আচ্ছা আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না।
কিন্তু ঠিকই শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন তাও জোর করে। আচ্ছা ভালোবাসা ছাড়া কি এগুলা সম্ভব?
অনেকটা ধীর গলায় বল্লো কথাটি ছায়া।তোর এত জানতে হবে না ভালোবাসা কাকে বলে।তুই তো একটারে নিয়েই থাকতে পারস না।আবার বড় বড় কথা কস।আর বেশি মুখ খুলবি তো যতটুকু মারছি তার থেকেও বেশি মারবো। অনেকটা রাগী সুরে বল্লো স্পর্শ।স্পর্শ ছায়ার স্বামীর নাম।
১ মাস হয়েছে তাদের বিয়ে হয়েছে।তবুও হঠাৎ করে।কোনো আয়োজন ছাড়াই।আজ ছায়ার শশুরবাড়িতে ছায়ার আত্মীয় স্বজনরা এসেছিল।সেখানে ছায়া একটু হেসে তার কাজিন আয়ানের সাথে ছবি তুলে।তা উপর থেকে স্পর্শ দেখে।যখন সবাই চলে যায় রাতে ছায়া হাসি মুখে ঘরে ঢুকলে অনেক মারে। বেল্ট দিয়ে,হ্যাঙগার দিয়ে।খুব বাজে ভাবে মারে।ফলে জামার উপরেও রক্তের দাগ দেখা যায়।আবার রাতে ছায়ার সাথে জোর করে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।ছায়া এদিক দিয়ে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে।কিন্তু স্পর্শের সেইদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নাই।
চাহিদা মেটানো শেষ হলে ছায়া উপরের কথাটি বলে।স্পর্শ ছায়া কে টেনে বিছানা থেকে ফেলে দেয়।ছায়ার চোখ থেকে অজস্র পানি পরছে।মনে হচ্ছে ব্যাথায় মারা যাবে।স্পর্শ – তোর মত মেয়ের আমার বিছানায় জায়গা নাই।ছায়া- আচ্ছা ছবি তোলা কি খুব বেশি অপরাধ? স্পর্শ – তোর সাথে কথা বলতেই আমার ঘেন্না লাগছে।ছায়া- তাহলে কেন আমাকে এত অসহ্য যন্ত্রণা দিলেন? আজকে না হয় থাকতো।স্পর্শ – তোকে ভালোবাসি তাই অমন করছি।তোর ভালোর জন্য।ছায়া- আমাকে ভালোবাসেন? হাসি পায় এই ভালোবাসার কথা শুনলে।স্পর্শ – যা নিচে ঘুমা।আমার সাথে ঘুমাবি না।
আর কাল থেকে কলেজও যাবি না।তোর কলেজ বন্ধ। আমি জানি আমার বউ কে কিভাবে ঠিক করতে হবে।ছায়া- কিছুদিন পর আমার এইচএসসি। আপনি প্লিজ আমার পড়ালেখার উপর কোন কিছু কইরেন না।আমি আপনার সব শুনবো।স্পর্শ – তুই যে কলেজে নষ্টামি করতে যাস এইটা আমি ভালো করে জানি। তুই এখন আমার চোখের সাম্নে থাকবি।ছায়ার যে আর কিছু বলার নাই।শুধু চোখ বেয়ে অজস্র নোনা জলের বাধ ভাঙছে।ছায়ার মা মারা যাওয়ার পর যেন সব সুখ কবরে মাটি চাপা হয়ে গেছে।হ্যাঁ! ছায়ার মা নেই।
এর জন্য তো ছায়ার কপালে সুখ নেই।সব কিছুই হারিয়েছে। নতুন করে হারানোর কিছু নেই ছায়ার।উফফ এত যন্ত্রণা কেন লাগছে আমার?এসবেতো আমি অভস্ত্যতাহলে কেন আজ চোখ থেকে বাধ ভাঙছে।ফ্লাইট এসে পরেছে।এয়ারপোর্টের সব যাবতীয় কাজ শেষ করে ভোরের দিকে এয়ারপোর্ট থেকে বের হলো।
১ বছর পর বাংলাদেশে আসা।কতই কিছু না আছে এই দেশে।সব থেকে বড় কথা ভালোবাসা এখানে আছে।হ্যাঁ! অনুভবের ভালোবাসা। কতদিন দেখে না ছায়া কে।কতদিন দুজখে চোখ রেখে নিজের না বলা কথা গুলা বলে না।কতদিন ওদের কথা হয় না।জানি না ছায়া কি অনুভবকে দেখে সবার সামনে জড়িয়ে ধরবে?নাকি খুশিতে কান্না করে দিবে?উফফ ভাবতেই কান্না আসছে।আমি আসছি ছায়া।তোমার কাছে আসছি।এখন আর তোমাকে দূরে রাখবো না।
বউ করে আনবো।আর সহ্য করতে হবে না তোমার কষ্ট।হ্যাঁ! অনুভব ছায়া কে পাগলের মতন ভালোবাসে।যতটা ভালোবাসলে তাকে পাগল বলা যায় তার থেকেও বেশি।কিন্তু অনুভবো জানে না যে ওর বুকের বাম পাশের ভালোবাসা অন্য কারোর বউ।এয়ারপোর্টে থেকে বের হয়ে দেখতে পাচ্ছে সবাই এসেছে অনুভবকে নিতে।অনুভব সবাইকে জড়িয়ে ধরছে।ছায়া কে খুঁজছে।কিন্তু ছায়া কোথায়? ছায়া কি আমাকে জড়িয়ে ধরবে না?খালামনি খালামনি ছায়া আসেনি?ছায়া কোথায়?
খালামনি- ছা– ছায়া– ছায়ার কথা পরে হবে আগে বাসায় চলো বাবা।অনুভবকে নিতে অনুভবের খালামনি, অনুভবের মা বাবা, কাজিন সবাই আসছে কিন্তু ছায়া আসেনি কেন?ছায়ার কি কিছু হয়েছে?ছায়া মনে হয় পড়াশুনায় বেশি মনোযোগী হয়ে গেছে তাই মনে হয় আসেনি।সামনে ছায়া এইচএসসি। এর জন্যই তো আমাদের মাঝে কথা হয় না ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে।খালামনিও তো তাই বল্লো যে ছায়া এখন শুধু পড়াশুনা করে তাই ফোন ধরে না।আমিও না বেশি ভাবছি।কিন্তু মন যে মানে না।সারা পথ অনুভবের কাজিন রা অনেক কথা বল্লো কিন্তু অনুভবের মাথায় শুধু ছায়ার কথাই ঘুরছে।বাসায় যেয়ে ছায়াকে জিজ্ঞেস করবে কেন যায়নি?বাসায় আসার পর সব জায়গাই ছায়া কে খুঁজছে কোথাও পায়নি।খালামনি খালামনি ছায়া কোথায়?খালামনি
– বাবা ছায়ারতো বিয়ে হয়ে গেছে।কথাটা যেন বিষ থেকে বেশি ভয়ানক লাগছে অনুভবের কাছে।গলাটা ভারি হয়ে আসছে।মনে হচ্ছে কেউ গলায় চাকু দিয়ে আঘাত করছে।পুরা বাসা বাড়ি এক করে রাখছে অনুভব। কেন ছায়া কে বিয়ে দিল?আমাকে কেন বলোনি?কি করেছি আমি?তুমি কি জানো না আমি ছায়াকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।ছায়ার কোথায় বিয়ে হয়েছে বলো কিভাবে হয়েছে।আমি পারবো না ছায়ার চোখে পানি দেখতে।আচ্ছা ছায়ার বর কি ছায়াকে সুখে রাখছে?ছায়া যদি কান্না করে?না না আমি পারবো না।ছায়ার চোখের পানি আমি সহ্য করবোনা।পরে অনুভব সেন্সলেস হয়ে যায়।অনুভবের খালামনি হলো ছায়ার সৎমা।ছায়ার বাবা ছায়ার মা মারা যাওয়ার ১ মাস পরে বিয়ে করেন নাজমা বেগমকে(অনুভবের খালামনি)।
ছায়ার বয়স তখন ১০ বছর।ছায়া শুধু ছায়ার মা এর কবরে যেয়ে শুয়ে থাকতো।যখন শুনলো ছায়ার বাবা আবার বিয়ে করছে।কেন জানি মানতে পারত না।ছায়ার কোন ভাই বোন ছিল না।ছায়া একাই ছিল।আর নাজমা বেগম ( অনুভবের খালা) তিনি দেখানোর স্বভাবের ছিল।সবার সামনে খুব ভালো সাজতো।কেউ তাকে খারাপ মনে করবে এটা তার সহ্য হবে না।ছায়ার বাবার ২য় বিয়ের পর নাজমা বেগম সবার সাম্নে ছায়াকে অনেক আদর করতো একদম মাথায় তুলে রাখতো।সবাই মনে করতোযে না ছায়া একজন ভালো সৎমা পাইছে।কিন্তু ভিতরে ভিতরে নাজমা বেগম ছায়া কে দেখতে পারতো না।নাজমা বেগমের আপন বোনের ছেলে হচ্ছে অনুভব।নাজমা বেগম একজন বিধবা।তার কোন সন্তান নাই।তাই তার সাথে ছায়ার বাবার বিয়ে হয়।নাজমা বেগম অনুভবকে খুব আদর করে।
নিজের ছেলের মতন।ছায়ার বাবার ২য় বিয়ের পর আত্মীয় স্বজনরা যখন চলে গেল।তখন থেকে যেন ছায়ার উপর অত্যাচার শুরু হলো।সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানানো থেকে শুরু করে সব কাজ।ছায়া যেন নিজের সামনে একটা মানুষের এত পরিবর্তন কখনো দেখেনাই।১১ বছর বয়সে যেন সব শিখে গেল।বাসায় যখন মেহমান আসে তখন ছায়াকে রাজরানি করে রাখে।সকালে ৯ঃ৫৬ এখনো ঘুম থেকে উঠতে পারেনি ছায়া।রাতে ব্যাথায় ঘুমাতে পারছিলো না পরে ঘুমার ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছে। তাই আর সকালে উঠতে পারে নাই।স্পর্শের আজকে ছুটি।
তাই স্পর্শ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।নিচ থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজে স্পর্শের ঘুম ভাংগে।স্পর্শ দরজা খুলে নিচে যেয়ে দেখে স্পর্শের মা কান্না করতে করতে বলছে ” কি বউ আনলাম সারাদিন ঘুমায় আমার কোন কাজ করে না,ছেলেটাকেও বশে আনছে,কি বউ আনলাম আমি কি বউ আনলাম”স্পর্শ – আহা মা চিল্লাচ্ছো কেন? ছায়ার শরীর ভালো না তাই শুয়ে আছে। এত কাহিনি করার কিছু নাই।আমি ছায়া কে ডেকে তুলছি।
স্পর্শ ছায়ার কাছে যেয়েই কেন জানি মায়া লাগলো। বেচারার জামার উপরে রক্তের দাগ ভেসে উঠেছে।কতই না মারছে। এত মারা উচিত হয় নাই।কিন্তু ছায়ার সাথে অন্য কাউকে দেখতে পারবো না।তাই আমাকে আমার বউকে সায়েস্তা করতে হবে।ভালো বাসি ছায়াকে আমি।এই বলে এক বালতি পানি ছায়ার গায়ে ঢেলে দিল।ছায়ার কাল রাতে জ্বর আসছে ফলে পানি যেন বরফের মতো ঠান্ডা মনে হলো। কিছু বুঝার আগেই স্পর্শ ছায়ার গালে অনেক জোরে থাপ্পড় মারলো।
এতক্ষণ ঘুমানো লাগে হারামজাদি? জানোস না আম্মু অসুস্থ? তুই কি নবাবজাদি যে বেলা করে ঘুম থেকে উঠবি।ছায়া যেন তাকাতে পারছে না।সবকিছু অন্ধকার দেখছে।
চলবে ………।।
লেখক – আয়না রহমান ছায়া।(ছদ্মবেশী)