তোকে না কতোবার বলেছি এমন ছোট ড্রেস পরে আমার সামনে আসবি না।
যে ড্রেসে শরীরের দুই ভাগই দৃশ্যমান হয়ে থাকে সেগুলো কেনো পরিস। নাকি নিজের শরীরটাকে সস্তা মনে হয় তোর? অনেক মেয়ে দেখেছি আমি কিন্তু তোর মতো নির্লজ্জ মেয়ে আর একটিও দেখি নি।
এ বাড়িতে থাকতে হলে নিজের শালীনতা বজায় রেখে থাকতে হবে।বুঝেছিস? এখন যা আমার চোখের সামনে থেকে।
—-দীপ্ত তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে! আমি তো তোমার জন্যই এই…..—-শাট আপ নীরা। এখানে দাড়িয়ে আর একটি কথা বলবি তো আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।[শাহরিয়ার দীপ্ত, চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলে। দেড় বছর আগে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। নীরা দীপ্তর ফুপির মেয়ে, ফুপি এবং নীরা এবাড়িতেই থাকে।]নীরা রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। দীপ্তর মেজাজটা এমনিতেই খারাপ ছিলো। আর এখন নীরা তার সামনে এমন ছোট ড্রেস পড়ে এসে নানা কথা বলে দীপ্তকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছিলো।
দীপ্তর ক্ষীপ্ত মেজাজটা আরো বেশি বিষিয়ে দিতে ওইটুকুই যথেষ্ট ছিলো। নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে না পেরে দীপ্ত তার হাতে থাকা ফোনটা সামনের ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় ছুড়ে মারলো। মুহুর্তেই ঝনঝন আওয়াজ হয়ে আয়নাটা ভেঙে গেলো। ভাঙা কাঁচের টুকরো গুলো ছড়িয়ে পড়লো মেঝেতে।নীলিমা চৌধুরী(দীপ্তর মা)জোরে কিছু ভাঙার আওয়াজ শুনে ছুটে এলো। দীপ্তকে দেখে আৎকে উঠলেন সে। দীপ্তর চোখ জোড়া অসম্ভব লাল হয়ে আছে।
যেনো আগুনের রশ্নি বের হচ্ছে চোখ থেকে। নীলিমা চৌধুরী দরজা পেরিয়ে রুমে ঢুকতে চোখ পড়লো আয়নার ভাঙা টুকরো গুলোর দিকে। ফোনটাও ছড়িয়ে পড়ে আছে।তিনি এগিয়ে গিয়ে দীপ্তর সামনে দাড়ালো। ভীত কন্ঠে বললো—-দীপ্ত কি হয়েছে তোর? আয়না ফোন এসব ভেঙেছিস কেনো?দীপ্ত মাথা তুললো না মেঝেতে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো—-মা আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই। প্লিজজ।দীপ্তর মা আর কথা বাড়ালো না। দীপ্ত কেনো রেগে আছে সেটা তার জানা নেই। আর এখন রাগের কারনটা জানতে চাইলেও দীপ্ত বলবে না।
দীপ্তর এরকম হুটহাট রেগে যাওয়াটা নতুন কিছু নয়। এক বছর আগে থেকে দীপ্তর মাঝে এ পরিবর্তনটা এসেছে। তবে কিছুদিন যাবৎ সে স্বভাবিক ছিলো। হঠাৎ কি হলো তাহলে?দীপ্তর মায়ের কাছে মনে হচ্ছে তার ছেলে আগের তুলনায় আজ একটু বেশিই আপসেট হয়ে পড়েছে। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে যেতে নিলে দীপ্ত বলে উঠলো-
—মা নীরাকে মানা করে দিও ও যেনো যখন তখন আমার রুমে এসে আমাকে ডিস্টার্ব না করে। আর ওর ওসব বাজে ড্রেসআপ এ বাড়িতে চলবে না। সেটাও বলে দিও।দীপ্তর মা ছোট করে ‘হুম’ বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।নীরা নিজের রুমে এসে ধপ করে বেডে বসে পড়লো। রাগে দুঃখে তার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। বেডশীটটা খামচে ধরে নিজের রাগটা কমাতে চাইছে। দীপ্ত ওকে এভাবে মাঝে মাঝেই কথা শোনায়। বেশি কথা শোনায় নীরার ড্রেসআপ আর উশৃঙ্খল ভাবে চলাফেরা করার জন্য।
নীরার মা রুমে এসে বললো—-কিরে তোর আবার কি হলো,এভাবে বসে আছিস কেনো?নীরা করুন স্বরে বললো—-দীপ্ত আজও আমাকে অপমান করেছে মা।নীরার মা মেয়ের মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বললো—-তুই নিশ্চই এই ড্রেস পড়ে দীপ্তর সামনে গিয়েছিলি?—-হুম।—-উফ এই মেয়েকে আমি কি করে বোঝাবো। নীরা তুই খুব ভালো করেই জানিস দীপ্ত এসব একদমই পছন্দ করে না। তাহলে এসব কেনো পরিস। এইজন্যই ও তোকে রেগে কয়েকটা কথা হয়তো বলে ফেলেছে। আর দীপ্তর যা অবস্থা রাগ সব সময় ওর নাকের ডগায় থাকে। সেটা বুঝিস না তুই।নীরা কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো
—- আমি তো দীপ্তকে ইমপ্রেস করার জন্যই সব করি। বাট ও তো আমার সাথে ঠিক করে কথাই বলতে চায় না। মা তুমি তো জানো আমি ওকে….—-হুম জানি। আর জানি বলেই তো…….যাই হোক শোন দীপ্ত যেভাবে পছন্দ করে তুই নিজেকে এখন থেকে সেভাবেই সাজাবি। দীপ্তর আশেপাশে না গিয়ে দূরে থেকে বোঝাতে হবে তুই সেই আগের নীরা নেই। দীপ্তর কথা মতো নিজেকে পাল্টে নিয়েছিস।নীরা ওর মায়ের গলা জড়িয়ে বললো
—-মা তুমি কত্তো ভালো। লাভ ইউ।দীপ্ত সারাদিন রুম থেকে বের হয়নি। তার মনের সেই পুরোনো ক্ষত গুলো আবারো জেগে উঠেছে। তার একাকীত্ব আর পুরোনো স্মৃতিগুলো ভুলতে সেই অতি পরিচিত গিটারটা নিয়ে বসে আছে। আর একটু পর পর টুংটাং আওয়াজ তুলছে তাতে। সে টুংটাং আওয়াজের সাথে তাল মিলিয়ে দীপ্তর চোখের কার্নিশ বেয়ে নীরবে টুপটুপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। রোদের মাঝে হঠাৎ মেঘ হলে সে রোদকে যখন মেঘেরা ঢেকে দিয়ে রোদের তীব্রতা কমিয়ে দেয়। ঠিক তেমনি দীপ্তর মনে জমে থাকা মেঘ তার মনের উজ্জ্বল রোদকে ভিজিয়ে দিয়েছে। সে চাইছে না কাঁদতে। তার জমিয়ে রাখা কষ্টগুলোকে আড়াল করতে চাইছে। কিন্তুু চোখের পানি যে বাধ মানছেই না।নিহান চৌধুরী(দীপ্তর বাবা) মনযোগ সহকারে কিছু পেপারস দেখছে আর চা খাচ্ছে। দীপ্তর মা এসে তার পাশে দাড়িয়ে বললো
—-দীপ্ত আজও সরাদিন দরজা লক করে বসে আছে সারাদিন কিচ্ছু খায়নি। সকালে তো ছেলেটা ভালো মনেই বের হলো বাড়ি থেকে। বের হওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে আবার ফিরেও এসেছে আর তারপর থেকেই রুমে বসে আছে। সেই আগের মতো বিহেভ করছে আবার নিজের ফোন ড্রেসিংটেবিলের আয়না ভেঙে গুড়িয়ে ফেলেছে।নিহান চৌধুরী এতক্ষণ পেপারস গুলোর দিকে চোখ রেখে সব শুনছিলো। তবে লাস্টের কথাটা শুনে সে মাথা তুলে বললো
—-জিজ্ঞেস করোনি কি হয়েছে ওর, হঠাৎ এসব ভাঙলো কেনো?—-সে সুযোগ পেয়েছি নাকি। দরজাটা তো খুলছেই না। তুমি ডাকলে হয়তো দরজা খুলবে আর কারো কথা না শুনলেও দীপ্ত তোমার কথা শুনবে।—-ঠিকআছে তুমি যাও আসছি আমি।দীপ্তর বাবা ডাকার পর সে দরজা খুলেছিলো। তবে কারো সাথে তেমন কথা বলেনি। সবার সাথে চুপচাপ ডিনার শেষ করে নিজের রুমে চলে এসেছে। রুমও তার ভালো লাগছিলো না তাই ছাদে এসে দাড়ালো। ভেবেছিলো ছাদে এসে খোলা হাওয়ায় হয়তো তার অস্থিরতা দূর হবে। কিন্তু না তার মনটা এখনো বিষন্ন হয়ে আছে।
—-ভাইয়া?পেছন থেকে কেউ ভাইয়া বলে ডাকতে দীপ্ত ঘুরে তাকালো। দিশা আর দিহান দাড়িয়ে আছে।(দিহান দিশা দীপ্তর ভাই বোন। দিহান দীপ্তর থেকে দুবছরের ছোট আর দিশা ছয় বছরের ছোট।)দীপ্ত ওদেরকে বললো—-তোরা এখানে কেনো?ওরা এগিয়ে গেলো, দিহান দীপ্তকে বললো—-ভাইয়া কি হয়েছে তোর? মা বলছিলো সকাল থেকে তোর মন খারাপ,রেগে আছিস। কি হয়েছে?দীপ্ত কিছু বললো না আবারো ঘুরে সামনে দৃষ্টি রাখলো। দিশা বললো—-ও ভাইয়া বলোনা কি হয়েছে?
—-দিহান দিশা তোরা নিজেদের রুমে যা। আমার কিছুই হয়নি আমি ঠিকআছি। যা তোরা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।দিহান দিশা দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। দীপ্ত বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাদের রেলিং ধরে দৃষ্টি রাখলো ওই দূর আকাশে। একটু পর হঠাৎ নিজের কাধে কারো হাতের ছোয়া পেতে ঘুরে তাকালো। দিশা দাড়িয়ে আছে।
—-দিশা তুই এখনো রুমে যাসনি?—-গিয়েছিলাম রুমে মন বসছিলো না তাই চলে এলাম। ভাইয়া তুমি কি আমাকেও কিছু বলবে না? তুমি তো সেই আগের মতো বিহেভ করছো। নিজেকে তো একটু হলেও স্বাভাবিক করে নিয়েছিলে। তাহলে কি হলো হঠাৎ।সত্যি করে বলোতো কি হয়েছে তোমার?দীপ্তর চোখে পানি চিকচিক করছিলো।
দিশা তার ছোট বোন হলেও বেস্টফ্রেন্ডের থেকে কম নয়। দীপ্ত আর কাউকে কিছু না বললেও বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে না বলে থাকতে পারে না।দীপ্ত,দিশার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
—-আমি আজ ওকে দেখেছি দিশা। দিশা অবাক হয়ে বললো—-ওকে মানে! কাকে দেখেছো তুমি?
চলবে ………।।
লেখক – মেঘ আফরোজ