-তোমার নাম কি মা?
,
রুহি চুপ করে আছে। আবিরের মা শায়লা চৌধুরী রুহির এই আচরণে একটু অবাক হলো। ভাবলো হয়তো বা তার বলা কথাটা রুহি বুঝতে পারেনি। তাই আবার জিজ্ঞাসা করলো।
কিন্তু আগের মতই চুপকরে বসে থাকলো রুহি। মিসেস শায়লা এবার একটু ঝাঝালো কন্ঠে বললেন,
,
-কি ব্যাপার কথা বলছো না কেন ? বোবা নাকি তুমি?
,
শায়লা চৌধুরীর জোর গলায় কথা শুনে রুহি কেপে উঠলো। তবুও কোনো কথা বললো না।
,
রুহির মা রহিমা বেগম কাপা কাপা বলল,
,
– জে ম্যামসাব আমার মাইয়াটা বোবা।
,
শায়লা চৌধুরী এবার রেগে গেলো,
,
– কি? বোবা মেয়ে? এই বোবা মেয়ে হবে চৌধুরী বাড়ির বউ? তোমরা গরীব তবুও রাজি হয়েছি তোমার মেয়ের সাথে আবার আবিরের বিয়ে দিতে।
তাই বলে একটা বোবা মেয়েকে আমি ঘরের বউ করতে পারবোনা না।
এই আবির চল। এখানে তোর বিয়ে হচ্ছেনা।
,
আবির যেন মায়ের কোনো কথায় শুনতে পাচ্ছে না। চোখ আটকে গেছে রুহির পিচ্ছি পিচ্ছি হাতের দিকে। এক হাতের ভিতর আরেক হাত নিয়ে রুহি মুচড়া মুচড়ি করছে।
,
ছেলের এমন হা করে বসে থাকতে দেখে আবিরের মা বলল,
-হা করে বসে আছিস কেন? চল।
,
-বিয়ে টা এখানেই হবে মা। এবং এখনি হবে।
,
কথাটা রুহি শুনলো কিনা আবিরের জানা নেয় তবে চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল রুহির হাতে পড়লো। যেটা আবিরের চোখ এড়ালো না।
,
আবির ওর মাকে অবাক করে দিয়ে রুহির বসা চেয়ারটার সামনে হাটুগেড়ে বসে পড়লো। শায়লা চৌধুরী আবিরের এই পাগলামি দেখে থ মেরে গেছে। চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির একমাত্র মালিক একটা গাইয়া বোবা মেয়ের সামনে ভ্যাবলাকান্তের মত বসে আছে এটা দেখা আসলেই খুব বিরক্তিকর।
,
তাই আবিরের মা ছেলের এই পাগলামি দেখে মোটেও সন্তুষ্ট না। ছেলের একটা গরীব ঘরের মেয়ে পছন্দ হয়েছে তবুও শায়লা চৌধুরী তার আবদার মেনে নিয়েছে, কিন্তু একটা বোবা মেয়ের সাথে সংসার করবে কি করে এটা ভেবেই শায়লা চৌধুরী এখানে বিয়ে দিবেন না বলে বেকে বসেছেন।
,
কিন্তু এসবের কোনো কিছুতেই যায় আসে না। সে তো পাগলেরমত রুহির সামনে বসে তাকে দেখতে ব্যস্ত। দুনিয়ায় কি হচ্ছে তার এখন দেখার দরকার নেয়। শায়লা চৌধুরী “আবির” বলে একটা জোরে হুংকার দিলো।
,
মায়ের ডাকে আবিরের ঘোর কাটলো। ভালো করে খেয়াল করে দেখিলো সে স্যুট-কোট পরে মাটিতে বসে আছে আর সামনের চেয়ারে রুহি ছলছল চোখে অবাক হয়ে আবির কে দেখছে। তাড়াতাড়ি করে বসা থেকে উঠলো আবির। মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবলো, কি একটা বোকামি করে ফেললাম আমি। মায়ের সামনেই মেয়েটার সামনে এই ভাবে বসে পড়লাম আমি? এই মেয়ের জন্য আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?
,
-আবির এক্ষুনি এই বাসা থেকে চল। তোর সব পাগলামি সহ্য করেছি। কিন্তু আর না। এই মেয়ের সাথে তোর বিয়ে হবেনা।
,
-মা আমি তোমার সন্তান। তোমার মত আমিও এক কথার মানুষ। আমি এই মেয়েকেই বিয়ে করবো।
,
-আচ্ছা, তাহলে তুই বিয়ে কর আমি গেলাম।
,
শায়লা চৌধুরী রাগ করে রুহিদের বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। ড্রাইভার জিজ্ঞাসা করলো, ছোট সাহেব আসবেন না?
,
ড্রাইভারের কথা শুনে মেজাজ আরো বিগড়ে গেল শায়লা চৌধুরীর,
-না, তোমার ছোটো সাহেব আসবেনা। এখন তুমি গাড়ি চালাও। সে এই বাড়িতে বিয়ে করে এখানেই সংসার করবে।
,
ড্রাইভার ভালো করেই জানে শায়লা চৌধুরীর মেজাজ কেমন তাই চুপচাপ গাড়ি চালাতে লাগলো।
,
এদিকে আবির রুহির বাবামায়ের সামনে বসে আছে।
রুহির বাবা বলল,
– আবির বাবা, আপনে চইলা যান। নাহলে আমাগো ম্যাডাম রাগ কইরবো। তিনি রাগ করলে যে আমাদের খাওন দাওন বন্ধ হইয়া যাইবো। আমার মাইয়া ডারে আপনার বিয়ে করন লাগতো না।
,
-আমার মায়ের রাগ করার সাথে আপনার খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্পর্ক কি?
,
-আমি আপনাগো যে চিনির মিলডা আছে তাতে কাম করি। তাই আপনি যদি ম্যাডামের কথার অবাধ্য হন তাইলে তিনি আমার চাকরী থেকে বাইর কইরা দিবো। এই বয়সে অন্য কোথাও আত কাজ করার মত শক্তিও নাই আমার দেহে।
,
খালেক মিয়ার কথা শুনে রহিমা বেগম একটু বিরক্ত হলেন আবির কে বুঝতে না দিয়ে তিনি খালেক মিয়াকে কনুই দিয়ে গুতা দিলেন। যার অর্থ, এতো বড় ঘরের ছেলে কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবেনা। কনুই দিয়ে গুতা দেওয়াটা আবিরের দৃষ্টি এড়ালো না। মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবির উঠে দাড়ালো। খালেক মিয়ার পাশে দাড়িয়ে ওনার কাধে হাত রেখে বলল,
-আমার মা একটু রাগি। কিন্তু তার মন এতোটা ছোট না যে সে কারো রুজি রুটি ছিনিয়ে নিবে। আপনি চিন্তা করবেন না আংকেল, আমার মা বাইরে যেমন রাগি ভিতরে তেমন নরম। একসময় দেখবেন এই বউমা ছাড়া কিছুই বুঝবেনা।
,
আবিরের কথা শুনে খালেক মিয়া খানিকটা অবাক হয়ে বলল,
,
-তার মানে…..
,
-জ্বি, আংকেল তার মানে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করছি। আজকে আমি আসি কালকে মাকে নিয়ে আবার আসবো আর কালকেই বিয়ে হবে।
,
এই বলে আবির চলে গেল। এতোক্ষণ ধরে নির্বাক দর্শকের মত চুপচাপ বসে আবিরের কথা শুনছিলো রুহি। এতো ধনী ঘরের ছেলে কিন্তু তার ভিতর ধনী পনার রেশমাত্র নেয়। একটা মানুষ এতো ভালো কিভাবে হতে পারে। মানুষটাকে যতই দেখছে রুহির মনটা ততই উতলা হয়ে উঠছে। একেই কি বলে প্রথম ভালোবাসার অনুভুতি?
,
রুহির ভাবনার মধ্যে আবির মুখে মিষ্টি হাসি টেনে একবার শুধু বলে “আসি”। আবিরের এই হাসিটা দেখে রুহির মনের অনুভূতির জোনাকিরা ঝিলমিল করে জ্বলছে।
,
আবির ওই দিন রুহির বাড়ি থেকে বিদায় নেয়। কিন্তু রেখে যায় রুহির জন্য একবুক অনুভূতি। যার এখনও নাম দিতে পারেনি রুহি।
,
,
চৌধুরী প্যালেসে,
,
শায়লা চৌধুরী এই বিকাল থেকে ঘর থেকে বের হয়নি। আবিরের বাবা আরবাজ চৌধুরীও তাকে ঘর থেকে বের করতে পারেনি। রুহিদের বাড়ি থেকে ফিরে সেই যে নিজেকে ঘর বন্দি করেছে আর বের হয়নি।
,
আবির বাসাতে ফিরে সবার কাছথেকে শোনে তার মা এমন দরজা বন্ধ করে বসে আছে। আর দেখে বাবা লিভিং রুমে সোফাই বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছে।
,
আবির বাবার সামনে বসতেই আরবাজ চৌধুরী পেপারটা পাশে রেখে আবিরের পাশে গিয়ে বসলো,
,
-কেমন দেখলি রে আমার বউমাকে?
,
-মা কিছু বলেনি?
,
-বলবে না কেন? বলেছো তো? মেয়েটা বোবা ওরা অনেক গরীব এসব বলেছে। নেগেটিভিটি ছাড়া আর কি বলবে বলতো? আচ্ছা, বোবা তো আল্লাহর সৃষ্টি তাহলে তাকে অবহেলা করা কেন হবে। তুই ওই মেয়েকেই বিয়ে করবি। ওই হবে চৌধুরী পরিবারের পুত্রবধু। তোর মা কি করে আমি দেখবো।হু।
,
-সত্য বলছো তো বাবা?
,
ছেলের কথায় লম্বা একটা ঢোক গিললেন আরবাজ চৌধুরী। কথার ফ্লোতে বলে ফেলেছেন, কিন্তু স্ত্রীর ঝাঝালো কন্ঠ তিনি খুব ভয় পান।
,
রাতে খাওয়া দাওয়া করার সময়ও শায়লা চৌধুরী নিচে আসেনি খেতে। তাই আবির বোয়াকে বলে প্লেটে খাবার নিয়ে মায়ের রুমের সামনে হাজির হয়।
,
চলবে
বানান ভুল হলে মাফ করবেন।
লেখা – রাফিজা আখতার সাথী
বিঃদ্রঃ অনেকে বলবেন, যে বোবা সে কানে শোনে না। কিন্তু এই গল্পে ঘটনাটা অন্য। বিষয়টা পরে পরিষ্কার করা হবে। ধন্যবাদ।