অফিসের জন্য রেডি হবো আলমারি খুলে দেখি অফিসের শার্ট টা জায়গায় নেই। এ নিশ্চয় নেহার কাজ। মেয়েটা প্রায় প্রায় শার্ট বের করে লুকিয়ে রাখে। অফিসের জন্য অনেক টা লেট হয়ে গেছে। নেহাকে একটু আগে খাইয়ে আসলাম কই ওর হাতে তো দেখলাম না। তারমানে গত কালকেই এটা লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
.
– নেহা! নেহা!
ডাকামাত্র উনি এসে হাজির। তবে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে শুধু মুখ টা বের করে হাসছে।
– আমার শার্ট টা কই?
ও সামনে এসে দাঁড়ালো। ওকে দেখে আমার চোখ তো ছানাবড়া।
– আজকে আবার আমার শার্ট নিয়ে লিপস্টিক ভরিয়েছ?
অনেক টাই রেগে গেলাম। একে তো অফিসের জন্য লেট তারউপর ওর এইসব পাগলামি।
আমার উচু গলা শুনে নেহা একটু ভয় পেয়ে গেলো। এখন আর একটুও সময় নেই। নিচে ইভান অপেক্ষা করছে। ওকে স্কুলে দিয়ে আমায় আবার অফিসে যেতে হবে।
নেহা মন খারাপ করে অন্যদিকে ঘুরে বসে আছে। আমি কথা বলতে গেলাম ও সরে বসলো। এখন একদমি সময় নেই এখুনি বের হতে হবে।
-বাবাই জলদি আচো স্কুলে দেলি হয়ে যাবে।
ওই তো ইভানের ও ডাক পড়েছে। ছেলে টাকে সবে কদিন হলো স্কুলে দিয়েছি তাই স্কুলের প্রতি টান টা একটু বেশিই।
-বাবাই তোমাল দেলি হলো কেন? মামুনি কি আজকেও আসতে দিচিলো না?
– না বাবা, মামুনির তো শরীর ভালো না তাই ঔষধ খাইয়ে তারপর আসলাম। যেন আমার ইভান শোনা স্কুল থেকে আসার পর মামুনির সাথে খেলতে পারে।
ছেলেটার আমার এখনো কথা স্পষ্ট ফোটেনি। এইতো সামনে ফেব্রুয়ারি আসলে ৪বছরে পরবে তাও তার কি পাকাপাকা কথা! একটার পর একটা প্রশ্ন করতেই থাকবে আর আমাকে তার উত্তর দিতে হবে।
প্রশ্ন করবেই না বা কেন! সারাদিন একাএকা খেলে, কথা বলার মানুষ পায় না, দিনশেষে আমাকে কাছে পেলেই তার কথার ঝুলি খুলে বসে। আর আমি ও গল্পশ্রোতার মত তার প্রতিটা কথা অবাক হয়ে শুনি। এতে এক প্রকার পরম তৃপ্তি পাই।
ইভানের স্কুলে চলে এসেছি। ওকে দিয়ে এখুনি অফিসে রওনা দিতে হবে। দুপুরে এসে আবার ওকে নিয়ে যেতে হবে। অফিসে জরুরি কিছু কাজ আছে, আজকের মধ্যে শেষ করতে না পারলে বস এর কথা শুনতে হবে।
আর শুনতে হবেই না বা কেন! প্রতিদিন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি, সপ্তাহে দুদিন ছুটি নেই, তাও যে আমায় কোম্পানি তে রেখেছে এটাই অনেক। অবশ্য অফিসের সবাই আমার বাসার অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত। তাই খুব একটা কথার সম্মুখীন হতে হয় না।
অফিসে যতটা সময় থাকি মন যেন বাসায় পড়ে থাকে। নেহা এখন কি করছে, না করছে! ইভান ঠিক আছে তো! নানা চিন্তা যেন মাথায় গেঁথে থাকে।
নেহা কে নিয়ে কেন চিন্তা করছি, সবাই হয়ত তাই ভাবছেন!
নেহা আমার স্ত্রী। এইত ছয় বছরের মত হলো ওকে বিয়ে করেছি। তবে ওর সাথে আমি জড়িত তার অনেক আগে থেকে। আমাদের চার বছরের একটা ছেলেও আছে। তবে ছেলে এবং নেহা দুজনকেই আমাকে দেখাশুনা করতে হয়। কারন আমার স্ত্রী মানুষিক ভাবে অসুস্থ। অনেক চিকিৎসা করিয়েছি, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এখন আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি। আমার ভালোবাসা সত্যি হলে ওকে আমি আমার জীবনে আবার সুস্থ ভাবে পাবো। তবে এখন কিন্তু আমি অসুখী নই। ওর শিশুসুলভ আচরণ ও আমায় পরম তৃপ্তি যোগায়।
আমার নেহা এমন ছিল না। হাসি খুশি চঞ্চল ও দুরন্তপনা স্বভাবের মেয়ে। ওর কিছু কিছু আচরণ এখনো আগের মতই আছে।
এই তো কয়েক বছর আগে ওর সাথে আমার পরিচয়। ভার্সিটির একটা প্রোগ্রামে। নীল শাড়িতে নেহাকে সেদিন স্বর্গের পরীর মতই লাগছিল। প্রথম দেখাতেই ওর প্রেমে পড়ে যাই আমি।
ওকে প্রতিদিন দেখতাম ফলো করতাম কিন্তু কখনো প্রোপোজ করা হয়নি। আমি চেয়েছিলাম ওকে পারিবারিক ভাবে প্রস্তাবের মাধ্যমেই বিয়ে করব। তারপর চুটিয়ে প্রেম করা যাবে।
আমার মাস্টার্স শেষ হয়ে গেলো। কিছুদিনের মাঝেই একটি ব্যাংকে চাকরি ও পেয়ে গেলাম। এর মাঝে অনেক দিন নেহাকে দেখা হয়নি। খোঁজ নেয়া হয়নি।
ভার্সিটি তে গেলাম নেহার কোনো খোঁজ পেলাম না। তাই ওর এক ফ্রেন্ডের থেকে ঠিকানা নিয়ে সরাসরি ওর বাড়িতেই চলে গেলাম। গিয়ে দেখি বাসায় মেহমান। নেহাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে। আমাকে চোখে পড়তেই নেহা ছুটে এলো।
-আপনি এসেছেন? এতদিন কই ছিলেন? এত দেড়ি করলেন কেন? আরেকটু হলেই তো আমাকে এরা নিয়ে চলে যেত।
মেয়েটা এক নিশ্বাসে এতগুলো কথা বলে ফেলল। কথা শুনে মনে হচ্ছিল ও যেন আমারই প্রতিক্ষায় ছিল। সেদিন ওর কথাতে অনেক বেশি অবাক হয়েছিলাম।
সেদিন মেহমান চলে যাওয়ার পর নেহার বাবার সাথে কথা বলে আসি। তারা আমার ফ্যামিলির সাথে কথা বলতে চায়।
পরেরদিন বাবা মা কে নিয়ে গেলাম নেহাদের বাসায়। নেহাকে সেদিন খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল। ওকে বেশ খুশি মনে হয়েছিল।
দু পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়েটাও ধুমধাম করেই সম্পূর্ণ হলো। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাই ছিল সে বিয়েতে। আমাদের বিয়েতে দুপক্ষই খুব খুশি ছিল। তার চেয়ে বেশি খুশি ছিলাম আমি। কারন আমি আমার স্বপ্নের রাণী কে জীবনসঙ্গীনী হিসেবে পেয়েছি।
সেদিন নেহার থেকে জানতে পারি সেও আমায় মনে মনে খুব পছন্দ করত। আমি যে ও কে ফলো করতাম, পছন্দ করতাম ও জানত। তাই আমি যখন নতুন চাকরি তে ব্যস্ত ছিলাম ওকে দেখতে যেতামনা। ও তখন আমায় খুঁজেছিল।
ওর কথা গুলো আমার মনে আরো তৃপ্তি এনে দিয়েছিল। জীবনে যাকে চেয়েছি, সেও আমাকেই চেয়েছে আর আমরা দুজন দুজনকে পেয়েছি। এর চেয়ে ভাগ্যের আর সুখের কি আছে। আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো কাটছিল বিয়ের পরের দিন গুলো।
পরিবারের সবাই নেহাকে খুব পছন্দ করত। সবাই যেন ওকে চোখে হারাতো। আর আমি তো আগে থেকেই দিওয়ানা। খুব সুখে শান্তিতে দিন গুলো যাচ্ছিল। বিয়ের ৫ মাস পরেই নেহা কন্সিভ করে। এই সংবাদ টা যেন আমাদের জীবন টাকে আরো বেশি আনন্দময় করে তুলেছিল। বাবা মা প্রত্যেকে খুবই খুশি হয়েছিল। আমি আর নেহা তখন থেকে বাবুকে নিয়ে নানা পরিকল্পনা করতাম। ছেলে হবে না মেয়ে! বাচ্চার কি নাম রাখবো! কার নামের সাথে মিল রেখে রাখব! আরো নানা কিছু। এই আনন্দের কোনো সীমা ছিল না যেন।
বিয়ের পর তখন নতুন চাকরি তেমন ছুটি ও পাইনি তাই নেহাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতেও যাওয়া হয়নি। তাই বাসার সবাই ঠিক করল কটা দিন আমাদের কে ঘুরে আসার জন্য। আমরা কক্সবাজার যাওয়ার প্লান করলাম।এখুনি সময় কদিন পর নেহার চলাফেরায় সমস্যা হবে তাই নেহাও রাজী হয়ে গেলো। আমরা ঘুরতে গেলাম। খুব প্লান করে গেলাম অনেক জায়গায় ঘুরব, অনেক অনেক শপিং করব, বাবুর জন্য কিনব কিছু। কিন্তু এত সুখ যে সবার কপালে সয় না। আমাদেরো তাই হলো।
দু তিন দিন থাকার পর একদিন সন্ধায় নেহা বলছিল চলো না বীচে যাই। আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল। তাই নেহাকে বললাম তুমি যাও। এ কথা শুনে ও একা রাগ করে বের হয়ে গেল। ঘুমের তালে শুধু বলেছিলাম দূরে যেওনা যেন। এতই ঘুমে মশগুল ছিলাম যে রাত কটা বাজে খেয়ালই ছিল না।
হটাত জাগা পেয়ে দেখি নেহা নেই। ঘড়িতে রাত ১১ টা বেজে গেছে। ও কোথায় গেলো। পুরো ফ্লাট খুঁজে দেখি নেই। হোটেলের মেনেজার এবং সবাই কে বললাম সবাই বলল সন্ধ্যায় বের হওয়ার পর মেডামকে আর দেখিনি। আশেপাশে সব জায়গা খুঁজে ও নেহাকে কোথাও পেলাম না। খুব চিন্তা হচ্ছিল, ওর ফোন টাও ওফ। নিজের উপর খুব রাগ লাগছিল কেন ওকে একা যেতে দিলাম। সবাই কে খোজার জন্য দিয়ে পাঠালাম, কেউ কোনো খোঁজ দিতে পারছেনা। চিন্তা যেন বেড়ে গেলো। পাগলের মত ওকে খুঁজে বেড়িয়েছি সেদিন।
ধীরেধীরে রাত গভীর হতে লাগল আমার ভয় করছিল নেহা বিপদে পড়েনি তো। কান্না করছিলাম আর খুজছিলাম কিন্তু সারা রাত খুঁজে ও ওকে কোথাও পাইনি। রাত পেড়িয়ে ভোরের আলো ফুটেছে। খবর এলো জঙ্গলের পাশে একটা মেয়ে পড়ে আছে, পরনের জামা কাপর নাকি ছেড়া। কথা টা কানে আসতেই বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠলো। আমার নেহা নয় তো! পাগলের মতো ছুটে গেলাম। হ্যা এ আমার নেহা। কিন্তু ওর এই অবস্থা কেন?
কোনো রকম নিজের কান্না থামিয়ে ওকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটলাম। ওর জ্ঞান ছিলোনা।
ডাক্তার ওকে দেখে বলল রেইপ কেস। থানায় ডায়েরি করুন তারপর চিকিৎসা দেয়া হবে। আমি সেদিন ডাক্তারের গায়ে হাত তুলেছিলাম। আমার নেহা মরতে বসেছে আর উনি থানায় যেতে বলছে। আমার কান্না ভেঙে পড়া দেখে ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো।
নিজেকে অনেক বেশি অপরাধী মনে হচ্ছিল। আমার কারনে আজ নেহার এই অবস্থা। আমার নেহার পবিত্র শরীর টাকে চিল শকুনে ছিঁড়ে খেয়েছে, নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। নেহা কি আমায় ক্ষমা করবে?
না আমার ভেঙে পড়লে চলবে না। আমার এখন নেহার পাশে দাঁড়াতে হবে। আচ্ছা আমার বাচ্চা টা কি ঠিক আছে?
ছুটলাম ডাক্তারের কাছে। উনি বলল অনেক বেশি রক্তক্ষরণের কারনে বাচ্চা টা নষ্ট হয়ে গেছে। উনি যে বেঁচে আছে এটাই অনেক। তবে উনি মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। ফুল্লি ডিপ্রেসড। আপনার এখন উনার পাশে থাকা দরকার। এই বলে ডাক্তার অন্য কেবিনে চলে গেলো। আমি
কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। আমি কি পাপ করেছিলাম যে আল্লাহ আমায় এত বড় শাস্তি দিলো! আমি এই মুখ নিয়ে কিভাবে নেহার সামনে দাঁড়াবো! আর ওকে কি বা জ্ববাব দেবো!
বাসার সবাই কত আশা করে আছে তাদেরকেই বা কি জ্ববাব দেবো। সেদিন থেকে আজ অব্ধি আমি ভিতরে ভিতরে কুড়েকুড়ে মরছি।
সেদিন সাহস করে নেহার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। ওর জ্ঞান ফিরতে একটা কথায় বলেছিল আমার বাচ্চা ঠিক আছে তো?
আমি ওর কথার উত্তর দিতে পারিনি। আজো পারিনি। সেদিন শুধু অঝরে কেঁদেছিলাম। আজো মনে পড়লে বুক টা ফেটে যায়।
সেদিনের পর থেকে নেহা মানুষিক ভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। ও তারপর থেকে কারো সাথে কথা বলত না। একা একা থাকত। রাতে কেঁদে কেঁদে উঠত। হটাত হটাত পাগলামি শুরু করে দিত।
ঢাকায় ফিরে নেহার এই অস্বাভাবিক আচরণ কেউ মেনে নিতে পারছিল না। প্রথমে আমি ওর রেইপ এর কথা লুকিয়ে রেখেছিলাম। বলেছিলাম পড়ে গিয়ে বাচ্চা টা নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী তে ওকে সাপোর্ট দেয়ার জন্যই বাসায় কথা টা জানাই। কিন্তু হিতে বিপরীত ঘটে। সেদিন থেকে আমার বাসার কেউ নেহাকে মেনে নিতে পারছিল না। তার উপর নেহার এইসব আচরণে সবাই আরো বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি বিন্দুমাত্র হাল ছাড়িনি। কারন নেহার আজকের এই অবস্থার জন্য আমি নিজেকেই দায়ি মনেকরি।
তারপর বাসা থেকে অনেকবার বলা হয়েছিল নেহাকে ছেড়ে দিতে, আরেকটা বিয়ে করতে। কিন্তু আমি পাড়িনি। আমি পাড়িনি আমার দায় এড়াতে। একে দায় বলে না। আমি ওকে আগে যেমন টা ভালোবাসতাম, ওই ঘটনার পরেও ঠিক তেমনই ভালোবাসি। কারন নেহার শরীর টা ধর্ষিত হয়েছে কিন্তু ওর মন তো পবিত্র। যারা এই অপরাধ করেছে খোঁজার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পাইনি। দুনিয়াতে ওদের বিচার না হলেও আখিরাতে ওদের ঠিক বিচার হবে।
বাসার সবাই নেহার সাথে খারাপ ব্যবহার করত যা আমি সহ্য করতে পারতামনা তাই নেহাকে নিয়ে একটি নতুন বাসায় উঠি সংসার সাজাই। কিন্তু সেই সংসারে আমি কর্তা আমি কর্তি। নেহার কোনো কিছুতে মন ছিল না। সে মানুষিক ভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছিল যে আসতে আসতে সে অতীতের অনেক কিছুই ভুলে যায় অনেক টা মানুষিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। সময়ে অসময়ে পাগলামি, একা চুপচাপ, কাছে ঘেষতে দিত না। আবার মধ্যরাতে বুকে মুখ গুজে অনেক কান্না করত। কিন্তু ধীরেধীরে ওর এসব বাড়তে থাকে, আমাকেও আল্লাহ সহ্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
নেহার এই অবস্থা তাই ডাক্তার বলে একটা বেবি নিলে উনি সেরে উঠতে পারেন। তাই করলাম। একবছর পর ও আবার কনসিভ করে। কিন্তু প্রথমবারের মত ওর মাঝে কোনো আননদ নেই। ও যে মা হতে চলেছে সেই বিন্দুমাত্র ফিলিংস ওর ছিল না। আমাদের ছেলে জন্ম নিলো। কিন্তু ও নিজেই জানেনা আমাদের ছেলে হয়েছে। ওর ছেলে। ও বাচ্চাকে দূরে সরিয়ে দিত। কোলে নিত না। ছোট্ট ইভান কে তখন থেকে আমি আদর স্নেহ দিয়ে বড় করে তুলেছি যেমন টা নেহাকে এখনো ছোট বাচ্চার মতই আগলে রেখেছি।
নেহার সব কাজ আমার করে দিতে হয়, এখন আর ওর পাগলামি গুলো তে কিছু মনে হয়না, মাঝেমাঝে রাগ লাগলেও নিজেকে কন্ট্রোল করি এই ভেবে যে ওর এই অবস্থার জন্য আমি দায়ি। আর সব চেয়ে বড় কথা আমি নেহাকে ভালোবাসি। আমি জানি আল্লাহ একদিন ঠিক মুখ তুলে চাহিবেন। আমার নেহাকে সুস্থ করে দেবেন, সেই আশা তেই দিন গুলো পার করছি।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি অনেক বেজে গেছে, ইভান কে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে হবে। অফিসের কাজ মোটামুটি শেষ। বস কে বলে বাকি দিনের ছুটি নিয়ে গেলাম। ইভান কে নিয়ে বাসায় পৌছালাম। আমাদের কে দেখে নেহা টেবিল থেকে গ্লাস মেঝেতে ফেলে দিলো।
দৌড়ে গেলাম এই কাচ দিয়ে আবার ওর হাত কাটবে। ইভান কে ফ্রেস করিয়ে দিয়ে, নেহাকে নিয়ে ঘরে গেলাম। কাজের মেয়ে টাকে বললাম আজকে আমরা বাহিরে খাবো। নেহাকে আমি নিজেই সাজিয়ে দেই। সেই প্রথমদিনের মত একটা নীল জামদানি পরিয়ে, হাত ভর্তি কাচের চুড়ি, কপালে ছোট্ট একটা টিপ। বেশ লাগছে আমার নেহাকে। সেই প্রথম দেখা পরীটার মতই। ইভানকেও রেডি করিয়ে বের হলাম তিনজন। ইভান বলছে মামুনিকে আজকে অনেক চুন্দর লাগচে তাইনা বাবাই।
আমি ওর কথা শুনে হেসে দিলাম।
আজ বেশ স্বাভাবিক লাগছে নেহাকে। সাজুগুজু নষ্ট করছেনা, ইভানকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেনা, অনেক টা শান্ত। এভাবে আমার ভালোবাসা একদিন ওকে ঠিক আমার কাছে ফিরিয়ে দেবে। একদিন আমাকে আর ইভানকে ঠিক কাছে টেনে নেবে ও।
আমি জানি নেহা একদিন ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে। আর যদি নাও বা সুস্থ হয় আমি আমার নেহাকে এভাবেই আগলে রাখব।
কারন ভালোবাসা কোনোকিছুর মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। এটা বিশাল। যার কোনো পরিসীমা নেই। শুধু একে আগলে রাখার ক্ষমতা টা রাখতে হয়।