রোহিঙ্গা সমস্যা এখনকার নয়। বাংলাদেশ জন্মের আগে এমন কি ভারতের জন্মের আগে থেকে এই সমস্যা।তারা কোন্দেশের নাগরিক নয়। তারা বাস করে মিয়ানমারের ভুখন্ডে। তাদের ভাষ্যে তারা হাজার বছরে ধরে আরাকান রাজ্যে বসবাস করছে। তাদের ইতিহাস হাজার বছরের পুরানোতাই সঙ্গত কারনে বাংলাদেশ সরকার তাদের জাতীয়তা দেওয়ার বা বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে স্বীকার কোন প্রশ্নই আসেনা।
অন্যদিকে ৫০ বছর ধরে মিয়ানমারে চলছিল সামরিক শাসন। চীন পন্থি এই সামরিক শাসকদের যথেষ্ট শক্তি ছিল গণচীনের মতো মিয়ানমার-কে নাস্তিক্যবাদে দীক্ষিত করা। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের থেরবাদে বিশ্বাসী মিয়ানমারের জনগন আসলেই খুব মৌলবাদী। চীনা পন্থি সামরিক শাসনের বেড়ার মধ্যে থেকেও তারা তাদের মৌলবাদীত্ব বজায় রেখেছে। মিয়ানমারের সামরিক শাসক কিংবা অহিংস মানবতাবাদী গৌতম বুদ্ধের অনুসারী মিয়ানারের জনগণও রাখাইনের এই রোহিঙ্গাদের মেনে নেয়নি। তাদের মতে- রোহিঙ্গারা তাদের শারীরিক কাঠামো, গায়ের রঙ কিংবা চেহারা, কিছুতেই মিল রাখে না। বরং তারা বাংলাদেশ কিংবা ভারতের আসামের লোকদের সাথে মিলে যায় বেশ। আবার বাংলায় কথা বলে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য তারা মুসলিম। তাই মিয়ানমারের কি সামরিক জান্তা কি জনগন কেউ রোহিঙ্গাদের সে দেশের বলে মেনে নেয়নি কখনো নিবেও না।
ইতিহাস বলে ১৯৪২ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান মিয়ানমার দখল করলে ব্রিটিশরা মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার আসতে পালিয়ে বাধ্য হয় সাথে ২২০০০ রোহিঙ্গা সহ। পরে ব্রিটিশরা রোহিঙ্গাদের স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গড়ে দেওয়ার শর্তে তাদের সাথে জাপানের বিরুদ্ধে যোগ দেওয়ার আহবান জানায়। পরবর্তিতে ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধিন হলে রোহিঙ্গারা আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। কিন্তু তাদের এই সংগ্রাম বিফল হয়। সে সময়ে জন্ম নেওয়া অবিশ্বাস এখনও রোহিঙ্গাদের তাড়া করে ফেরে। ফলে তারা দিনে দিনে একটি রাষ্ট্রহীন উদ্ভাস্তুতে পরিনত হয়। প্রায় অর্ধশতাধিক বছর যে মিয়ানমার সরকার তাদের স্বীকৃতি দেয়নি ভবিষ্যতে সে সরকারের কাছে তাদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা অলিক কল্পনা বই কিছু না।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশঃ
এই পর্যন্ত মোট চারটি ধাপে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে-
১ম বারঃ
১৭৮৪ সালে রাজা বোদাওপায়া আরাকান দখল করে তাঁর রাজধানী গঠন করলে
২য় বারঃ
জাপান বার্মা (মিয়ানমার) দখল করে ব্রিটিশদের বিতাড়িত করলে ২২০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ প্রবেশ করে।
৩য় বারঃ
জেনারেল নে উইন ১৯৭৮ সালে অপারেশন ড্রাগন কিং-এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব নথিবদ্ধ করার মাধ্যমে আদম শুমারি করার প্রাক্ষালে বিদেশিদের বাছাই করার মাধ্যমে। এই সময় প্রায় ২০০০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ করে পরে GoB ও UN-এর চাপে ফেরত নিতে বাধ্য হয়। সেবারও অনুপ্রবেশকারীরা তাদের হত্যা ধর্ষনের অভিযোগ আনেন।
৪র্থ বারঃ (সবচেয়ে বেশী)
১৯৯১-৯২ সালে The State Law and Order Restoration Council (SLORC) উত্তর রাখাইন রাজ্যে মুসলিম সন্ত্রাসীদের দমনের জন্য সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে দেয়। এই সময় তারা বাংলাদেশ বর্ডার অব্দি নানা সামরিক স্থাপনা নির্মান করে। এই সময় রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছাশ্রমে বাধ্য, জমি দখল, স্থানান্তর, শারীরিক নির্যাতন, হত্যা ধর্ষন করে। মসজিদ ভেঙ্গে দেওয়া হয়, ধর্মিয় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়, মুসলিম নেতাদের লাঞ্ছিত করা হয়।
বর্তমান রোহিঙ্গা সংখ্যাঃ
বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজারে দুটি ক্যাম্পে ২৯০০০ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস। তারা ৯১-৯২ সালে আসা ২৫০০০০ রোহিঙ্গা-এর অংশ। বাংলাদেশ সরকারের হিসাবে বর্তমানে ২০০০০০ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন গ্রামে বসবাস কছে। উত্তর রাখাইন রাজ্যে মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা ছিল ৮০০০০০ তাঁর প্রায় ৩০% বাংলাদেশে অবস্থান করছে সেই ১৯৭৮ কিংবা ৯১/৯২ সাল থেকে তাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার কোন লক্ষন নেই। মিয়ানমার সরকার নেওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা পোষন করে না।
সরকার বা আমাদের কি করনীয়ঃ
আমদের সরকার কিছু করতে পারবে না কারন বাংলাদেশের সরকারের ঘাড়ে এখন প্রায় ১৭ কোটি উর্ধ জনগনের ভার। যাদের মানবতার নিশ্চয়তা কোন সরকারই এখনো প্রতিষ্টা করতে পারেনি। পেপার খুললেই বাংলাদেশের জনগনের মানবতা বিপন্ন হওয়ার নমুনা দেখা যায়। সেই সাথে আছে ১৯৭৮/১৯৯১-২ সালে মানবতা দেখানোর ফলাফল ২৯০০০ রেজিস্টারকৃত আর ২০০০০০ পলাতক রোহিঙ্গা। তাই যে দেশের কোনও সরকার আজো পর্যন্ত তাঁর নিজের জনগনের মানবতা রক্ষা করতে সামর্থ হয়নি সেই দেশের সরকারের কাছে আবার বাইর থেকে মানবতা ধার করে আনার কথা আশা করা মুর্খতা বই কিছু না।
এক কাজ করা যায় আমরা যারা মানবতা নিয়ে লাফাচ্ছি তারা কেন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে চেস্টাকারীদের কাছে গিয়ে একেক জন একেক জনের ভার নেই না। এই ব্যাপারে আমরা সরকারের কাছে আবেদন করতে পারি “আমরা প্রত্যেকে একজন রোহিঙ্গার ভার নেব”। তাঁর ভরণপোষণ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সকল কৃতকার্যের জন্য দায়ী থাকব।
আর এই কাজ যদি আমরা কেউ করতে না পারি তাহলে আসেন আমরা ব্লগে বা ফেবুতে সস্তা মানবতা দেখানোর ভন্ডামী তুলে রেখে ফেবুতে মেয়েদের ওড়না নিয়ে আলোচনা করি। আর আমি কে? কি করি?? কি করতে পারি??? তাঁর ফিরিস্তি দেই।
লিখেছেন: কর্নফুলির মাঝি ..