যৌন নিরাপত্তার একটা প্যাকেট নিয়ে বাসায় যাচ্ছে তানজীব। আজ তার গালফ্রেন্ড আরোহীকে সে ভোগ করবে। অবশ্য এতে আরোহী কোনো রকম বাধা দেয় নি। তিন বছরের রিলেশন তাদের। আর আজই সেই দিন যেদিন যেদিনের জন্য তানজীব এতোদিন অপেক্ষা করেছে। আজ সে অপেক্ষার অবসান ঘটবে। এতোদিনের ইচ্ছা তার পূর্ণ হবে। এসব ভাবতেই তানজীবের মুখে একটা হাসি ফুটে। তাই খুব দ্রুত পা চালিয়ে বাসায় যাচ্ছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সে বাসায় চলে আসে। বাসায় ঢুকে দরজা লক করে দিয়ে নিজ রুমে চলে আসে। রুমে ঢুকতেই তানজীব কিছুটা অবাক হয় এবং খুশিও হয়। কারণ, আরোহী বিছানায় নতুন বউয়ের মত গোমটা দিয়ে বসে আছে।
তানজীব দরজা লক করে আরোহীর দিকে এগিয়ে যায়। তানজীবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে আরোহী একটু নড়েচড়ে বসে ভারী কন্ঠে বলে হঠে..
-” ঠিক সাদিয়ার মত বসে আছি তাই না?”
কথাটা শুনা মাত্রই তানজীবের হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়। চোখ গুলো বড় বড় করে আরোহীর দিকে তাকায়। কারণ, সাদিয়া তানজীবের এক্স গালফ্রেন্ড। যাকে সে আজ সকালেই নিজ হাতে খুন করেছে। কিন্তু সাদিয়ার কথাটা আরোহী জানলো কিভাবে? সাদিয়ার কথাটা তো তার জানার কথা নয়। অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে সে।
-” মানে! কি বলছো এসব?” কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো তানজীব। কথাটা শুনে আরোহী একগাল হাসলো। তারপর শান্ত কন্ঠস্বরে বলে উঠে….
-” কেন! মানে বুঝতে পারছো? তোমার এক্স গালফ্রেন্ডের কথা বলছি। যাকে আজ সকালে তুমি নিজ হাতে খুন করেছো।” কথাটা বলে আরোহী একটা হাসি দেয়।
তানজীব ভয়ে কাঁপছে। কারণ, সাদিয়াকে খুন করতে একটা কাক পক্ষীও দেখেনি। সেখানে আরোহী সবকিছু জানে। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব।
তানজীবকে ডাক দিয়ে আরোহী তার মাথার গোমটা তুলে ফেলে। সেটা দেখা মাত্রই তানজীব একটা চিৎকার দিয়ে দু-হাত দুরে পরে। এতোক্ষণ যাকে আরোহী ভেবে পাশে বসে ছিলো, সে আজ সকালে খুন হওয়া সাদিয়া। তানজীব নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা সে কি দেখছে সে! মৃত মানুষ কি করে ফিরে আসে। আর তার চেহারা কি বিচ্ছিরি অবস্থা। এসিড দিয়ে তার পুরো মুখ জ্বলসানো। দেখে মনে হচ্ছে চামড়াহীন জ্যান্ত কাবাব। সবচেয়ে সাহসী মানুষও তাকে দেখে জ্ঞান হারাবে।
তানজীব উঠে দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার! নিজের জায়গা থেকে নড়তেও পারছে না সে। এমন কি চিৎকারও করতে পারছে না। সাদিয়া তার পাশে গিয়ে বসে রাগী কন্ঠে বলে…..
-” চাইলে এখন যেতে পারবে না তানজীব। কি ভেবেছিলে! আমাকে খুন করে আমার লাশ লুকিয়ে ফেললেই তুমি বেঁচে যাবে? আর রাত হতেই আমার মত অন্য একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিবে!” এতোটুকু বলে সাদিয়া থেমে যায়। তানজীব তাকে কিছু বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার মুখ থেকে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। সাদিয়া তানজীবের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে…
-” কি ক্ষতি করেছিলাম আমি? তোমাকে ভালোবেসে তোমার হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম। এইটুকুই তো। কিন্তু, তুমি কেন এই প্রতিদান দিলে? আমাকে একবার বললেই তোমাকে ছেড়ে দুরে চলে আসতাম। কিন্তু আমার স্বপ্নগুলো এভাবে ভেঙে দেওয়া কি খুব প্রয়োজন ছিলো?” এই কথাগুলো বলে সাদিয়া থেমে যায়। পাশের টেবিলের ফল কাটার ছুড়িটার দিকে তাকাতেই সেটা সাদিয়ার কাছে চলে আসে। তারপর তানজীবের অগ্নিশর্মা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে…
-” একটা সময় তোর গায়ে একটা ছোট একটা টোকা লাগলেও আমার কষ্ট হতো। কারণ, তোকে ভালোবেসেছি। তোকে বিশ্বাস করেছি। কিন্তু তুই প্রতিদান স্বরূপ আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলি। তুই বেঁচে থাকলে এমন অনেকের বিশ্বাস নিয়ে খেলা করবি৷ সুতরাং, তোর পাপের একটাই শাস্তি আর সেটা মৃত্যু।” বলে সাদিয়া ফল কাটার ছুড়িটার দিকে ইশারা করতেই সেটা তানজীবের দিকে যেতে শুরু করে। তানজীব কিছু বলছে কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ হচ্ছে না। এখান থেকে পালাতেও খুব চেষ্টা করছে কিন্তু সে নড়তে পারছে না। ছুড়িটা তার চোখ দিয়ে ঢুকে যায়।
———————–
ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে তানজীব। তানজীবের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। পুরো শরীর ঘেমে ভিজে গেছে। তানজীব নিজেকে তার বিছানায় পেয়ে একটা হাসি দেয় আর অস্পষ্ট সুরে বলে “ধুর স্বপ্ন ছিলো”।
দেয়ালে ঝুলে থাকা ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে রাত নয়টা বাজে। তানজীব বিছানা থেকে উঠে তার বাড়ির পিছনে চলে আসে। সাদিয়াকে যেখানে পুঁতে রেখেছে সে জায়গাটা দেখে কেউ বুঝতে পারবে না এখানে কাউকে পুঁতে রাখা হয়েছে। তানজীব একটা হাসি দিয়ে আবার নিজ রুমে চলে আসে।
হঠাৎ করেই তার ফোনটা বেজে উঠে। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে আরোহীর নাম্বার। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আরোহী মিষ্টি কন্ঠে বলে….
-” জান আমি তোমার বাসায় আসছি। খুব ভালোবাসি তোমাকে। তুমি যা বলবে তাই হবে।” কান্না মিশ্রিত কন্ঠে কথাগুলো বললো আরোহী। তানজীব হেসে প্রতি উত্তরে বললো
-” আচ্ছা এসো। আর আমি না থাকলে দরজা খোলা থাকবে। ঘরে আমার জন্য অপেক্ষা করো।” বলে ফোনটা কেটে দেয়। আরোহী তিনবছরের ভালোবাসা হারাতে চায় না। তাই তো একটু অবহেলাতেই নিজেকে বিলিয়ে দিতে তানজীবের ঘরে আসছে।
রাত এগারোটা,
তানজীব যৌন নিরাপত্তার একটা প্যাকেট নিয়ে বাসায় এসেছে। দরজা লাগিয়ে তার রুমে এসে বিছানায় দেখতেই, ঠান্ডা একটা শিহরণ বয়ে যায় শিরদাঁড়া বেয়ে। তানজীব নিজের হাতে একটা চিমটি কাটে। নাহ সে স্বপ্ন নয় বাস্তবেই আছে। কিন্তু এটা সে স্বপ্ন দেখেছে। হঠাৎ করেই আরোহী ভারী কন্ঠে বলে উঠে…
-” ঠিক সাদিয়ার মত বসে আছি তাই না?”
কথাটা শুনেই তানজীব স্থির হয়ে দাঁড়ায়। তার চোখ গুলো নিজের জায়গা থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। তার স্বপ্ন সত্যি হয়ে এসেছে।
——–সমাপ্ত
লেখাঃ রাফিকুল ইসলাম তাজ
{ ভুলক্রটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা ভালো লাগলে কমেন্টে জানাবেন। বুঝতে না পারলে দুবার পড়বেন।]