দ্বিতীয় জন পর্ব ২ ভালোবাসার গল্প

রায়ানকে চরিত্রহীন বলাতে আমার শরীরের রক্ত টগবগ করতে লাগলো। কারন এই তিন বছরের রিলেশনে ওকে কখনোই তেমন কিছু করতে দেখিনি বা শুনিও নি।
মনের অবস্থা বুঝি সবসময় চেহারায় ফুটে ওঠে। হয়তো হিমুও সেটা দেখতে পেয়েছিলো। তাই হঠাৎই ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল-
-‘রায়ানের প্রতি তোর এতো টান দেখে, সত্যিই আমার খুব আফসোস্ হচ্ছে। যদি আমি ওর মতো চরিত্রহীন হতে পারতাম তাহলে আমার কপালেও ওরকম ভালোবাসা জুটতো!’
-‘এতোক্ষণ আমার শরীর টা নিয়ে যে অত্যাচার করলি সেটা কি চরিত্রহীনের মধ্যে পড়েনা?’ – কিছুটা রেগে গিয়ে বললাম।

ও আমার কথা শুনে রাগে হিসহিস্ করে উঠলো-
-‘আমি তোর স্বামী। তোর শরীর নিয়ে আমি যা ইচ্ছে তাই করতে পারি। কিন্তু তুই সেটাকে “অত্যাচার” বলে এটা প্রমাণ করে দিলি যে তোর কাছে স্বামীর চেয়ে প্রেমিকই বড়।’

ও এতোক্ষণ আমার উপর শুয়ে ছিলো। ঐ কথাটা বলার পরপরই ও উপর থেকে নেমে গেলো। রুমে লাইট অন করে, একটা শার্ট পরে নিলো। আমি তাড়াহুড়া করে শাড়িটা ঠিক করে নিয়ে বসে পড়লাম। ও আমার দিকে না তাকিয়েই সোজা রুম থেকে বেরিয়ে যেতে ধরলো। কিন্তু দরজার কাছে যেতেই হঠাৎ থেমে গিয়ে আমায় উদ্দেশ্য করে বলল-

-‘যার কাছে স্বামীর থেকে প্রেমিক বড়, তার কাছে থাকার আমার কোন রুচি নেই!’

কথাটা বলেই ও ঠাস করে মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে চলে গেল। ওর এমন আচরনে আমি মনে মনে খুব অবাক হলাম। কিন্তু হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

যাকগে, তবু বাঁচা গেলো অন্তত। দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিয়ে বিছানায় এসে গা এলিয়ে দিলাম। চোখ বন্ধ করতেই রায়ানের কথা মনে পড়লো। মাথার মধ্যে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো। আচ্ছা রায়ান কি সব কিছু জানার পর আমায় মেনে নিবে??? নাকি রায়ানের কাছে আমি সব কিছু লুকাবো?
নাহ্! ওকে পাওয়ার জন্য আমি যেকোন কিছু করতে রাজি!

এখনই ওর সাথে কথা বলতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু ফোন পাবো কোথায়? আমার ফোন তো হিমু কেড়ে নিয়েছে। অগ্যতা মনমরা হয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।

একটুপরই মনে পরলো হিমু তো যাওয়ার সময় ভুলে ওর ফোনটা রেখে গেছে। ঐ টা দিয়ে এখন নিশ্চিন্তে কথা বলা যেতে পারে। খুশিতে আটখানা হয়ে ওর ফোন থেকে রায়ানের নাম্বারে কল করলাম।

কল হতেই নাম্বার ওয়েটিং দেখালো। পরপর কয়েকবার কল করলাম, কিন্তু বারবারই ওয়েটিং দেখাতে লাগলো।

রাগে ফ্লোরে বসে পড়লাম। রাত সাড়ে তিনটার দিকে ও কার সাথে কথা বলতে পারে? তাও আবার এতো লং টাইম ধরে? একটু পরেই রায়ান কল ব্যাক করলো। আমি রিসিভ করে কোন কথা বলার আগেই ও রাগান্বিত কন্ঠে বলতে লাগলো-
-‘কে ভাই আপনি? এতো রাতে কল দিয়ে ক্যান বিরুক্ত করছেন? দেখতেই তো পাচ্ছেন নাম্বার টা ওয়েটিং! তবু বারবার কল করতে হবে??? আজিব মানুষ তো!!’
ওর কথা শুনে মনে হলো কলটা কেটে দিই। কিন্তু পারলাম না। কান্না জড়ানো কন্ঠে বললাম-
-‘রায়ান আমি বর্ষা! তুমি এতো রাতে কার সাথে কথা বলছিলে?’
-‘ওহ্! তুমি। এইটা কার নাম্বার? দুইদিন থেকে তোমার কোন খবর নেই।’
-‘তার আগে বলো তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?’
ও কিছুটা রাগ করে বলল-
-‘তুমি আমায় সন্দেহ করছো? এই তোমার ভালোবাসা? আমার প্রতি তোমার কোন বিশ্বাস ই নেই।’

ওর কথা শুনে আমার মাথায় চরচর করে রাগ উঠতে লাগলো। রাগে স্পষ্ট ভাবে কথা পর্যন্ত বলতে পারছিলাম না। তবু চাপা গলায় ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললাম-
-‘কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কোন লাভ হবেনা রায়ান। যা বলছি তার উত্তর দিতে পারলে দাও নয়লে রাখো।’
-‘তুমি এতো রেগে যাচ্ছ কে……

ওর কথা শেষ না হতেই লাইনটা কেটে দিলাম। ওর একই কথা ফালতু ভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলতে দেখে খুব রাগ লাগলো। রাগে আমার হাত পা কাঁপছে। ও ভেবেছিলো আমি হয়তো একটু পর ওকে আবার কল করবো। কিন্তু না করাতে ও নিজেই কল দিলো। আমি কল কেটে দিয়ে নাম্বার ব্লাক লিস্টে রাখলাম। মাত্র দুই দিন কথা বলিনি এরই মধ্যেই নাম্বার ওয়েটিং। বাহ্। একটা বার তো খোঁজ নিলোই না বরং নতুন করে একটা জোটাইছে। আজ যদি ওকে হাতে নাতে ধরতে না পারতাম, তাহলে হয়তো সারাজীবন ওর প্রতি আমার অন্ধ বিশ্বাস কাজ করতো।

কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মাথা টলমল করতে লাগলো। শেষ মেশ বেডে গিয়ে শুয়ে পরলাম।

ঘুম ভাঙলো শাশুড়ি মার ডাকে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বেলা দুইটা বাজে। তাড়াহুড়া করে উঠে দরজাটা খুলে দিলাম। আমায় দেখে উনি হেসে বললেন-
-‘কি ব্যাপার বউমা। তুমি বুঝি এতো বেলা করেই ওঠো? তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও। সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে যে!’
-‘ঠিক আছে মা, আপনি যান আমি আসছি!’

গোসল সেরে বেলকনীতে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাতের বেলা এসেছি। ভালোমতো কিছুই খেয়াল করিনি। বিশাল বড় বাড়ির এরিয়া। সবুজে ভরা চারপাশ। সবুজ রং দেখে মনটায় প্রশান্তির ঢেউ বয়ে গেলো।

রুমে এসে চুল শুকাতে লাগলাম আর চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। অনেক সুন্দর ভাবে রুমটা সাজানো গোছানো। একটু পর হিমু আসলো রুমে। আমায় দেখে একটানা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে। তারপর রাগী রাগী ভাব নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করলো। ওর আধা ভেজা চুল দেখে বুঝলাম একটু আগেই ও গোসল করেছে। আমার সাথে কোন কথা না বলেই রুম থেকে চলে গেলো।

আমি রেডি হয়ে কেবল বাইরে যেতে ধরেছি, এরই মধ্যে হিমু হনহন করে রুমে চলে আসলো। এসেই দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল-

-‘তোর এতোবড় সাহস কিভাবে হলো আমার ফোন থেকে অন্য কারো কাছে কল করার?’
ওর কথা শুনে আমি ভয়ে-লজ্জায় চুপচাপ মাথা নিচু করে থাকলাম। আমায় চুপ থাকতে দেখে ও আরো দ্বিগুণ রেগে গিয়ে বলল-
-‘বল তোর এতো সাহস কিভাবে হলো?’
এবারো আমি চুপ। আমার উচিত ছিলো ওর নাম্বার ডিলেট করার। কিন্তু রাগের মাথায় কিছুই খেয়াল ছিলো না।

হিমু দরজার কাছে গিয়ে চেক করে আসলো, ভালো ভাবে লক করা আছে কিনা। তারপর সোজা আমার কাছে এসে আমার মাথার পেছনের চুল মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে বলল-
-‘আমার কথা কি তুই বুঝতে পারছিস না?’
ব্যথা সহ্য করতে না পেরে আমি কান্না করতে লাগলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
-‘প্রেমিকের উপরে তোর এতোটাই টান যে আমার সব অত্যাচার মেনে নিতে পারছিস তবু কোন উত্তর দিতে পারছিস না!’

এবার আর সহ্য করতে পারলাম না। কান্না করতে করতে বললাম-
-‘এবারের মত আমায় ক্ষমা কর হিমু। আমি আর কখনো ওর সাথে কনটাক্ট করবো না।’
আমার কথা শুনে ওর চোখ দুটো রক্তের মতো লাল হয়ে উঠেলো। ও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-
-‘এইসব মিথ্যা অভিনয় তুই তোর প্রেমিকের সাথে করবি আমার সাথে নয় বুঝলি।’
-‘আমি সত্যি বলছি হিমু। বিশ্বাস কর!”

ও এবার আমার কথা শুনে কিছুটা অবাক হলো। আমার চুল ছেড়ে দিয়ে বলল-
-‘কেনো? এক রাতের মধ্যেই কি এমন হলো যে তুই আর ওর সাথে কনটাক্ট করবিনা? নিশ্চয় কোন প্ল্যান করেছিস!’
আমা ওর বাম হাতটা চেপে ধরে বললাম-
-‘আমি কোনই প্ল্যান করিনি হিমু। তুই এবারের মতো আমায় ক্ষমা কর প্লিজ!’

রায়ানের সাথে ঘটে যাওয়া রাতের ঘটনা টা মনে হতেই ভেতরে ঘৃনায় ভরে উঠলো।

হঠাৎ হিমুর হাতের স্পর্শে আমি চমকে উঠলাম। ও দুই হাত দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বলল-
-‘সত্যিই তুই কোন প্ল্যান করিসনি? তাহলে এখন আমি যা চাইবো তুই তা দিতে পারবি?’

আমি কোন উত্তর দিলাম না। কারন আমি নিজেই এখনও দোটানার মধ্যে আছি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যতোটুকু সময়ের দরকার আমি এখনো ততটুকু সময় পাইনি। এরই মধ্যে হিমু আমায় কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শোয়ালো। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ও আমার উপরে শুয়ে আমার কানের কাছে ওর মুখ টা নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললো –
-‘তোকে আমি বলেছিলাম না, তুই আমায় যতো কষ্ট দিবি আমি তার দ্বিগুণ সুদে আসলে তোকে ফেরত দিবো।’

আমি ওকে কোন বাঁধা দিলাম না। ও আমার ঠোঁটে একটা কিস্ করলো। আমি চোখ মেলাতেই দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ও আমার চোখে চোখ রেখে বলল-
-‘কি ব্যাপার তুই আজ কোন বাধা দিচ্ছিসনা যে?’
-‘কোন ইচ্ছা নেই তাই!’
-‘রাগ, অভিমান নাকি নতুন কোন প্ল্যান?’
-‘কোনোটাই নয়। আচ্ছা তুই যে আমার বিরুদ্ধে গিয়ে আমার বাবা মাকে রাজি করিয়ে জোর করে বিয়ে টা করলি, এটা কি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না?’
-‘কিসের বাড়াবাড়ি? আমি তোকে ভালোবাসি। সেখানে তুই অন্য ছেলের সাথে কিছু করলে আমি সেটা কখনোই মেনে নিতে পারবোনা।’
-‘তাহলে তুই যে আমার ভালোবাসাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে দিলি তাহলে আমি সেটা কিভাবে মেনে নিবো?’

ও কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকলো। আমি ওর মুখটা ধরে আমার মুখের দিক করে নিয়ে বললাম-
-‘এখন তুই চুপ হয়ে গেলি কেন বল?

ও তবু চুপ করে রইলো। আমি ওকে শান্ত ভাবে বললাম- -‘আমার কাছে তুই পৃথিবীর সব স্বার্থপর মানুষদের মধ্যে একজন। যে কিনা নিজের সুখ আর স্বার্থের জন্য পশুর চেয়েও বেশি হিংস্র হতে পারে!’

এবারো ও কোন উত্তর দিলোনা। আমি ওর ঠোঁটে কিস্ করতে করতে বললাম-
-‘আমি কিন্তু তোকে ছেড়ে যাবোনা। তুই যেমন নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য যা তা করেছিস, ভেবে নে আমিও তেমনি করবো অথবা তার চেয়েও বেশি।’

হিমু আমার কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লো। আমি দুই হাত দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে ছিলাম। ও আমার হাত দুটো ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। আমি ওর গলা আর বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম-
-‘তোকে তো আমি অনেক বার বলেছিলাম, আমার দেখা সবচেয়ে নিঁখুত সুন্দর ছেলেটা তুই। তখন তো তোকে ফ্রেন্ডের চোখে বলেছিলাম। এখন স্বামীর চোখে তোকে আর অপরূপ সুন্দর লাগছে। তুই জোর করে কিছু করলে সেটা আমি খুব ইনজয় করবো ইউ নো….

To be continue….

পরের পর্ব তারাতারি আসছে …………………।

[একটা সম্পর্কের মধ্যে যখন দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি ঢুকে পড়ে তখন সেই সম্পর্কের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তির মধ্যে নানারকম অন্তর দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই গল্পটা মূলত সেই কেন্দ্রিক। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন]