ভ্রুনের ডিএনএ টেস্ট এর রিপোর্ট অনুযায়ী যার সাথে প্রায় ৯৯% মিল রয়েছে সেই লোকটি আটমাস আগেই মৃত্যুবরন করেছেন! কিন্তু নীলার গর্ভের ভ্রুনের বয়স তো তিন মাস! তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে!ডাক্তার শায়লা রিপোর্ট গুলো আবার চেক করলেন, না একই তো লেখা। আর এই লোকটির যাবতীয় ডিটেইলস হসপিটালের মর্গের রিপোর্টে রয়েছে। ডাক্তার শায়লা একজন কর্মচারীকে ঐ রিপোর্টের পেপারটি নিয়ে আসতে বললেন।
মর্গের রিপোর্ট পাওয়ার পর তিনি বেশ চিন্তিত হয়ে নীলাকে বললেন- আসলে কি বলবো বুঝতে পারছি না। আপনার প্রেগনেন্সি রিপোর্ট পজিটিভ অথচ গর্ভে কোনো ভ্রুন নেই। তবে একটা তিন মাসের ভ্রুন যতটুকু যায়গা দখল করে ততটুকু যায়গা জুড়ে কোনো একটা কিছু রয়েছে, যা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। তো আমি ব্যাপরটা খুঁটিয়ে দেখার জন্য ভ্রুনের ডিএনএ টেস্ট করাই। টেস্ট এর রিপোর্ট বলছে এই ভ্রুনটি কোনো মৃত কোষ থেকে উৎপন্ন। যার মৃত্যু হয়েছে প্রায় আটমাস আগে।
– হোয়াট! কি বলছেন এসব?
-জ্বি, অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি। আর যে লোকটার সাথে ভ্রুনের ডিএনএ মিল হয়েছে তার মর্গের যতো রিপোর্ট আছে সব এইখানে। আপনি চাইলে দেখতে পারেন।
নীলা কাঁপা কাঁপা হাতে রিপোর্টগুলো হাতে নিলো। ও এক এক করে রিপোর্টগুলো দেখছে। হঠাৎ লাশের ছবি টার দিকে চোখ যেতেই ওর হাত ছিটকে ফাইলগুলো পড়ে গেলো। এ কি করে সম্ভব! নীলা ঐ ছবিটার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে অঝর ধারায় কেঁদে দেয়। এ তো হিমাদ্রীর ছবি! হিমাদ্রী আট মাস আগে মারা গেছে? কিন্তু ওর সাথে তো হিমাদ্রীর পরিচয় ই হয় আট মাস আগে। তাহলে অফিসে যে গেছে সে কে?
নীলা কিছুতেই হিসেব মেলাতে পারছে না। কি হচ্ছে এসব ওর সাথে, আর কেনোই বা হচ্ছে? যে মানুষটাকে ও এতো ভালোবেসেছে, যার সাথে সারাটি জীবন থাকবে বলে ভেবেছে সে কিনা আটমাস আগেই মারা গিয়েছে! নীলা বেশি দেরি না করে চেম্বার থেকে বেরিয়ে বাসায় চলে এলো।
তারপর চিৎকার করে ডাকতে লাগলো – স্নেহা,,,,আপনি কোথায়? প্লিজ আমার সামনে আসুন। আপনাকে আমি শুধু কয়েকটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো।
ওমনেই পুরো ঘরে যেনো বাতাসের ঝটকা লেগে গেলো। লাইট গুলো নিভু নিভু করছে। কিন্তু নীলা এখন আর কোনো ভয় পাচ্ছে না। একজন মৃত মানুষের সাথে পাঁচমাস সংসার করার পর আত্মাকে ভয় পাওয়াটা নেহাতই বোকামি। নীলা খুব কাঁদছে, খুব কষ্ট হচ্ছে ওর হিমাদ্রীর সত্যি টা জেনে। হঠাৎ ওর মনে হলো ওর পাশে কারো অস্তিত্ব রয়েছে। ও জিজ্ঞেস করলো – আপনি স্নেহা তো?
ভাঙ্গা বিকট কন্ঠে উত্তর ভেসে এলো- কি জানতে চাও বলো?
– হিমাদ্রী কি জীবিত না মৃত?
– মৃত।
– তাহলে ও আমার সাথে পাঁচমাস ধরে সংসার করছে কি করে? আমার চোখে তো ও রক্তে মাংসে গড়া মানুষ’
– ( বিকট বিশ্রী হাসি দিয়ে) তোমার রক্ত পান করে ও নিজের শক্তি ফিরে পায়। তুমি ওর স্ত্রী নও,ওর হাতের পুতুল। অমানুষটা মরে গিয়েও একটা মেয়ের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে।
– প্লিজ আমাকে সব খুলে বলুন। আমি প্রথমে আপনাকে ভুল বুঝলেও এখন বুঝতে পারছি আপনি আমার কোনো ক্ষতি করেন নি।
নীলা শুনতে পেলো কেমন বিদঘুটে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। স্নেহার অতৃপ্ত আত্মা আর্তনাদ করে যাচ্ছে। খানিকটা থেমে তারপর বললো – আমার নাম স্নেহা। আমি ছিলাম বিশাল ধনীর একমাত্র মেয়ে। আমার হিমাদ্রীর সাথে পরিচয় হয় একটা কফিশপে। তোমার মতো আমিও ওকে খুব ভালোবাসতাম। আসলে বোধহয় বিশ্বাসঘাতক গুলো মানুষের মন সহজেই জয় করতে পারে। ভালোবেসে বাবাকে না জানিয়েই আমরা বিয়ে করে ফেলি। যদিও পরে বাবা আমাদেরকে মেনে নেয়, কারন আমিই ওনার একমাত্র সন্তান ছিলাম। ওকে আমি এতোটাই ভালোবাসতাম যে আমার সব সম্পত্তি ওর নামে লিখে দিয়েছিলাম। তারপর থেকেই ও আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। অবশ্য আমি তা জানতাম না। তো, আজ থেকে প্রায় আটমাস আগে ও আমাকে লং ড্রাইভে নিয়ে যাবে বলে বের হয়। পথিমধ্যে ও গাড়ির ব্রেক ফেল করে দিয়ে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে যায়। কিছুদুর গিয়ে আমি গাড়িসহ এক্সিডেন্ট করে মারা যাই। কিন্তু, ভাগ্য ওকেও বাঁচতে দেয়নি,চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দেয়ার ফলে ও মারা যায়।
নীলা কথাগুলো শুনে খুব কাঁদছে। হিমাদ্রী এতোটা খারাপ ছিলো! কিন্তু গোপনে ওর রক্ত পান করলেও কখনো নীলাকে এমনি কষ্ট দেয়নি।ও আবার শুনতে পেলো স্নেহার কথা।
– ওর আত্মা এখনো জীবিতদের মতো ঘুরে বেড়ায় যার কারনে আমিও শান্তি পাচ্ছি না। তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।
নীলা বেশ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো- কি কাজ?
– ওর আত্মাটাকে ধ্বংস করতে হবে। পুনরায় ওকে মারতে হবে।
– (বেশ কান্নামাখা স্বরে)আমি তা পারবো না।আমি ওকে ভালোবাসি। ও যদি আমার রক্ত পান করে বেঁচে থাকে তাহলে থাকুক। আমি তো এমনেই আর বেশিদিন বাঁচবো না।
– দেখো আমি যা বলছি তা মন দিয়ে শুনো, তুমি নাহয় ওর জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিলে, তারপর এটা কি ভেবে দেখেছো যে তোমার মৃত্যুর পর ও অন্য কারো রক্ত পান করার জন্য আরো লোকের মৃত্যু ঘটাবে। তখন কি তুমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে? নির্দোষ লোকের প্রাণ নেওয়ার আগেই তোমাকে ওকে ধ্বংস করতে হবে। ঐ হাসপাতালের মর্গে এখনো ফ্রিজে ওর লাশটা আছে। লাশের কেউ কোনো খোঁজ করে নি বলে ঐটা ওখানেই রাখা আছে। তুমি কালকে রাতে মর্গে পৌঁছাবে আমি বাকিটা বলে দিবো।
স্নেহা চলে যাওয়ার পর নীলা চিৎকার করে কাঁদে। বেশি ভালোবাসলে তার পরিনতি বুঝি এমনই হয়! যাকে ভালোবাসলাম তাকেই মারতে হবে!
রাতে হিমাদ্রী বাড়ি ফিরলে নীলা ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শেষবারের জন্য। খুব কষ্ট হচ্ছে ওর কিন্তু ওকে যে এটা করতেই হবে। হিমাদ্রীকে ধ্বংস করতেই হবে। কিন্তু ওকি পারবে? না হেরে যাবে ভালোবাসার কাছে!
নীলা কি পারবে নিজের ভালোবাসার মানুষ কে মেরে ফেলতে। আপনারা কিন্তু বলবেন,,
চলবে……..
নেক্সট পর্ব পেতে নিয়মিত চোখ রাখুন সোশ্যালব্লগওয়ার্ল্ড এ