ঘর ঝাঁট দিতে এসে কাজের মেয়ে নিচু গলায় বললো,
‘আপা! আমার রিকোয়েস্টটা এক্সেপ্ট করেন।’
আমি হতভম্ব গলায় বললাম,
‘কিসের রিকোয়েস্ট?’
‘ফেসবুক। রিকোয়েস্ট পাঠাইছি।’
‘ও আচ্ছা! নাম কি?’
‘ড্যাডিস প্রিন্সেস শাপলা!’
আমি নিজেকে সামলালাম। এত অবাক হচ্ছি কেন? কিছুদিন আগেই তো আরেক কাজের খালা আমাকে ইমোতে ইনভাইট করেছিল। আমার ইমো নাই, কিন্তু তার আছে। এত অবাক হলে চলবে না এই যুগে।
আমি হাসিমুখে আইডি খুঁজে বের করে রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে রাখলাম। প্রোফাইল পিকে একটা মেয়ের রঙচঙা সেলফি। আমি প্রশ্ন করলাম,
‘কার ছবি গো?’
‘আমার আপা! ইউক্যাম পারফেক্ট দিয়ে ইডিট করেছি।’
‘মাশাআল্লাহ! খুব সুন্দর।’
ইদানিং আমার বেশ সুবিধাই হচ্ছে। কাজে আসতে না পারলে শাপলা মেসেজে একটা দুঃখী স্টিকার পাঠালেই আমি বুঝে যাই। স্টিকারে একটা মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, sorry!
আবার রান্নাঘরে কিছু খুঁজে না পেলেও শাপলাকে মেসেজ দিলে সাথে সাথেই রিপ্লাই পাওয়া যায়।
এছাড়াও প্রায়ই ফেসবুকের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সে আমার কাছে আসে।
একদিন ফোন নিয়ে এসে বললো,
‘আপা! মেসেঞ্জার নাকি কালা করা যায়, একটু করে দেন। আর ফলোয়ার অপশন একটু অন করে দিবেন।’
দিলাম।
একদিন এসে বললো,
‘আপা! এবাউটে লিখে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি।’
দিলাম।
আরেকদিন বললো,
‘আপা, ইংরেজিতে একটা স্টাটাস লিখে দেন। আমি বাংলা বলছি,
“ফিলিং বোর! গরমের ছুটি চলছে। এখন পড়াশোনা নাই, কোনো কাজকর্মও নাই। সময় কাটে না!”
আপা হাঁ করে তাকিয়ে আছেন কেন? এইটা লেখেন ইংরেজিতে।’
আমি লিখে দিলাম।
আরেকদিন আমার কাছে এসে বললো,
‘আপা! রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়ে দেন।’
আমি অবাক হয়ে বললাম,
‘প্রেম করছো নাকি?’
সে লাজুক গলায় বললো,
‘জ্বী আপা! রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়ে দেন। ছেলের নাম স্বপন হানিফ!’
আমি রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়ে দিলাম। ছেলের প্রোফাইল দেখে বড় ধরনের ধাক্কা খেলাম। ছেলে ঢাকা মেডিকেলে পড়ে।
আমি শাপলার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম,
‘কোথায় পেয়েছো এই ছেলেকে?’
সে হাসিমুখে বললো,
‘ফেসবুকে আপা!’
‘ও আচ্ছা!’
পৃথিবীটা দিন দিন মনুষ্যবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যাচ্ছে, এই জাতীয় চিন্তা করতে করতে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছিলাম। বড় আপু এসে বইয়ের পাতার মধ্যে একটা ছেলের ছবি রেখে দিলেন। সেদিকে না তাকিয়ে আমি চমকে উঠে আপুকে জড়িয়ে ধরলাম। বহুদিন পর আপু শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে।
আপু নির্লিপ্ত গলায় বললেন,
‘ছেলেটাকে দ্যাখ। পছন্দ হলে হলো, না হলেও না হলো। এর সাথে তোর বিয়ে।’
আমি হাসি মুখে তাকালাম। যার সাথেই আমার বিয়ে হোক আমার কোনো আপত্তি নাই, পছন্দের কেউ নাই আগেই বলেছি।
আপুর মুখ গম্ভীর। এর কারণ আছে। মাসখানেক আগে আপুর বড় জায়ের সাথে খুব ঝগড়া হয়েছে। আপু তাকে চ্যালেঞ্জ করেছে, যে তার বোনের আগে আপু আমার বিয়ে দেবে। দুজনের বয়সই অনেকটা একই।
দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর ছেলের ছবি দেখে আঁতকে উঠলাম। ছেলেটা কে সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই মেডিকেলে পড়া ছেলে। কিন্তু এর নাম স্বপন হানিফ না, রাজিবুল ইসলাম অয়ন।
আমি কাঁদতে কাঁদতে আপুকে গিয়ে বললাম,
‘আপু! এই ছেলেকে কই পেয়েছো? এর তো চরিত্র খারাপ। আমাদের কাজের মেয়ে শাপলার সাথে ফষ্টিনষ্টি চলে।’
আপু প্রচন্ড অবাক হয়ে সবটা শুনলেন। তারপর রেগে আগুন হয়ে গেলেন। তারপর হতাশায় ডুবে গেলেন।
এতগুলো অনুভূতির মিশ্রণ ঘটার প্রধান কারণ সেই ছেলে আজ সন্ধ্যায় পরিবার নিয়ে আমাদের বাড়ি আসছে।
আপু রেগেমেগে বললেন,
‘ঝাঁটা রেডি রাখ। ঐ চরিত্রহীন ছেলের পরিবারের দম্ভ যদি আমি ধূলায় না মিশিয়ে দিয়েছি আমার নাম…’
সন্ধ্যার সময় ছেলে তার পরিবার নিয়ে আমাদের বাড়িতে এলো। তাদের জন্য কোনো প্রকার খাবার আয়োজন রাখা হয়নি। বরং আমাদের মুখ গম্ভীর। আচ্ছা করে অপমান করা হবে আজ এদের।
কাজের মেয়ে শাপলাও ছেলে দেখে চমকে তাকিয়েছে, তারপর দৌড় দিয়ে পালাতে গিয়েছিলো। আপু ওর হাত ধরে আটকে ফেলেছে।
ছেলের মা আমার আপুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘কেমন আছো মা?’
আপু তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে শাপলাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললেন,
‘একে চেনো?’
শাপলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
ছেলে অবাক হয়ে বললো,
‘না তো!’
‘নাটক করো? তোমার নাটক আমি বের করছি। আমার বোনের জীবন নষ্ট করতে আসা?’
আপু ল্যাপটপে ফেসবুক ওপেন করে শাপলার সাথে তার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেখালো।
ছেলেটা খানিকক্ষণ অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থেকে ফোন দিয়ে তাদের ড্রাইভারকে ডাক দিলো।
ড্রাইভার ওপরে এসে শাপলাকে দেখে বড় ধরনের ধাক্কা খেলো। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
ছেলেটা এতক্ষনে ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বললো,
‘তুই বলেছিলি ভাইয়া নতুন ফোন কিনেছি, আপনার একটা ছবি রেখে দিই। এই জন্য নিয়েছিলি আমার ছবি? আমার ছবি আর বায়ো ব্যবহার করে ফেসবুকে আইডি খুলে
😛 😛