অপ্রত্যাশিত আনন্দ ভালোবাসার গল্প

ভালোবেসে বিয়ে করলেও সম্পর্কের সমাপ্তি টানতে হচ্ছে আমাদের।
মানে আমার আর ইরানের। তিন বছরের রিলেশন তার পর বিয়ে।

দুই পরিবারের মতেই দুজনের হাত একসাথে হয়। কিন্তু বিয়ের সাত বছরের মাথায়ও কন্সসিভ করতে পারিনি আমি।

আমারও তো ইচ্ছা করে মা হতে। কিন্তু ভাগ্য তো মানতেই হবে।

প্রথম প্রথম শ্বাশুড়ি কিছু বলতো না এ নিয়ে কিন্তু চার বছর পরও যখন নিজের উত্তরাধিকারি দিতে পারছেনা বউমা তখন থেকে তার ব্যবহার পালতে যেতে থাকে।

উঠতে বসতে কথা শুনতে হয় আমাকে। তিনটা বছর ধরে শ্বাশুড়ির বিষ কথা শুনতে শুনতে নিজেকে দেখে খুব কষ্ট হয়।
নামাজে দাড়িয়ে দুইহাত তুলে অঝোর ধারাই কান্না করতে লাগি আর আল্লাহর কাছে একটা সন্তান চায়। নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও একটা সন্তান আমার চাই। শাশুড়ির কটু কথা আর শুনতে ইচ্ছা করে না আমার।

তাই দুঃখ গুলো ইরানের কাছেই প্রকাশ করতে হয়। ইরান প্রথম আমাকে আশ্বাস দিতো যে সন্তান না হলে কি হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে তারও পরিবর্তন হতে থাকে।

একদিন রাতে সুয়ে আছি। ইরান বললো,

ইরা, আমাদের মনে হয় এই সম্পর্কটা এখানেই শেষ করা উচিত।
কম ডাক্তার তো দেখানো হলো না, কাজের কাজ কিন্তু কিছুই হলো না।
আর তাছাড়া আমারও তো ইচ্ছা করে।
ছোটো ছোটো হাতপা দিয়ে আমাকে ছুয়ে দেবে। আমাকে বাবা বলে ডাকবে। কিন্তু দেখো, এসবের কিছুই তুমি দিতে পারবেনা।


আমি বুঝতে পেরেছি ইরান তোমাকে আর কিছু বলতে হবেনা আমি কালকেই সব কিছু গুছিয়ে বাবামায়ের কাছে চলে যাবো।

কিন্তু আমরা যে সম্পর্কের ভিতর আছি এটাতো শেষ করতে হবে। মানে…
,
মানে আমি বুঝতে পেরেছি ইরান।
তোমাকে চোখের সামনে দেখে ডিভোর্স পেপার সাইন করার সাহস বলো আর শক্তিই বলো, তার কিছুই আমার নেয়। এমনিতেই আম্মার মুখের বাজা কথাটা শুনতে শুনতে নিজেকে দাড় করিয়ে রাখার শক্তি আমার নেয়।
তাই আমি বাবামায়ের কাছে চলে গেলে নাহয় ডিভোর্স লেটার টা পাঠিয়ে দিও। আমি সাইন করে দিবো।
,
,
পর দিন সকাল নিজের যা কিছু আছে।
গুছিয়ে নিলাম যাওয়ার আগে আম্মার(শ্বাশুড়ির) সাথে দেখা করতে গেলাম।
,
মা, হয়তো নিজের অজান্তে আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, আপনার বংশের আলো জ্বালাতে পারিনি। আমি জানি আপনি কত আশা করে ছিলেন এতো বছর যে আমি হয়তো একদিন কন্সিভ করতে পারবো। কিন্তু আমার কপালে যে সন্তান নেয় মা। আমাকে মাফ করবেন। আসি মা।
,
আম্মা আমার কথার কোনো উত্তরই দিলো না।
,
,
চোখে জল নিয়ে শেষ বারের মত নিজের সংসারটা দেখতে লাগলাম।
এই সংসারের সব কিছুতেই আমার ছোয়া।
ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে দেহ থেকে জানটা আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
তবুও কাওকে বুঝতে দিচ্ছিনা আমার কষ্ট।
অবশ্য বুঝতে দিয়েও কোনো লাভ নেয় আমার কষ্ট কেও দেখবেনা।
একটা বাজার কিসের কষ্ট দেখতে যাবে মানুষ।
,
ইরান নিজের গাড়িতে করেই আমাকে দিয়ে গেছে বাবামায়ের এখানে। আমি অবশ্য আসতে চাইনি। কিন্তু তার কথা
,
” ওই বাড়ি থেকে বিয়ে করে তোমাকে আনার দ্বায়িত্ব ছিলো আমার, এখন ওই বাড়ি পৌছে দেওয়ার দায়িত্বও আমার।
,
,
আজকে পনেরো দিন হয়ে গেছে,
এখনো ডিভোর্স লেটার পাঠায় নি ইরান।
তারমানে এখনো বিয়ে করেনি ও।
ডিভোর্স লেটার পাঠালেই এই সম্পর্কের সব কিছু শেষ হবে। ও আবার বিয়ে করবে।
ওর নতুন সংসার হবে, বাচ্চা হবে ওকে বাবা বলবে। সব কিছুরই পূর্ণতা পাবে ওর আর আমি। হাহ।
আমি এভাবেই ওর সৃতি নিয়েই বেচে থাকতে পারবো।

পরদিন ইরান কল দিলো কিন্তু আমার রিসিভ করার সাহস নেয়। নিজের ভালোবাসার কাছ থেকে আলাদা হওয়ার সাহস আমার নেয়। তাই কলটা রিসিভ করলাম না। তাই ও একটা মেসেজ পাঠালো আমার মোবাইলে,
” তোমার সাথে শেষ দেখা করতে চাই ইরা। জানি তোমার আমার সাথে দেখা করার ইচ্ছা নেয়। তবুও এই শেষ অনুরোধ টুকু তুমি রাখো। আর আসার সময় নীল সাড়িটা পরে আসবা। আমি গাড়ি পাঠিয়েছি। তুমি রেডি হয়ে নাও।”
,
অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতে হবে ভালোবাসার মানুষের ডাক বলে কথা।
তাই ইরানের কথা মত নীল শাড়ি পড়লাম।
বাকি সাজগোজ করে বসে আছি কখন গাড়ি আসবে সেই অপেক্ষাই।
,
হঠাৎ গাড়ির হর্ণ শুনতে পেলাম।
গাড়িতে গিয়ে বসলাম।
ড্রাইভার করিম ভাইয়ের সাথে কুশল বিনিময় করলাম।

ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে।
আমি পিছনের ছিটে বসে আছি কারটা কোথায় যাচ্ছে আমার জানতে ইচ্ছা করছে না।
তাই চুপচাপ বসে আছি মাথা নিচু করে।
,
কিছুক্ষণ পর গাড়িটা থামলো।
ড্রাইভার বললো,
,
ম্যাডাম, নামেন আমরা চলে এসেছি।
,
গাড়ি থেকে বের হয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমরা একটা অনাথ আশ্রমের সামনে আছি। আরো অবাক হলাম ইরানকে দেখে।
,
ও আমাকে তাহলে এখানে আসতে গাড়ী পাঠিয়েছিলো। কিন্তু ওর কোলে বাচ্চাটা কার!
,
কোতুহল নিয়ে ইরানের কাছে যেতেই। ও বাচ্চাটকে আমার কোলে দিয়ে বললো,

নাও তোমার মেয়েকে এবার নাও আমি অনেকক্ষণ ধরে ওকে রেখেছি। হাত ব্যাথা করছে।
,
বাচ্চাটা দেখে মন ভরে যাচ্ছে। কি কিউট মুখখানা। দেখতে দুই বছর মত বয়স। আবাক করার বিষয় বাচ্চাটা আমাকে মা বলে ডাকছে।

আমার মেয়ে মানে? আর আমাকে মা বলছে কেন?
,
আমি ইরান কে জিজ্ঞাসা করলাম।
,
হ্যা তোমার মেয়ে, আমার মেয়ে, আমাদের মেয়ে। মা তো বলবেই।
আগে চলো বাকি ফরমালিটিস গুলো পূরোন করে আসি।
,
এতোক্ষনে বুঝলাম মেয়েটাকে দত্তক নিচ্ছে ইরান। ফরমালিটিস পুরোন করে বের হয়ে আসলাম। এখন অনাথ আশ্রমের মাঠে হাটছি আমরা।
গেইটের দিকে যাচ্ছি।
,
,
মেয়েটা আমার কোলে রয়েছে আর পাশে হাটছে ইরান। হঠাৎ কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে,
,
,
“সারাজীবন অপ্রত্যাশিত আনন্দ দিয়ে তোমাকে ভরিয়ে দিতে চাই ইরা। তুমি ছাড়া আমি কিছুইনা। তোমাকে অপ্রত্যাশিত আনন্দ দিতে গিয়ে যদি একটু কষ্ট দিতে হয় আমি তাতেও রাজি। ভালোবাসি।”
,
,
গাড়িতে বসে আছি মেয়েটা কোলে নিয়ে, সরি আমার মেয়েটা কোলে নিয়ে আর একহাত দিয়ে ইরানের হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রেখেছি। গাড়ি চলছে আপন গতিতে।
মনটা সুখে ভরে যাচ্ছে। আমার ইরান শুধু আমার। মেয়ে জন্ম না দিয়েও আজকে মা হতে পেরেছি। এটাইতো আমার আনন্দ, অপ্রত্যাশিত আনন্দ।

সমাপ্ত

লেখিকা – রাফিজা আখতার সাথী

………………………………………

আপনার লেখা সরাসরি আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন  আমাদের এডমিনগণ আপনার লেখা যাচাই বাঁচাই করে আমাদের ব্লগে মূল পাতাই আপনার লেখাটি প্রকাশ করবেন ।

হেড এডমিন এর fb.com/YousufRanaDhali