দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে ঘরে বসে আছি।
হুড়মুড় করে মা আর ভাবি ঘরের ভিতর ঢুকলো। হাতে একটা শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে মা বলল,
একটু পর ছেলে পক্ষ তোমাকে দেখতে আসবে। ভালো মেয়ের মত এগুলো পরে নাও।
পারবেতো নাকি বউমা কে রেখে যাবো?
আমি মাথা নাড়িয়ে বুঝালাম যে পারবো। ভাবি বললো,
এবার আর কোনো সিনক্রিয়েট করো না দয়া করে। এই ছেলেটা বড় লোকেরই ছেলে।
নিজিস্ব বিজনেস আছে।
গাড়ি বাড়ি সব আছে।
ভাবির কথাটা শুনে খানিকটা অবাক হলাম আমি। আমার মত মেয়ের জন্য এত বড় ঘরের ছেলে কিভাবে ম্যানেজ করলো তারা।
নাকি লোকটার কাছে সব কিছু লুকিয়েছে।
তোমার ব্যাপারে ওকে কিছু জানানো হয়নি।
শুধু একটা ছবি পাঠিয়েছিলাম।
ছবি দেখে তোমাকে পছন্দ হয়েছে তাই আজকে দেখতে আসছে। (মা)
আমি ভদ্র মেয়ের মত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম।
মা আর ভাবি বাইরে বের হয়ে গেল।
তারা নিজেদের ভিতর কথা বলতে বলতে গেলো,
“আপদটাকে এবার ভালোই ভালোই বিদায় করতে পারলে যেন বেচে যায়। ২৫ বছর বয়স হয়ে গেলো এখনো বিদায় করাতে পারলাম না।
এই ছেলে যদি না রাজি হয় ওকে বিক্রি করে দেব, আপদ একটা। “
মায়ের মুখে এমন শুনে একটুও কষ্ট লাগেনি।
নিজের মা না হলে যা হয়। তাই বলে সৎ মা কি এতটাও খারাপ হয় যে মেয়েকে পতিতালয়েও দিয়ে আসতে চাই।
হয়তো ভাইয়া আমাকে খুব ভালোবাসে বলে এটা আর সম্ভম হয়নি।
নাহলে এতোদিনে আমার নামের পাশে বেশ্যার তকমা লেগে যেত।
আমার মা ছিলো বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী।
আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে আমার মা মারা যায়।
জন্মের ৩ বছর পর বাবাও মারা যাও।,
পঁচিশটা বছর ধরে ভাইয়া আমাকে আগলে রেখেছে। ছোটো বেলায় আমাকে মারলে ভাইয়া আমার হয়ে মায়ের সাথে ঝগড়া করতো বলে মা তাকেও মাইর দিতো।
ছেলে পক্ষ ড্রয়িংরুমে বসে আছে ভাইয়া আর মা তাদের সাথে গল্প করছে, ভাবি রান্নাবান্না করছে। অবশ্য এবাড়িতে রান্নার কাজ আমিই করি এটা অবশ্য মা বাধ্য করেনি। নিজের ইচ্ছাতেই করি।
কিন্তু আজকে ভাইয়ার বারন থাকাই রান্না করিনি।
একটু পর ভাইয়ার ডাক পড়লো,
রুহি এদিকে আয়।
চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে ওনাদের সামনে গেলাম। সবাইকে চা দেওয়া শেষ হতে।
ছেলের মা বললো, “তুমি আমার পাশে বসো মা”
আমি ওনার পাসে বসতে কপালে চুমু খেলেন। এই ছোয়াটা যেন আমার নিজের মা দিচ্ছে।
মনটা ভরে যাচ্ছে। বললো,
কি লক্ষি মেয়ে।
একেই আমার বউমা হিসেবে চাই। তুইকি বলিস আবির?
এবার বুঝলাম ছেলের নাম আবির।
আড় চোখে ওনার দিকে তাকালাম, মনে হচ্ছে কোনো রাজকুমার।
কিন্তু আমার কপালে এতো সুখ নেয়।
আমার বিষয়ে যখন জানতে পারবেন তখন ওনারাও বাকি সবার মত করে মুখ ঘুরিয়ে নেবেন।
ওনার চোখে চোখ পড়তেই লজ্জা পেলাম।
আমার দিকে একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়েই আছেন।
ওনার ওই দৃষ্টিতে আমার মনের ভিতর ঢেও খেলে যাচ্ছে। এটাকে হয়তো বলে প্রথম দেখায় প্রেম।
কিন্তু আমাকে তো প্রেমে পড়া যাবে না। প্রেমে আমাকে পড়তে নেয়।
উনি কিছু বলছেন না দেখে এবার ওনার বাবা বললেন,
কিরে আবির কিছু বললো।
অহ, হ্যা হ্যা।
কি হ্যা হ্যা? তুইকি রাজি আছিস?
তোমাদের পছন্দই আমাদের পছন্দ।
ঠিক আছে।
আন্টি এবার আমার কপালে আরো একটা চুমু খেয়ে আমার মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
আমাদের কোনো আপত্তি নেয়। এখন আপনাদের মতামত আর মেয়ে মতামত দিন।
মা বললো,
আমরাও রাজি এখানে আর ওর মতামত লাগবেনা।
কিন্তু আবির বললো,
একসাথে হবো যেহেতু আমরা তাই আমাদের নিজেদের মতামতই প্রাধান্য পাবে। আমি ওনার সাথে আলাদা ভাবে কথা বলতে চাই।
মা ওনাকে নিয়ে আমার রুমে নিয়ে যেতে বললো। আর চোখের ইশারায় এটা বুঝালো যাতে কোনো কাহিনি না করি।
ঘরি উনি খাটের উপর বসে আছে উনি। আমি দাড়িয়ে।
জানেন মানুষ যে এতো সুন্দর হয় আপনাকে না দেখলে বুঝতামই না। আপনাকে আমার ভালো লেগেছে।
ভালোবাসতেও ইচ্ছা করছে।
আপনি কি অনুমতি দিবেন?
জানি একটু অবাক হচ্ছেন যে এক দেখাই কিভাবে এতো দুর আগানো সম্ভব।
কিন্তু আমার উত্তর হলো আমি এক দেখায় আপনাকে পছন্দ করিনি।
কাল থেকে এই পর্যন্ত কতবার আপনার ছবি দেখেছি তা নিজেই জানি না। এই দেখুন ছবিটা।
এই বলে উনি পকেট থেকে ছবিটা বের করলেন।
আবার বলতে লাগলেন,
আপনি রাজি সেটা আপনার চোখমুখ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে।
তাই আর কথা বলে লাভ নেয় চলুন নিচে যাওয়া যাক।
আমি রাজি উনি বুঝলেন কিভাবে।
তাছাড়া আমার বিষয়ে তো ওনাকে জানানো লাগবে। সেটা আর কিছুই হলো না।
সাতদিন পর বিয়ের দিন ঠিক করা হলো।
ওনারা বেশি দেরি করবেন তাই এতো তাড়াতাড়ি দিন ঠিক করা।
সাতদিন পর,
আজকে আমার বিয়ে হয়ে গেলো।
এই সাতদিনে আবিরের সাথে দেখা করতে চেয়েছি মা আর ভাবি সেটা করতে দেয়নি।
মা আর ভাবির কাছথেকে বিদায় নেওয়ার সময় একটুও কষ্ট হয়নি। কিন্তু ভাইয়ার সামনে নিজেকে সামলানো যায়নি খুব কান্না করেছিলা।
আবির খুব ভালো ছেলে তোকে খুব ভালো রাখবে।
ভাইয়ার এই কথাটা শুনে কেমন জেনো লাগছিলো। ওনাকে তো আমার সমস্যার কথা জানানোই হলো না। যখন জানতে পারবে তখন তো আমাকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিবে ঐ বাড়ি থেকে।
গাড়িতে বসে এসব ভাবছিলাম।
আবির ফিস্ফিস করে কানে বললো,
তুমি যা ভাবছো তার কিছুই হবেনা।
আমি খুব অবাক হলাম। উনি আমার মনের কথাও পড়ে ফেললো?
বাসর ঘরে বসে আছি। কয়েক মুহুর্ত পর উনি ঘরে প্রবেশ করে। আমাকে এসভ ভারি কাপড়চোপড় পাল্টে আসতে বললো।
কাপড় চেঞ্জ করে একটা সুতি শাড়ি পড়লাম।,
ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখলাম উনি হাসি মুখে দাড়িয়ে আছেন।
আমাকে খাটে বসতে বলে উনি হঠাৎ আমার কোলে মাথা রেখে সুয়ে পড়লেন।
স্বামী বলে কথা কিছু বলাও গেলো না। আমি টেবিলে হাত বাড়িয়ে আমার মোবাইলে টাইপ করতে লাগলা।
“আপনি আমার বিষয়ে কিছুই জানেন না। আমি একজন বোবা মেয়ে কিন্তু কানে শুনতে পারি। জন্মগতভাবেই কথা বলতে পারিনা। বিয়ের আগেই আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছি কিন্তু আমার বাসার কেও আপনার ফোন নাম্বার আমাকে দেইনি। এখনতো আমাকে তো ডিভোর্স দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেয়।”
ফোনটা ওনার হাতে দিতেই রেগে গেলেন।
উঠে বসে ঠাস করে একটা চড় মারলো আমায়।
তুমি আস্তো একটা ঠকবাজ। কিভাবে পারলে এমন্টা করতে।
ওনার কথাটা শুনে কান্না আসলো না।
আসলেই আমি ঠকবাজ।
খুব চেষ্টা করলে ওনার নাম্বারটা হয়তো জোগাড় করেই ফেলতে পারতাম।
তুমি কথাটা বলতে পারোনা এটা আমি, মাবাবা আমরা সবাই জানি। তোমাকে যেদিন দেখতে যাবো সেদিনই তোমার ভাইয়া এগূলো আমাকে জানিয়ে ছিলো।
আচ্ছা রুহি, কথা বলতে পারাটাই কি সব ভালোবাসার কোনো মুল্য নেয়? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি রুহি। তাহলে এর ভিতর বোবা কথাটা কেন আসবে। আমি বলবো আর তুমি শুনবা। তাহলেই তো হবে। খুব ভালোবাসি তোমায়।
তখন চড় দেওয়াই আমার কান্না পাইনি। আমি বোবা শুনেও যে সে আমাকে ভালোবেসেছে আমাকে বিয়ে করেছে এটা জান্তে পেরেই যে আমি কান্না করতে লাগলাম। উনি পরম যত্নে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। আমিও ওনার বুকে মাথা রেখে ফুপিয়ে কেদে উঠলাম। তবে কষ্টে না, অতি সুখে। আমি সুখে কান্না করছি।
এই মানুষটা ভালোবাসি খুব ভালোবাসি। ধন্যবাদ তোমাকে ভাইয়া। তুমি আমার সৎ ভাই না, তুমি পৃৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাইয়া।
লেখিকা – রাফিজা আখতার সাথী
……………………………………………………………….
আপনার লেখা সরাসরি আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের এডমিনগণ আপনার লেখা যাচাই বাঁচাই করে আমাদের ব্লগে মূল পাতাই আপনার লেখাটি প্রকাশ করবেন ।