কেউ আত্নহত্যা করলে বা অপঘাতে মরলে কি তার আত্না সত্যি দেখা যায়…???
এক জায়গায় যাচ্ছিলাম।
পথে একটা বিশাল বট গাছ চোখে পড়লো।
রিক্সা যে চালাচ্ছিল সে বললো;রাতের বেলা এই গাছের নিচ দিয়ে কেউ যায় না…!!!
জিজ্ঞাসা করলাম কি জন্য…???
কয়েক বছর আগে এক ছেলে এই গাছে গলায় দড়ি দিয়ে মারা যায়।
এরপর থেকে মাঝেমাঝেই নাকি
এই গাছের আশেপাশে রাতের বেলা সে
ছেলেকে দেখা যায়…!!!
এরকম আত্না দেখার কাহিনী প্রায় শোনা যায়।
আসলেই কি মৃতু মানুষের আত্মাকে দেখি আমরা…???
না অন্য কিছু…???
এর উত্তর জানতে হলে আগে জানতে হবে
মানুষ মারা যাওয়ার পর আসলে কি হয়…!!!
মানুষ যখন মারা যায়;তার শরীর থেকে রুহ বা আত্মাকে আল্লাহর নির্দেশে মালাকুল মউত বা
আজরাঈল(আঃ) বের করে নিয়ে যায়।
মৃত্যুর পর ঈমানদারদের রুহকে ইল্লিন ও
পাপীদের রুহকে সিজ্জিন নামক জায়গায় নিয়ে আমলনামা সংরক্ষণ করা হয়। এরপর রুহকে কবরে ফিরে
দেওয়া হয় সওয়াল জবাবের জন্য।
মৃত্যুর পর এভাবেই দুনিয়ার জীবনের সমাপ্তি ঘটে…!!!
আর পরকালের জীবনের শুরু হয়।
মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত ও হাশরের বিচারের আগ
প্রর্যন্ত সময়টাকে বলা “আলমে বারযাখ”…!!!
মৃত্যুর পর থেকে আত্নার অবস্থান এই বারযাখেই হয়।
এখান থেকে আর
ফিরে আসার সুযোগ নেই…!!!
তাই কনো ব্যক্তি মারা গেলে দুনিয়ার সঙ্গে
তার সম্পর্ক চিরস্থায়ীভাবে শেষ হয়ে যায়। তার আত্না আর কখনোই পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে না…!!!
আল্লাহ বলেনঃ যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে;তখন সে বলে হে আমার পালণকর্তা…!!!আমাকে
পুণরায়
(দুনিয়াতে )প্রেরণ করুন।যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি;যা আমি করিনি…!!! কখনই নয়;এ তো তার একটি
কথার কথা মাত্র।তাদের সামনে থাকবে বারযাখ
পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত”।(সূরা- মুমিনুন:আয়াত; ৯৯-১০০)…!!!
আত্না যদি মৃত্যুর পর পৃথিবীতে ফিরে না-ই
আসতে পারে;তাহলে অনেকে মৃত্যু মানুষকে যে দেখে বলে দাবী করেন;তারা আসলে কাকে দেখেন…???
হ্যাঁ,সত্যি সত্যি অনেকে মৃত্যুর পরেও তাকে
দেখেন।তবে তারা মৃত্যু ব্যক্তিকে দেখেন না;
দেখেন তার রুপকে।আর সে রুপ নেয় জ্বীন।
প্রশ্ন আসতে পারে;জ্ববীন কেনই বা মৃত্যু
ব্যক্তির রুপ নিবে…???
প্রত্যেক মানুষের সাথে দুজন ফেরেশতা থাকে।ফেরেশতা ছাড়াও একজন জ্বীন থাকে;এই জীনকে ক্বারিন জ্বীন বলা হয়।
প্রসঙ্গত বলা উচিত;শয়তান জ্ববীনদেরই একজন।
তবে সব জ্বীন শয়তান না।
আল্লাহ বলেনঃআর যখন আমি ফেরেশতাদের বলেছিলাম;তোমরা আদমকে সিজদা কর।অতঃপর
তারা সিজদা করল,ইবলীস ছাড়া।সে ছিল জ্বীনদের
একজন।
(সূরা কাহফ;আয়াত-৫০)…!!!
এই ক্বারিন জ্ববীন হল একটা শয়তান জ্বীন;যার কাজই
হল সবসময় মানুষের সাথে থেকে তাকে
কুমন্ত্রণা দেওয়া। সব মানুষের সাথেই এই জ্ববীন রয়েছে, এমনকি আমাদের নবী (সা) এর সাথেও ছিল।
তবে আল্লাহর বিশেষ রহমতে শুধুমাত্র নবী (সা) এর ক্বারিন
জ্বীনই
ছিল ভাল জ্বীন।
রাসুল (সা) বলেনঃতোমাদের প্রত্যেককে
জ্ববীনদের
মধ্য হতে একজন সঙ্গী দেয়া হয়েছে।
সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেনঃএমনকি আপনাকেও ইয়া
আল্লাহর রাসুল (সা)…???
তিনি বলেন, “হ্যাঁ,তবে এখন
সে আমাকে শুধু ভাল করতে বলে।
(সহিহ মুসলিম)…!!!
একজন মানুষের সাথে সবসময় সাথে থাকায়;এই
ক্বারিন জ্বীন সে মানুষটির নাড়ি নক্ষত্র; সকল কাজ কর্ম সম্পর্কেই অবগত থাকে।
কোন গণক বা ফকিরের কাছে গেলেন।
আপনাকে দেখেই তিনি বললেন,”তুই গত সপ্তাহে এই কাজ করেছিস।
আপনি অবাক হয়ে গেলেন,সত্যি তাই তো; আমি এই কাজই করেছিলাম।
কিন্তু আসলে ফকির বা গণকের এসব জানার ক্ষমতা নেই।তারা সেই মানুষটার ক্বারিন জ্ববীনের সাথে
যোগাযোগ করে এর মাধ্যমে জেনে বলে
দেয়।
তবে গায়েবি বা অদৃশ্য খবরগুলো জানার ক্ষমতা
একমাত্র আল্লাহ ছাড়া মানুষ-জ্বীন কারোরই নেই।
সুলাইমান (আ) এর মৃত্যুর অনেকদিন পরেও
জ্বীনরা
গায়েবিভাবে বুঝতে পারেনি তিনি মারা গেছেন
কি না;যতক্ষণ না উইপোকার কারণে লাঠি ভেঙ্গে তিনি পরে যান।
যারা শয়তানের পূজারি হয়;তাদের বিভিন্ন কাজে শয়তান সাহায্য করে।যাতে তাদের এগুলোকে
কারামতি বা বুজুর্গের কাজ মনে করে মানুষ তাদের
ভক্ত হয়ে যায় ও শয়তানের পথে তারাও চলতে শুরু করে।
জ্বীনদের কিছু বিশেষ ক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্য
আছে।
এর একটি হল তারা মানুষের রুপসহ যেকোনো প্রাণীর রুপ
নিতে পারে(শুধুমাত্র রাসুল (সাঃ) এর রুপ নিতে পারেনা)।বদরের যুদ্ধে শয়তান সুরাকা বিন মালিকের রুপ
নিয়ে এসেছিল।তাছাড়া অদৃশ্য থেকেও জ্বীনরা
বিভিন্ন কথা বলতে পারে বা শব্দ করতে পারে।
তবে জ্বীনরা কখনোই তাদের আসল রুপ
(যেরুপে
আল্লাহ তাদের সৃষ্টি করেছেন)সে রুপে
মানুষের সামনে আসতে পারে না।
কেউ যখন আত্মহত্যা করে বা মারা যায়, তার
ক্বারিন জীন সঙ্গীহারা হয়ে যায়।তখন সে
মাঝে মাঝে সে ব্যক্তির রুপ নিয়ে চলাফেরা করে।এমনকি কখনও কখনও সে মৃত্যু ব্যক্তির রুপে কারো
সামনে এসে বিভিন্ন কথাও বলে।
প্রত্যেক মানুষেরই ক্বারিন জ্বীন সে মানুষ
সম্পর্কে তার সব কিছুই জানে।তাই অনেক সময় মৃত্যু ব্যক্তির
রুপ নিয়ে এসে এমনভাবে কথা বলে বা এমন তথ্য দেয়;
তখন মনে হয় সত্যিই মৃত্যু ব্যক্তিটির আত্মাইএসেছে।
শুধু ক্বারিন জ্ববী নয়;অনেক সময় অন্য শয়তান
জ্বীনও মৃত্যু মানুষের রুপ নিয়ে আসে। যেকোন শয়তান
জ্বীনের উদ্দেশ্যই হয় মানুষকে কষ্ট দেওয়া,
ভয় দেখানো,মানুষকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করে বিশ্বাসকে ভিন্নপথে নিয়ে যাওয়া।
কোরআন হাদিস অনুযায়ী মৃত্যুর পর আত্মা কখনোই
পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে না।এটা বিশ্বাস করাই ঈমান।অথচ শয়তান জ্বীন মৃত্যু ব্যক্তির রুপ
ধরে এসে মানুষের মধ্যে আত্না ফিরে আসার ভ্রান্ত বিশ্বাস ঢুকে দেয়।
তবে বাস্তবে জীনকে মানুষ খুব খুব খুব কম
দেখে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ ভুল দেখে বা
কল্পনায়
মৃত্যু মানুষকে দেখে;যাকে হ্যালুসিনেশন বলে।
শয়তান সব সময় মানুষকে ধোঁকা দেওয়ায় লিপ্ত
থাকে।শয়তান জ্বীন সবসময় দুর্বল মানুষদের উপর
প্রভাব বিস্তার করতে ও ভয় দেখাতে পছন্দ
করে।এই
জন্য আল্লাহর উপর বিশ্বাস শক্তিশালী করতে হবে ও
সবসময় একমাত্র তাঁর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে…!!!
আল্লাহ সবাইকে বোঝার তাওফিক দান করুক;সকলের ঈমানকে মজবুত করুক…!!!
আল্লাহুন্মা আমিন…!!!
………………………………
আপনার লেখা সরাসরি আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের এডমিনগণ আপনার লেখা যাচাই বাঁচাই করে আমাদের ব্লগে মূল পাতাই আপনার লেখাটি প্রকাশ করবেন ।