হাতছানি পর্ব ১

” রিমি তোর বরের চরিত্র ভালো না। ”

সেদিনও এই কথা টি রিমি কে বলেছিল নাহিদা। তবে রিমি উল্টো নাহিদা কে ধমক দিয়ে বলেছিলো….

– দেখ, প্রমাণ ছাড়া কারো দোষারোপ করবি না। আমি আমার স্বামীকে বেশ ভালো করেই জানি। ও এমন ছেলে নাহ। সেদিনের কথা আজকেও মনে করিেয় নাহিদা বললো….”রিহানের চরিত্র ভালো না। অন্য মেয়েদের সাথে হোটেল যায়। ওহ! তুই তো আবার প্রমাণ ছাড়া কিছুই বুঝিস না। এই দেখ তোর বর অন্য মেয়ের সাথে হোটেলে যাচ্ছে। এখনো কি আমার কথা বিশ্বাস হবে না?? ”

রিমির দিকে তাকিয়ে বেশ রাগী কন্ঠেই কথাগুলো বললো নাহিদা। নাহিদা কি বলেছে সেদিকে একটুও খেয়াল নেই রিমির। নাহিদার দেওয়া ফোনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। “যদিও রিহান কে খুব স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে না তবু যেনো রিহানকে খুঁজে পেলো ফোনের স্কিনে। সেখানে অন্য একটি মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে হোটেল রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ” রিমির কাঁধে হাত দিয়ে নাহিদা কাছে এসে বললো…..

– সেদিনের কথা তো বিশ্বাস করলি না। এখন তো দেখতে পাচ্ছিস? জীবনের সব চেয়ে বড় ভূল এটাই তোর। তোর মতো এতো ভালো মেয়ে রিহান নামক একটা পশু কে বি*****- নাহিদা……..

” নাহিদার কথা শেষ হওয়ার আগেই বজ্রকন্ঠে প্রতিবাদ করে উঠে। রিমির কথার মাঝে নাহিদা মাঝ পথে থেমে যায়। রিমি চোখের পানি আড়াল করতে পারলেও কথার মাঝে ফুটে উঠে ভিতরের তীব্র কষ্ট টা। যা অনিচ্ছাকৃত ভাবেই প্রকাশ পেয়ে যেতে চেষ্টা করে। লাগামহীন যেনো…….. “আর পারবেই কি করে আঁটকে রাখতে? যাকে ভালবেসে সবকিছু তুচ্ছ মনে করে চলে এসেছে তাকে এমন ভাবে দেখবে কখনোই আশা করে নি। রিমি নিজেকে কাজের ব্যাস্ততা দেখিয়ে নাহিদা উদ্দেশ্য করে বললো…..

– দেখ, কারে সম্পর্কে না জেনে বাজে কথা বলবি না। আমি খুব ভালো করেই রিহান কে চিনি। সে এমন কাজ কখনোই করবে না।- কিন্তু…… – কোন কিন্তু নাহ। কার না কার ছবি তুই দূর থেকে দেখেই রিহান বলে যাচ্ছিস। – দেখ, রিমি আমি তোর….- না। তোর সাথে এই সব কথা বলতে চাচ্ছি নাহ। আমার কাজ আছে অনেক। তুই বসবি নাকি চলে যাবি? ” রিমির কথায় কিছু টা আশাহত হলো নাহিদা। তবু হাল না ছেড়ে দেয় নি। হয়তো রিহানের মুখোশ একদিন ঠিক দেখাতে পারবে। “রিমির দিকে তাকিয়ে নাহিদা বললো……- না রে আজকে একটু তাড়া আছে। অন্য দিন বসবো। আসি, আর শোন এখনো সময় আছে। একটু চোখ কান খোলা রাখ। আজকাল কের ছেলেদের উপর বিশ্বাস নেই। ঘরে বউ রেখেও বাহিরে অন্য মেয়ে দের সাথে ঘুরে বেড়ায়। কথা গুলো বলেই চলে গেলো নাহিদা। নাহিদার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো রিমি। মনের মাঝে হাজারো প্রশ্ন বিরাজ করছে।” নাহিদা রিমির বাসা থেকেই বের হয়ে কাকে ফোন দিয়ে বললো….- হ্যা হ্যা, রিমি কে দেখিয়েছি। তবে বিশ্বাস করছে না। “ওপাশের উত্তর জানা নেই তবে ফোনের এ পাশ থেকে নাহিদা বললো…..

– সেটা ভাবতে হবে না। রিমি বিশ্বাস করবে। রিমি কে তো আমি জানি। ” মেয়েরা আর যায় হোক কখনোই স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিতে পারে না। তাতে স্বামী যতই খারাপ হোক না কেন? সেখানে রিহান যে রিমির ভালবাসা। সেখানে অন্য কারো পাশে কি ভাবে দেখবে? নিজেকে যতই বুঝাতে চেষ্টা করে ততোবারই ব্যার্থ রিমি। রিমির চোখের সামনে যেনো ছবি গুলো। রিহান সেখানে অন্য একটি মেয়ের সাথে হোটেলে….

“নাহ! ছিঃ ছিঃ এই সব কি ভাবছি আমি। সারাদিন মাথায় এই সব আসে। কোন কাজে মন বসাতে পারেনি। রিহান কে বেশ কয়েক বার ফোন দিলেও ফোন বন্ধ পেয়ে সন্দেহ টা ঘাড় হয়। অনেক রাত হয়ে গেলেও রিহানের কোন খুঁজ নেই। “কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে ধ্যান ভাঙে রিমির। নিশ্চয়ই রিহান এসেছে। দরজা খোলে দিয়ে আবার হাঁটা দিতেই রিহান পিছন থেকে হাত টান দিয়ে ধরে বললো……- সরি, আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো।- দেরি তো হবেই। কত মানুষের সাথে তোমার থাকতে হয়। তাঁদেরকে তো টাইম দিতে হয় তাই নাহ। ” রিহানের কথা শুনেই রিমি কথাগুলো বললো। রিমির কথা শুনেই বললো…..- এই যে এখন একদম ঝগড়া করার মুড নেই। জানো আজকে…..

– আমি বলতে বলে নি। আর তোমার অফিসে কি করেছো সেটা আমার না জানলেও চলবে।” রিমি বলেই সেখান থেকে চলে গেলো। রিহান আর কিছু বলেনি। এখন বেশি রাগালেই পড়ে আবার কান্না শুরু করে দিবে। এমনি তেই দেরি করে আসার জন্য অভিমান করে আছে। তারপর এই রাত টুকু মাঠি করতে চায় না। সারাদিন অপেক্ষায় থাকে মেয়ে টা, একটু গল্প করার জন্য। “রিহান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রিমি খাবার টেবিলে নেই। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে যখন দেখলো রিমি আসঋে না তখন উঠে গিয়ে বললো….. – কি হয়েছে? সেই কখন থেকে খাবার টেবিলে বসে আছি।

– কিছু না। “রিহান গিয়ে রিমির পাশে বসে জানতে চাইলো। আজকে রিহানকে রিমি একটু তাড়াতাড়ি আসার জন্য বলেছিলো। কাজের ব্যাস্ততায় আসতে পারেনি। আর আসবেই কি করে?? “পরের অধীনে চাকরি যে কত টুকু কষ্টের যারা চাকরি করেন তারা বুঝতে পারে। চাইলেও প্রিয় মানুষ টিকে সময় দিতে পারে না। শুধু মাত্র বাঁচার তাগিদে মনের ভিতর কষ্ট গুলো রেখে কাজ করতে হয়। যদিও মন টা পড়ে থাকে প্রিয় মানুষের কাছে। “রিহানকে কথা বলেই ওপাশে মুখ ফিরে শুয়ে পড়লো। রিহান রিমির অভিমান টুকু বুঝতে পারে। রিমি কে তুলতে চেষ্টা করে বললো…..- কিছু না মানে? খাবে না না তুমি?- না বলছি তো। – দেখি তো তোমার জ্বর আসলো কি……

– আমাকে একদম বিরক্ত করবে না। একা থাকতে দাও আমাকে। তোমার এই সব আহ্লাদ আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। ” রিহানকে বেশ চিৎকার দিয়ে কথা গুলো বলে উঠলো। রিমির আচরণে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রিহান। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। যেই রিমি রিহান ঘুম পাড়িয়ে না দেওয়া পর্যন্ত অবুঝ শিশুর মতো বায়না ধরে বসে থাকতো সেই রিমি তাঁর হাত টুকু ছুঁড়ে ফেলো দিলো? রিমির জ্বর এসেছে কি-না দেখার জন্য কপালে হাত স্পর্শ করার আগেই রিমি চিৎকার করে উঠলো। রিমির আচরণে অজান্তেই চোখে পানি চলে আসলো। রিহান নিজেকে সামলে নিয়ে কোন রকমে বললো…..- আচ্ছা, তুমি শুয়ে থাকো আমি খাবার নিয়ে আসছি। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

– তোমাকে আমার চোখের সামনে থেকে যেতে বলেছি। “রিহানের কথা শুনেই আবারো চিৎকার দিয়ে বললো। রিমির চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। চুপচাপ সেখান থেকে অপরাধীর মতো চলে আসে। রিমি কে আর কিছুই বলেনি। ” টেবিলের খাবার গুলো তুলে রেখে দেয়। রিমি কে ছাড়া কখনোই একা খায় নি। আর খাবেই কি করে? “রিমি তো শুধু বিয়ে করা বউ নামের বস্তু নাহ। শুধু প্রয়োজন হলো কাছে টেনে নিবে। প্রয়োজন শেষে আবার ছুঁড়ে ফেলে দিবে। ” রিমি তো সেই যে সবসময়ের সঙ্গী। বিপদে আপদে রিহান কে ভরসা দেয়। সারাটি দিন রিহানের জন্য অপেক্ষায় থাকে। রিহান তো অনেকের সাথে কথা বলতে পারে। সারাদিন কাজের চাপ আর বন্ধুদের সাথে আড্ডায় থাকে কখন যে সময় চলে যায় বুঝতেই পারে না। “অথচ রিমি! শুধু মাত্র স্বামীর জন্য পথ চেয়ে অপেক্ষায় থাকে। শুধু স্বামী না একজন ব্যাক্তি যার সাথে প্রাণ খোলে কথা বলতে পারে। সারাদিনের গল্প গুলো বলতে পারে। রিহান সবসময়ই চেষ্টা করে সময় বের করে প্রিয় মানুষটির পাশে সাথে থাকার জন্য। প্রত্যেক স্বামীর তা করা নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।

” রিহান একগ্লাস পানি খেয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে। রিমি কে আর ডাকার সাহস হয় নি। এমনিতেই রেগে আছে কাল সকালে নিজেই রাগ অভিমান ভূলে রিহানের কাছে চলে আসবে। সারাদিন কাজের চাপে খুব ক্লান্ত থাকায় কখনো ঘুমিয়ে পড়ে বুঝতেই পারেনি। “রিমি ও পাশ ফিরে শুয়ে থাকলেও ঘুম যেনো হারিয়ে যায়। আড়চোখে বেশ কয়েক বার রিহানকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করলেও অভিমানে তাকায় নি। সেই কখন থেকে ফোন বেজেই যাচ্ছে। এতো রাতে আবার কে ফোন করলো? রিমির সন্দেহ টা ক্রমশ বাড়তেই থাকে। আবার না…..

” রিমি দু-টানায় পড়ে যায়। কি ভাবছে সে এই সব? “বেশ কয়েক বার ফোনে কল আসার পর রিমি উঠে যায়। রিমি বেশ ভালো করেই জানে রিহান একবার ঘুমিয়ে পড়লে আর উঠার নাম নেই। “নাহিদার দেখানো ছবি গুলো দেখে মনে সন্দেহের তীর বেঁধে যায়। যা হাজদর বার চেষ্টা করেও দূর করা যায় নি। আর যাবেই কি করে? যদি কখনো প্রিয় মানুষের জন্য একবার সন্দেহ সৃষ্টি হয় তবে তা ক্রমশ বাড়তেই থাকে। যদি না দুজনে কথা বলে তা সমাধান না করে তাহলে এল সময় দুজনের পথে বাঁধা সৃষ্টি হয়ে দাঁড়ায়।

” রিমিও মনে কিছু টা সন্দেহ। দু’ টানায় পড়ে যায় ফেন ধরবে কি-না? এতো রাতে কে ফোন করেছে জানার জন্য ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো…..- হ্যালো, তোমার স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়েছে? ” মেয়েলি কন্ঠ শুনে চুপ হয়ে গেলো রিমি। তাও এই মধ্য রাতে যেখানে স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়েছে কি-না জানতে চাচ্ছে। রিমির মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। কে যেনো গলা চেপে ধরে বসে আছে। “এ পাশ থেকে সাড়াশব্দ না পেয়ে আবার বললো…..-

আজকে তুমি………….(চলবে)

লেখকঃ- Khairozaman Akash