়ান তো আর বেঁচে নেই। আজ দুপুরে ও অস্বাভাবিক ভাবে মারা গেছে। আমি ওর ফুফু।’
To be continue……
পরের পর্ব তারাতারি আসছে …………………।
[আগের দুই পর্বে আমি শুধু বর্ষার ভাষ্য দিয়ে গল্পটি লিখেছিলাম।। এই পর্বে সার্বিক ভাষ্য দিয়ে সবার চরিত্র টি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। জানিনা আপনাদের কেমন লাগবে। তবে অবশ্যই কমেন্টে আপনাদের মতামত জানাবেন। গল্প পোস্ট করার পর আমি পেজ,আইডি,গ্রুপ সব জায়গার কমেন্ট বারবার করে পরি। কারন আপনাদের মতামতের উপর নির্ভর করেই আমি আমার গল্পটি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ধন্যবাদ]