সাথী আমার হাতটা থেকে নিজের হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে নেয় আর বলে,
,
-আমি আর তোমার সংসার করবো না সায়ন ভাই। এবার আমাকে বিদায় দাও।
,
– পাচ বছর বিয়ে হয়েছে তোর সাথে, কোনোদিন আদর করে একটা কথা বলেছিস?
,
-ওলে বাবু লে সোনা লে করলেই কি ভালোবাসা দেখানো হয়ে যায়?
,
-মানুষ তার মনের ভাব এভাবেই প্রকাশ করে। আদর মাখা কথা না বললে বুঝবো কিভাবে তুই আমাকে ভালোবাসিস?
,
-দেখো কথা ঘোরাতে ঘোরাতে তুমি অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছো। পয়েন্টে ফিরে আসো তো। আমি আর তোমার সংসার করবো না।
,
-তুই এখন আর কচি খুকি না, যে মনে যা বলবে তাই করবি। এখন তুই কারো দায়িত্ব, কারো অধিকার এটা মাথায় রাখিস।
,
– সে আমার মাথায় আছেই। কিন্তু তুমি আমার বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করো না। সে এখানে আসলে তুমি তার সাথে কথায় বলতে চাইনা।
,
– তুই গাধীই রয়ে যাবি সারাজীবন। সে আমার মামা ছিলো আগে। মামা ভাগ্নের সম্পর্ক মধুর হয়। তবে শ্বশুর জামাইয়ের সম্পর্ক অতোটা মধুর হয়না রে পাগলি। সে আর এখন আমার শ্বশুর তার সাথে যেই ভাবে কথা বললে ভালো হবে আমি সেই ভাবেই বলি।
,
কিন্তু এই পাগল টা কার কথা শোনে? যাবে তো যাবেই।
প্রতিবার রাগ হলে সংসার করবো না বলবে, বাবার কাছে চলে যাবে, আবার সেইদিন রাতেই ফোন দিয়ে প্যানপ্যানিয়ে কান্না করে বলবে, সায়ন ভাই তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসছে না। তুমি একটু আমাকে নিয়ে যাও।
,
গ্রামে মামার বাড়ি থুক্কু শ্বশুর বাড়ি হলে এই একটা সুবিধা। বউ রাগ করে বাপের বাড়ি গেলে ফিরিয়ে আনতে সুবিধা।
,
কিন্তু এইবার তার এই অকারণের রাগটা কেন জানি আমারও খুব বিরক্ত লাগছে। আচ্ছা আপনারাই বলুন তো শ্বশুরের সাথে কি গলা জড়িয়ে ধরে থাকবো সবসময়? মাঝে মাঝে এই পাগলটাকে মন বলে মাথায় তুলে একটা আছাড় দিই।
,
সাথী আবার বলল,
,
-কি ব্যপার আমি চলে যাচ্ছি তুমি কিছু বলছোনা কেন সায়ন ভাই?
,
-কি বলবো তোকে? শুনবি কিছু? যে মেয়েকে নিজের স্বামীকে ভাই বলে ডাকা ছাড়াতে পারলাম না, সে কথা শুনবে আমার? হাও ফানি।
,
– শুনবো না। একশোবার শুনবো না। আমি যাচ্ছি, আর হ্যা এবার তো আমি ফিরবোই না। তাহলে তুমি এক কাজ কইরো। তোমার মেয়ে জন্মালে তাকে নিয়ে এসো। আমি ওকে পালন করতে পারবো না।
,
মেজাজটা বিগড়ে গেল,
-শোন সাথী রাগের মাথায় এমন কথা বলবিনা যেগুলো শুনলে আমারও মাথা বিগড়ে যায়।
একমাস পর মা হবি এসব পাগলামো আর কতো করবি?ওবার তো একটু রেহাই দে আমাকে।
,
– হ্যা রেহাইই তো দেব তোমাকে। আমি গেলাম।
,
এই বলে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিয়ে চলে গেলো সাথী। মা অবশ্য ওকে অনেক বারণ করেছিলো। তবুও সে একটা কথাও শুনেনি।
,
দিন গড়িয়ে রাত হয়ে গেল তাও সাথী একবারও ফোন দিলো না। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। রাতে মা খেতে ডাকলেও আমি ভালোলাগছে না বলে ঘরে চলে আসি।
,
কিছুক্ষণ পর মা খাবারের থালা হাতে করে ঘরে ঢোকে। আমাকে বলে,
– উঠে বস।
,
-আমার খেতে ইচ্ছা করছে না মা।
,
– পাগলিটার জন্য মন খারাপ করিস না। দেখবি কালকে সকালেই চলে এসেছে।
,
– মা তোমার ঐ পাগল ভাইজি কে কেন আমার গলায় ঝুলালে। যে বিষয়ে মানুষ মজা পায় সেই বিষয়ে রাগ করে বসে থাকে।
,
-হাটে হাড়ি ভাঙিয়ে নিসনা। সাথী সাথী করে পাগল হয়ে যাচ্ছিলি সে কথা টা কে বলবে? বিয়ে না দিলে নাকি আত্মহত্যা করবি? তাই তো আমার ভাইজিকে তোর গলায় ঝুলিয়েছি।
,
-মাআআআআআ।
,
-আচ্ছা, আচ্ছা আর কিছু বলছিনা। তুই ভাত খা। আমি তোর গালে তুলে দিচ্ছি।
,
মায়ের জোরাজোরিতে আর না করতে পারলাম না।। মা খাইয়ে দিচ্ছে আর বলছে,
,
-আমার সাথী পাগল না রে, সায়ন। তোকে খুব ভালোবাসে। দেখিস না কেমন রাগ দেখিয়ে চলে গিয়ে আবার রাতে ফোন দিয়ে কান্না করে। তোর কাছ থেকে ভালোবাসা আদায় করে নিতে চায়।
,
-কিন্তু আজকে তো চলে গেছে তোমার ভাইয়ের সাথে ভালো করে কথা বলিনা এই অপবাদ দিয়ে।
,
– তোকে ওটা বলেছে। কিন্তু আসল কারণ অন্যটা। তুই পাশের বাড়ির রিয়ার সাথে হেসে হেসে কথা বলেছিস তাই ও রাগ করে চলে গেছে। যাওয়ার সময় আমাকে বলে গিয়েছে পাগলিটা।
,
-কি? মা তুমিও জানো আমিও জানি রিয়া আমার ছোটো বোনের মত তাহলে বিষয়টা তখন ওকে ক্লিয়ার করে দাওনি কেন?
,
-তোদের এই খুনসুটি দেখলে মনটা ভরে যায় রে। তাই আর ওর ভুল ভাঙাই নি। তাছাড়া কয়েকটাদিন ও ভাইয়ার কাছে কাটিয়ে আসুক। একমাস পর মা হবে আর হয়তো এই খুনসুটি গুলো করতে পারবেনা ভাইয়ার কাছেও এখনকার মত যেতে পারবেনা। আমি ভাইয়াকে বলে দিয়েছি তুই পরসু দিন ওকে নিয়ে আসবি।
,
-আমার বোনেরও তো তোমার ভাইপোর সাথে বিয়ে হয়েছে। কই সে তবে এমন করে না?
,
– কে বলছে তোকে এমন করে না। আজকে সকালে মারামারি করেছে দুইজন। বিচার করে আসলাম দেখিস নি। হাহা। আচ্ছা তুই শুয়ে পড়।
,
মা খাইয়ে দিয়ে চলে গেলো। আমি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম। ড্রয়ার খুলে ছবির এলবাম বের করতে গিয়ে দেখলাম সাথীর মোবাইলটা ড্রয়ারে রয়েছে। হয়তো নিয়ে যেতে ভুলে গেছে।
,
বিয়ের দিনের ছবিতেও ওকেপিচ্চি একটা মেয়ে দেখাচ্ছে । একমাস পর আমার বাচ্চার মা হবে।
,
যাকে দেখে প্রথম বুঝেছিলাম ভালোবাসার মানে। তাই মাকে পাগল করে দিয়েছিলাম যে তার ভাইজিকে বিয়ে করবো। হাহাহা।
ছবি দেখা শেষ হলে এলবামটা মাথার পাশে রেখে শুয়ে পড়লাম।
,
মাঝরাতে ফোনের রিংটোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো।
,
রিসিভ করতেই ওপাস থেকে মামা কথা বলল,
,
-সায়ন, তাড়াতাড়ি এ বাড়িতে আয়। সাথী সিড়ি থেকে পড়ে গেছে।
,
কথাটা শুনে যেন আমি দিশে হারা হয়ে পড়লাম। তাড়াতাড়ি দৌড় লাগালাম মামাবাড়ির উদ্দেশ্যে। মাকে ডাকলাম না এই রাতে। তাড়াহুড়ায় গায়ে শার্ট পরতেও ভুলে গেছিলাম। শুধু প্যান্ট পরেই চলে গেলাম।
,
,
সাথী বিছানায় শুয়ে আছে আমাকে দরজা দিয়ে ঢুকতে দেখেই ব্যস্ত হয়ে ঊঠে পড়তে লাগলো। সবাই ওকে থামালো।
মামা বলল,
,
-রাতে নাকি তোকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখেছে। কাছে ফোন ছিলো না তাই নিচে আমার ঘরের আসতে গিয়ে এই অবস্থা।। আল্লাহর রহমতে উলটো ভাবে পড়েছিলো তাই বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয়নি।
,
আমি সাথীর পাশে বসতেই আমাকে জাপটে ধরলো। মামা-মামি, সাগর ভাই আর সায়মা ঘর ছেড়ে চলে গেল।
সাথির দেহ এখনও থর থর করে কাপছে। আমি ওকে স্বাভাবিক করারা জন্য বললাম,
– এই, আমি ঠিক আছি তো।
,
একটা কথাও বলছেনা চোখ দিয়ে পানি ফেলেহ যাচ্ছে।
,
অনেক্ষণ পর একটু শান্ত হলে বললাম,
,
-ছোট খাটো বিষয়ে রাগ দেখাতে নেয়। এতে বিপদ হতে পারে। দেখনা আজকেই কি একটা বিপদ হতে গিয়েও বেচে গেলি।
,
-তুমি ওই মেয়ের সাথে এমন করে কথা বললে কেন? দাত বের করে!
,
-পাগল মেয়ে বলে কি শোনো। সায়মা যেমন আমার ছোটো বোন ঔ আমার একটা ছোটো বোন বুঝলি গাধি?
,
-হুম।
বলে আমার বুকে মুখ লুকিয়ে আমার চোখের পানি ছাড়তে লাগলো।
,
মনের মেঘগুলো আস্তে আস্তে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে লাগলো। আবার উকি দেবে উজ্জ্বল সূর্য। আমার ভালোবাসার সুর্য।
,
,
,
সমাপ্ত