রাত তিনটার রহস্য পর্ব ১

দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার আমি প্রতিদিনের মত এশার নামাজ পড়ে বাজারে যাই আজকে বাজারে একটু কাজ ছিল কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হব কিন্তু বাজারের সব দোকানপাট গুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

রাত তখন দশটা বেজে কুড়ি মিনিট বাজার থেকে আমার বাড়ি প্রায় তিন কিলোমিটার আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি আকাশ মেঘলা থাকার কারণে বেশ অন্ধকার লাগছে।

আমি মোবাইলের টর্চটা অন করে হাটতে লাগলাম আমি যে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম সে রাস্তা ছিল মাটির কাঁচা রাস্তা রাস্তার বাম পাশে ছিল খাল আর ডান পাশে ছিল পাটক্ষেত।

কিছুদূর হাটার পর একটা পূজামণ্ডপ সামনে পড়লো মন্ডবের উপর একটা মূর্তি 25 ফুট উঁচু হবে ওর পাশে শ্মশান ঘন অন্ধকারের মধ্যে মূর্তিগুলোকে খুব ভয়ংকার দেখাচ্ছিলো শ্মশানের দিকে যখন তাকালাম মনে হয় কেউ যেন একটা ওখান থেকে দৌড়ে আসবে আমাকে ধরতে কিছুই দেখি না কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ বুঝে আমাকে দেখছে আমাকে অনুসরণ করছে আমার পেছনে বুঝি কেউ আছে ।

দোয়া পড়তে থাকি মনে মনে প্রথমে দোয়া গুলো ঠিকঠাক হলেও পরের দোয়া গুলো ঠিকঠাক যেন মনে হচ্ছে না বুঝতে পারছি। এটা কি হচ্ছে আমার সাথে প্রচন্ড ভয় করছে শরীরটা ভয়ে কাঁপছে ।

বাড়িতে কল করার জন্য মোবাইল টিপ দিলাম কিন্তু মোবাইলে কোন নেটওয়ার্ক নেই আমি সবার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম কিন্তু কারোর ফোনে,, ফোন দিতে পারলাম না আমি আবার হাটা শুরু করলাম।

হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর যাওয়ার পর পাশের খালে একটা নৌকা দেখতে পায় একটু সাহস পায় নৌকায় লাইট মারি কিন্তু কোন সাড়াশব্দ নেই আমি জিজ্ঞেস করি কেউ কি আছো?? তবুও কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে নৌকার কাছে যায় নৌকার ছাউনির ভিতরে যখন লাইট মেরে দেখি দেখলাম আমার চেনা লোক গফুর!!

গফুর কে বললাম কিরে তুই এখন এত রাতে কি করিস এখানে!!গফুর বলল আমি না থাকলে আপনাকে কে পার করত ???

এত রাতে এমন একটা কথা শুনে আমি মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে যেটা দেখলাম আমি অবাক হয়ে গেলাম আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম এটা আমি কি দেখলাম আমি যখন বাজার থেকে বের হয়েছিলাম তখন রাত দশটা কুড়ি মিনিট ছিল আর এখন রাত তিনটা বেজে যায় এটা কি হলো আমার সাথে এতক্ষণ আমি কোথায় ছিলাম খুব বেশি সময় লাগলে 30 থেকে 40 মিনিটের রাস্তা কিন্তু আমি গফুরকে কিছুই বুঝতে দিলাম না।

গফুরকে বললাম আমাকে একটু পার করে দে এই বলে আমি গফুরের নৌকায় উঠে বসলাম নৌকা পাড়ে ভেড়ার পর আমি গফুরকে বললাম গফুর আমাকে একটু বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিবি গফুর একটু ভেবে বলল ভয় পাইছেন???.. চলেন…..আমার সাথে….

আমরা দুজন একসাথে হাঁটছি কিছুদূর আসার পর আমি খেয়াল করলাম গফুর আমার পিছন পিছন হাটে সামনে একটা কবরস্তান পরল আর কবর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে আর একটা অদ্ভুত গন্ধ আসছে এমন সময় আমি ভয়ে ভয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম।

কাছে এসে যখন লাইট মারলাম কবরের দিকে আমি দেখলাম একটি মেয়ে সাদা কাপড় পরা অবস্থায় চুলগুলো এলোমেলো ছেড়ে দেয়া কবরস্থানের ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে আর হাতের ইশারায় আমাদের কাছে ডাকছে মেয়েটিকে আমি চিনতে পেরেছিলাম তার নাম ছিল ময়না আমি গফুরকে বলি ওর নাম ময়না না??

হঠাৎ বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো শরীরটা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।

আমার পাশে গফুর আর নেই আমিতো অবাক হয়ে যাই আমি অবাক হয়ে ভয়ে চীৎকার দিলাম চিৎকার দিতে দিতে দৌড় দিলাম এমন জোরে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লাম।

আমার যখন জ্ঞান ফিরল আমি দেখলাম আমি বাড়িতে আমার মাথায় পানি ঢালছিল আমি তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম আমি এখানে কি করে এলাম তারা বলল পাশের বাগানে তুমি পড়েছিলে তোমাকে সেখান থেকে নিয়ে এসেছি।

আমি তাদেরকে সমস্ত কথা খুলে বললাম কিন্তু তারা একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে এমনভাবে যেন আমি মিথ্যা কথা বলতেছি পরে জানতে পারলাম গফুর ও ময়না একে অন্যকে ভালবাসতো।

গফুর ছিল নৌকার মাঝি আর ময়নার বাপ ছিল প্রতাপশালী ক্ষমতাবান তার পিতা তাদের সম্পর্ক মেনে না নিয়ে গফুর কে তাড়িয়ে দিয়েছিল তাদের বাড়ি থেকে তারপরে ময়না আত্মহত্যা করেছিল আর তারপর থেকে গফুর কে ও কোনদিন দেখা যায়নি আমি তখন বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা এটাই ছিল

লেখকঃ-আব্দুল কাদের

নিয়মিত চোখ রাখুন সোশ্যালব্লগওয়ার্ল্ড এ