মধ্য রাতের শসানঘাট উমর ফারুক

মধ্য রাতের শসানঘাট উমর ফারুক

বন্ধুর কাহিনী- ওরা এক গ্রামে বাস করতো গ্রামটা ছিলো মেহেরপুর গ্রাম। তো সবাই সেই গ্রামটিকে শসান মেহেরপুর বলেই চিনতো। কারণ ওই গ্রামের পাশেই নির্জন একটি জায়গায় শেই অতৃপ্তিকর শসানঘাট ছিলো।

এখন গল্পে আসিঃ তো ওদের তিন বন্ধুর নাম ছিলো তুষার,বিরেন,সিমান্ত।

ওরা তিন বন্ধুই ছিলো একেক জনের আত্নার-আত্না। মানে তিন দেহে এক আত্না বললেই চলে। ওরা ছিলো খুব চঞ্চল সবাবের। ওদের তিন জনের মধ্যে বিরেন ছিলো খুব চঞ্চল এবং দুঃসাহসিক একটি ছেলে। আর তুষার ছিলো বোকা এবং ভিতু টাইবের আর।সিমান্তও ছিলো চঞ্চল এককথায় বলা যায় বিরেনের মতো। তো ওরা তিন বন্ধু এমনই দুষ্টু ছিলো যে গ্রামের মানুষ ওদের দুষ্টমিতে শান্তি মতো দিন কাটাতে পারতো না। কারও গাছের ফল চুরি করে খেত, আবর কারও ফসল নষ্ট করতো এবং ভূত শেজে মানুষকে ভয় দেখাতো। এরকম ওদের দুষ্টুমিতে গ্রামের মানুষ প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলো।

তো একদিন ওরা সেই নির্জন শসানের পাশে মাঠে বল খেলতে ছিলো। হঠাত শেই নির্জন শসানের দিকে বলটি চলে গেলো।

বিরেন বললঃ-যা তুষার বলটি নিয়ে আয়?

তুষারঃ-তুই বল দিসিস ওখানে, তুই নিয়ে আয় না?আবার আমাকে বলসিস কেনো।

বিরেনঃ-তোর মতো কি ভিতুর ডিম আমি যে, ওই খানে যাইয়া বল নিয়ে আসতে পারবো না আরে তুইতো আসলে ভিতু।

তুষারঃ-আরে, এত পেচাল না পাইরা বলটা লইয়া আয় দেখি কেমন পারস?

বিরেনঃ-দারা যাইতাসি।

তুষারঃ- কি যাইবা তা এহনি প্রমান পাইতাছি।

বিরেনঃ-আচ্ছা তুই লইয়া আয়তো দেখি, তুই কেমন পারস।তুইতো ডরেই কাপতাছিস।

সিমান্তঃ-ওইছে,ওইছে অনেক্ষন দইরা তোদের বক,বক হুনতাছি কেওরি যাওয়ার লাগবো না।আমি যাইতাছি “সর”।

তুষারঃ- ও কি আসলেই যাইতাছে নাকি। ওই সিমান্ত তুই যাসনা ওই শসানটা ভালো না?

বিরেনঃ- তুই যা… সিমান্ত,,এই ভিতুর কথা হুনিসনা।

তুষারঃ- আচ্ছা তুই যে ওরে,যাইতে কইলি তুই কি যানস ওই শসানে কি আছে?

বিরেনঃ- কি আছে?

তুষারঃ- আমি আমার দাদির কাছ থেইকা হুনছি যে,…..আজ থেইকা ১৫ বছর আগে নাকি ওই শসানে একটা ২৭ বছরের হিন্দু মাইয়ারে জিন্দা পুরাইয়া মারছাল… কয়েকটা লোকে।এবং মাইয়াটা মারার তিনদিন পরেই একটা বেটার লাশ শেই শসানে গাছের মধ্যে সকলেই ঝুইললা থাকতে দেখছাল।এবং সকলেই কইলো যে এই খুনের পেছনে নাকি মাইয়ারার হাত আছে। গ্রামের সবাই শেই থেইকা নাকি শসানের দিকে ফিরাও চায় না। এবং কেউ পাও মারায় না।

বিরেনঃ- কি কস্,,, আমারে আগে বলবিনা?

তুষারঃ- আহ্, তুই বলার লাইগা সুযোগ দিলি কই।এই কারণেই তো আমি গেলাম না। এদিক দিয়াতো সবাই চইললা গেছে। আবার সন্ধ্যা হইয়াও আইতাছে।এহন কি করমো?

বিরেনঃ- দূর ছাতা মাথায় কিছুই আইতাছেনা।

তুষারঃ- ওরে ডাক দে…তারাতারি ডাক দে?

বিরেনঃ- সিমান্ত,সিমান্ত…আরে ওই সিমান্ত।… কিরে কোন সারা শব্দ নাই যে কি… হইলো।

তুষারঃ- তোরে তো আমি আগেই কইছিলাম যে এত সাহস দেহাস না। এহন বুঝ ঠেলা।… তুমি গেলে তোমারেও পাওয়া যাইতোনা।

বিরেনঃ- হাছাই, কইছস এত সাহস ভালো না। এহন কি করবি? তুষারঃ- চল্ আমরা চৈললা যাই……রাত হইয়া গেতাছে “নাইলে কিন্তু আমরাও যামু”?

বিরেনঃ- কি কস্,,,, সিমান্তকে রাইখাই চৈললা যামু।আর এইরাই তোর বন্ধুত্বের পরিচয়………….আমি যামুনা তুই যা?

তুষারঃ- বিরেন,,,,,,, পাগলামি করিসনা। আগে আমরা বাইচ্চালই তারপর সিমান্তর খুজতো করমোই।আর এই নরকের পাশে যদি আমরা এহনও খারায় থাকি তাইলে কিন্তু আমরাও শেষ….”তারাতারি চল্”

বিরেনঃ- খারা,খারা,ওর,,,বাড়িতে যাইয়া ওর বাপ-মায়ের লহে কি কমু?

তুষারঃ- তহন যা কওয়ার কইরো….আগে এহন বাইচ্চালই। (তারপর অনেকক্ষণ হেটে বাড়িতে আসার পর)…………

বিরেনঃ- তুষার বাড়িতেতো আইলাম এহন তুই সব কিছুই কবি।আমি কবার পামুনা।

তুষারঃ- ও …… ঠিক.. আছে পাঠানোর সুময় তুমি পাঠাইলা আর এহন আমারেই সব কিছু করবার কইতাছো?

বিরেনঃ- তুই আমারে বাঁচা। তুই আমার বন্ধু…. না?

তুষারঃ-আচ্ছা খারা….চাচিরে ডাক দেই।অ…চাচি..চাচি আরে অ..চাচি বাড়িতে আছো নাকি?

চাচিঃ- কিরে এত চিল্লাইতেছস কে কি হইছে……..ওই খারা তোগর লগে সিমান্ত গেছে না ও কই রাত হইয়া গেছে এহনও বাড়িতে আহেনা….খারা ওরে আছকা আইবার দে?

তুষারঃ- চাচি… চাচা এহনো বাড়িতে আসেনাই?

চাচি:-না এহনো দোহান থেইকা ফিরে নাই। তোরা কিছু কবি..আর সিমান্তরে কোনো রাইখা আইছস?

তুষারঃ- চাচি……সি…..সি…..সিমান্ত চাচিঃ- কি সি..সি..লইছস সিমান্তর কথা কইতাছস?

তুষারঃ- “হ” চাচি। চাচিঃ- কি কবি ক সিসান্ত কোনো?

তুষারঃ- চাচি আমরা হগ্গলেই খেলবার গেছিলাম মাঠে। কিন্তু হঠাত…বলটা ওই শসানঘাটের ঝোপের ভিতরে চইলা গেলো।তো সিমান্ত শসানঘাটের ভিতরে একাই ঐই বলটা আনতে গেলো কিন্তু অনেকক্ষণ হইয়া গেলো কোন সারা শব্দ পাইলামনা। (পরে চাচি কাততে লাগলো এবং তারপর)-……..

চাচিঃ- কি… কইলি….. একি সর্বনাস হইলোরে আমার হে আমার উপরওয়ালা তুমি আমার সিমান্তকে বাচাও। বিরেন,

তুষারঃ- কানদেননা চাচি দেখেন যানি সিমান্ত আবার চৈল্লা আইবো। (পরের দিন সকালে সবাই শেই শসানঘাটে একটি গাছের মধ্যে সিমান্তের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়

বিরেনঃ- তুষার সিমান্তের এই অকাল শসানঘাটের মৃত্যুটা আমি কোন পাইলেই মাইনা নিতে পারতাছিনা???

তুষারঃ- “হ”রে আমিও পারতাছিনা। আমাগো বন্ধু আমাগো ছাইরা এইভাবে চৈল্লা গেলো এইরা আমি কোন পাইলেই মাইনা নিতে পারতাছিনা।

বিরেনঃ-চাচা-চাচির অবস্থা একবারও কি দেখছস তুষার……..কি হয়েছে তারা? আমাগো বন্ধু আমাগো লগেই আছে……..আমরা তোরে কোনদিন ভূলবোনা সিমান্ত…ভালো থাকিস ভাই।

তো বিরেন, তুষার তারা মনে মনে দরে নিয়েছে যে তাদের বন্ধু এখনও তাদের সাথেই আছে।এবং এই পর্বে তারা তাদের বন্ধুর খুনের বদলা নেওয়ার জন্য,,, প্রতিশোদ কাতর হয়ে পরেছে।এবং তাদের বন্ধুর সাথে সেইদিন রাতে কি হয়ে ছিলো। এবং তাদের বন্ধুর প্রকৃত হত্যাকারি কে সেটা জানা বা খুজার জন্য তারা দুইজনই মধ্যরাতে শেই শসানঘাটে যায়।

বিরেনঃ- চল্ তুষার?

তুষারঃ- কই যাইবি?

বিরেনঃ- শেই শসানে

তুষারঃ- কি কস্…. তুই মনে আবারো পাগল হয়ছিস।শসানঘাটে কেয়ের লাইগা যামু।তোর মনে নাই সিমান্তর কথা?

বিরেনঃ- ওইরার লাইগাই তো যামু।

তুষারঃ- তুই কি কইতাছস কিছু বুঝতাছিনা?

বিরেনঃ- আমি বাইকরবার চাই যে এই শসানঘাটে কি এমন রহস্য আছে।এবং কি হয় মধ্যরাতে এই শসানে।তাই তোর সাহায্য লাগবো?

তুষারঃ- আমি পারবো না।

বিরেনঃ- তুই ডরাইসনা? আমিও আছি।

তুষারঃ- আমি মরবার চাইনা,তুই যা?

বিরেনঃ- তেইলে তুই আমাগো বন্ধু আছিলিনা?

তুষারঃ- “তুই কি কস্ ” আমি তগোর বন্ধু না?

বিরেনঃ- দেখ তুষার তুই কি চাসনা যে আমাগো বন্ধুর হত্যাকারির শাস্তি পাক?

তুষারঃ- কেন চাইবোনা।

বিরেনঃ- তেলে অবশ্যই শসানে যাইতে হইবো?

তুষারঃ- তা না হয় বুঝলাম কিন্তু ওহানে যাইয়া যদি বিপদে পড়ি?

বিরেনঃ- এজন্য তোর দাদির সাহায্য লাগবো।কারণ তোর দাদিই জানে কিভাবে এই শসানঘাটের অতৃপ্ত আত্নার খেলা শেষ করা যায়?

তুষারঃ- একদম ভালো কথা কইছিস।”হ” আমার দাদিই জানে……… চল্?

বিরেনঃ- চল্?

তুষারঃ- অ…দাদি…দাদি…?

দাদিঃ-কি কস্…..দাদু?

তুষারঃ- ওই শসানঘাটের সমস্ত কাহিনীর অবসান গটামো আজ।তুমি তো অনেক কিছুই জানো?

দাদিঃ-কি কইলি! তুই আরেকবারও ওই নাম মুখে আনবিনা?

বিরেনঃ- কেন দাদি… আপনে কি চাননা আমাগো বন্ধুর খুনের বদলা নিতে,আপনে কি চাননা ওই ভয়ংকর শসানঘাটের এই গ্রামেরর মানুষকে বাচাইতে?

দাদিঃ-চাইরে দাদু,,,চাই গ্রামের ঐই অভিশাপটাকে দূর করবার। কিন্তু আজ পর্যন্ত ঐই শসানঘাট নিয়া হাসি -তামাসা,খেলছে যারা তারা সবাই শসানের ঐই বড় গাছটায় ঝুলছে।তুষারের দাদাকেও ঐই শসানে টাইনা লইয়া গেছে সেই দিনের কথা এহনো আমি ভুলিনাই।তাই আমি তুমাগো হরাবার চাইনা।তাই ঐই কথা ভুইললা যাও?

বিরেনঃ- আমাগো কিছুই হইবোনা। আপনি খালি উপায়গুলা বইলা দেন?

দাদিঃ-ঠিক আছে,তোমরা ভালো কইরা শুইননা লও?

তুষারঃ- ঠিক আছে দাদি।

দাদিঃ-আগে তোমরা ওই গাছটা কাইটা ফালাইবা,তারপর শসানের শেষের দিকে একটা বাশঁঝার দেখবা। এবং ঐই খানেই শেই মাইয়াটার কিছু কাপর আছে সেই কাপর জালাইয়া ফেলবা তাই মাইয়াটার আত্না মুক্তি হইয়া যাবো।

তুষারঃ- ঠিক আছে দাদি। আমরা আজকা রাইতেই রওনা হমো।না কি কস্ বিরেন?

বিরেনঃ- ঠিক আছে? (তারপর ওরা দুইজন রওনা হয় সেই মধ্যরাতে শসানঘাটটির দিকে

দাদিঃ-খারাও, যাওয়ার আগে এই তাবিজটা লও?

তুষারঃ- এইরা কি দাদি?

দাদিঃ- এইরা অষ্টামির তাবিজ।এইরা লগে থাকলে তোমাগো কেউ কখনো স্পর্শ বা ক্ষতি করতে পারবো না?

তুষারঃ- দোয় করো দাদি,, যেনো কামিয়াব হইবার পারি।

দাদিঃ- যাও আমার দোয়া সবসময় তোমাগো লগে থাকবো।

তুষারঃ- এত অান্ধার কিছু দেহা যায় না।

বিরেনঃ- এইতো আইসা পরছি প্রায়….

তুষারঃ- ঐটাকি শসানঘাট না মৃত্যু নগরি! (অনেক্ষন রাস্তা অতিক্রম করে শসানঘাটে আশার পর

তুষারঃ- আর পাও চলতাছেনারে ভাই।

আত্নাঃ- তোমরা এসে পরেছো! আমি তোমাদের অপেক্ষায় ছিলাম এতক্ষণ?

বিরেনঃ- কেরা! এই কেরা?… কেরা কথা কয়?

আত্নাঃ- আমি শেই মেয়ে,,,হা,হা,হা,।

বিরেন,তুষারঃ-কেরা আপনি!কি চান এই গ্রামে থেকে….. কেন আপনি এরকম করছেন?

আত্নাঃ-সেদিন আমি কি করেছিলাম, সেদিন কেনো আমাকে বস্ত্রহরন করে জিবন্ত আমকে পুরিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিলো।আমি কি দোষ করেছিলমা?

বিরেনঃ- আমাগো বন্ধুকে আপনেই হত্যা করেছিলেন?

আত্নাঃ-হ্যা,,,আমি মেরে ফেলেছিলাম।

তুষারঃ- কেন আমাদের বন্ধু কি ক্ষতি করেছিলো?

আত্নাঃ-আমি কোন লাভ ক্ষতি বুঝিনা। আমি তোমাদেরও মেরেফেলবো হা,হা,হা,

বিরেনঃ- জলদি কর তারাতারি ওর কাপর খুজ?তারাতারি ভাই?

তুষারঃ- এইতো পাইছি।

বিরেনঃ- তারাতারি পুইরা ফেল?

আত্নাঃ-নাহ্… একি হচ্ছে আমার সাথে…. আমার শক্তি বিলিন হয়ে যাচ্ছে কেনো….না…না..নাহ্.. (তো আত্নার মুক্তি হয় গেলো বিরেন,তুষার হয়রান হয়ে বলল)……

বিরেনঃ- আহ্….. বেচেঁ গেছি… বেচেঁ গেছি চল্ গাছটা কেটে ফেলি?

তুষারঃ- চল্ তো

গল্প এখানেই শেষ এই গল্পটা পুরাপুরি বন্ধুর প্রতি “বন্ধুর ভালোবাসাটা কেমন বুঝানোর জন্যই এই গল্প” একটি বন্ধুর প্রানের বিনিময়ে গোটা গ্রামটাকে মুক্তি করে দিয়ে রেখেগেলো এবং সেই গ্রামটা ভালোভাবে কাটতে লাগলো।কিন্তু শেই শসানঘাটে কে যেনো মধ্যরাতে চিৎকার করে বলে বন্ধু.বন্ধু…অ -বন্ধু শেই মধ্যরাতের রহস্যময় শসানঘাটটা, “মধ্যারাতের শসানঘাট” হয়েই রইলো!

সমাপ্ত-