রহস্যে ঘেরা বাংলো

সেন্স ফিরতেই নিজেকে অন্ধকার কুটিরে আবিষ্কার করলাম। আশেপাশে তাকাতেই ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম কারণ পুরো রুম জুড়ে মানুষ পশু দের কঙ্গাল। কিন্তু আমি এখানে কি করে এলাম? আমি তো টিউশনি করে বাসায় ফিরছিলাম। তাহলে এখানে আসলাম কি করে? ইশশশশশ কি বিস্রি গন্ধ ইয়ায়ায়াক। বুঝতে বাকি নেই এগুলা মানুষ প্রানীর পচা মাংসের দুর্গন্ধ। কিন্তু এদের এখানে কে মেরেছে? আর আমাকেই বা এখানে কে আনলো?

সব টাই মিশুর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ পরিবেশ কেমন ঠান্ডা হয়ে গেলো। মনের মধ্যে অজানা ভয় দোলা দিলো। ভয়ে রিতিমতো কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছে সামনের অবয়ক টাকে দেখে। কি বিস্রি চেহারা…চেহারা টা দেখেই আমি বমি করে দিলাম। মনে হচ্ছে ভেতরের নারীভুঁড়ি সব বেরিয়ে আসবে। অবয়ক টি ভয়ংকর এক হাসি দিয়ে বলে,

– খুব এসেছিস এখানের রহস্য বের করতে? কি ভেবেছিস তুই আমরা কেউ কিছুই বুঝতে পারবো না? আজ আমরা সবাই মিলে তোকে মেরেই ছাড়বো।

বলতেই আরও ৬জন হাজির হয় আমার চারপাশে। তাদের একেকজনের চেহারা আরও ভয়ংকর এবং বিস্রি । সেই মুহূর্তে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই তাড়াতাড়ি দোয়া দুরুদ পড়লাম। সাথে সাথে সেখানেই আবার সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাই।

চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আমি আমার রুমেই আছি। তাড়াতাড়ি করে আলভি কে ডাকতে লাগলাম। আলভি আমার বেস্টফ্রেন্ড। ওর সাথেই আমি এই বাংলো তে থাকি। বাংলো টি আমার বাবা কিনেছেন। অদ্ভুত কথা হলো বাবা বাংলো টিতেই নাকি নিখোঁজ হয় কিন্তু কিভাবে সেটা কেউ জানেনা। পুলিশ বাবাকে অনেক খোঁজার চেষ্টা করেছে কিন্তু পায়নি বাংলো টির মধ্যে। পরে বাংলোর পাশের পুকুরে বাবার নিস্তেজ দেহ টা পাওয়া যায়। বাবা ছাড়া আমার পৃথিবীতে আপন কেউ ছিলো না। আজ সেই বাবাও আমায় পর করে দিয়ে চলে যায় পরাপারে। কিন্তু মাথায় ঠিকই রহস্যের ভূত চেপে বসে আছে। তাইতো পুনোরায় আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে নিয়ে এই বাংলো তে উঠেছি ১সপ্তাহ হলো। আমরা দুইজনই টিউশনি করি খাওয়ার খরচ চালাতে।

আলভি দ্রুত দৌড়ে আমার কাছে আসে।

আলভি- কি হলো মিশু এভাবে ডাকছিস কেন?

মিশু- কাল তুই টিউশিনি তে যাস নি?

আলভি- আমি তো গিয়েছিলাম তুই তো যাসনি বাড়িতেই ছিলি।

মিশু- মানে কি আমি তো কাল তিয়াস(স্টুডেন্ট) কে পড়িয়ে এসেছি।

আলভি- না তুই যাসনি। তোর ফোন পাচ্ছিলো না বলে তিয়াসের মা আমায় কল দিয়েছিলো এবং জিজ্ঞেস করেছিলো তুই কেন তিয়াস কে পড়াতে যাসনি। আমি তাকে বলেছি যে তুই অসুস্থ তাই যেতে পারিস নি।

মিশু- ওয়ায়ায়াট! বাট দোস্ত বিশ্বাস কর আমি কাল সত্যি তিয়াসদের বাড়ি গিয়েছিলাম আর…

আলভি- আর কি?

মিশু- না কিছু না আগে এটা বল কাল তুই রাত কয়টায় বাড়ি ফিরেছিলি।

আলভি- ওহ কাল তো ১২:৩০ মিনিটে বাসায় এসেছি। আসলে হয়েছে কি কাল রাতেই হঠাৎ ঢাকা থেকে এক ফ্রেন্ড এসেছিলো তার সাথে কথা বলে বলেই সময় পার হয়ে গিয়েছিলো।

মিশু- ওহ।

আলভি- বাড়ি এসে তোকে খাবারের জন্য এসেও ডেকে গেছিলাম কিন্তু তুই রুমে কেমন হাসাহাসি করছিলি। বেশি জোরে ডাকলে তুই আমায় ধমক দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছিস।

মিশু- কি বলছিস তুই এসব আমি কাল আমার রুমে হাসাহাসি করছিলাম?কখন আর কিভাবে সম্ভব আমার তো কাল রাতের কোনো কথা মনেই নেই(অবাক হয়ে)

আলভি- তুই এসব কি যা তা বলছিস?

মিশু- আমি যাতা বলছি না আলভি বোঝার চেষ্টা কর। কাল রাত থেকে আমার সাথে অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত কাহীনি হচ্ছে কিন্তু কি তা আমি একদমই বুঝতে পারছি না।

আলভি- সব খুলে বল আমায়।

তারপর মিশু আলভি কে সব খুলে বললো তার সাথে যা যা হয়েছে। আলভি তো এসব শুনে শকড।

আলভি- এগুলা কিভাবে সম্ভব? কিসের রহস্যের কথা বললো ওই পিশাচ টা?

মিশু- বুঝতে পারছি না। তবে আমার কি মনে হয় জানিস? তুই আসাতেই হয়তো পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে গেছিলো আর আমি কালকের মতো বেচে গেছিলাম। নইলে আমার বাচা সত্যিই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।

আলভি- হুম হয়তো। কিন্তু সেই কঙ্গাল ভর্তি ঘরটা কোথায় ছিলো মনে আছে তোর?

মিশু কিছুক্ষণ ভেবে বললো,

মিশু- না রে মনে করতে পারছি না।

আলভি- আচ্ছা কোনো ব্যাপার না এখন আয় খেয়ে নে নইলে অসুস্থ হয়ে পরবি।

মিশু- হুম তাই ভালো হবে।

তারপর মিশু ফ্রেশ হয়ে এসে আলভির সাথে একসাথে খেয়ে নেয়। খাওয়া শেষ হতেই বুয়ার সাথে টুকটাক কাজ করতে লাগে দুজনে। মিশু আর আলভির এমন বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে বুয়া অনেক টাই সন্তুষ্ট। কাজ শেষে মিশু নিজের রুমে চলে আসে। ভাবতে লাগে কাল রাতের কথা।

কালকে আমি কোথায় ছিলাম? ওই কুটির টা কি এই বাংলোতেই? না অন্য কোথাও। আর ওই অবয়ক গুলা কিসের রহস্যের কথা বললো? নাহ এই পুরো বাড়ি সম্পর্কে সব আমায় জানতেই হবে। এই বাড়িতে এমন কি রহস্য আছে যার জন্য আমার বাবা অকালে প্রাণ হারালো। সব জানতে হবে।

মিশুদের বাংলো টা কিশোরগঞ্জ এর একটি ছোট গ্রামে। মিশুরা শহরে থাকতো কিন্তু তার বাবার ইচ্ছা ছিলো শেষ বয়সে গ্রামে থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নদী ভাঙ্গনের ফলে তাদের জমি বাড়িঘর সব পানির নিচে চলে যায়। তাই তাড়াহূড়োয় এই বাংলো টা কিনে ফেলে। কিন্তু কে জানতো এই বাংলোতেই সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবে?

আমার ভাবনার মাঝেই আলভি রুমে ঢুকে আমার পাশে বসে কিন্তু আমার সেদিকে খেয়াল নেই আমি তো চিন্তায় মগ্ন। আলভি আমায় হালকা ধাক্কা দিতেই ধ্যান ভাঙ্গে।

আলভি- কি ভাবছিস?

মিশু- না কাল রাতের কথা ভাবছিলাম।

আলভি- হুম আসলেই অনেক অদ্ভুত আর ভয়ংকর বিষয়।

মিশু- আমি ভাবছি এই পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখবো।

আলভি- হুম এখন লাঞ্চ টাইম। লাঞ্চ টাঞ্চ করে রেস্ট নিয়ে একেবারে ৪টায় বের হবো।

মিশু- ঠিক আছে তাই হবে। তুই যা আমি আসছি।

আলভি- ওকে।

বলেই আলভি নিজের রুমে চলে আসে। মিশু শাওয়ার নিয়ে নামাজ পরে খাবার টেবিলে চলে যায়। তারপর একসাথে খেয়ে রেস্ট নিয়ে বাংলো থেকে বের হয় খোজ নিতে। কিছুদূর যেতেই একটা ছোট ধরণের চা, সিগারেট, পান, বিস্কুট এর দোকান। সেখানে গিয়ে মিশু খোঁজ নেয়।

মিশু- আচ্ছা কাকু এই বাংলো সম্পর্কে কি কিছু জানেন?

কাকু- না রে মা আমি তো এই কিসুদিন হইলো এখানে আশসি আগে আমার বাপে এই দোকান চালাইতো। হেয় মারা যাওয়ায় আমি এই হানে তার জায়গায় করতাসি। আর বাংলো সম্পর্কে হয়তো এলাকার মুরুব্বি রাই ভালো কইতে পারবো।

দোকানে বসে চা খাওয়া আরেক টা লোক বলে উঠে,

– আমি হুনসিলাম এই বাংলো লইয়া অনেক কাহীনি আছে।

আলভি- কি কাহীনি আমাদের বলতে পারবেন?

– তা তো কইতে পারুম না আম্মা।

মিশু- ওহ যাই হোক ধন্যবাদ আপনাদের।

বলেই সেখান থেকে মিশু আর আলভি চলে আসে।

আলভি- যা ভাবছিলাম তাই তো হলো।

মিশু- হুম।

তখনই আমার চোখ গেলো বাংলোর পশ্চিম সাইডে বড় বাউন্ডারি এবং সেটা অনেক জায়গা নিয়েই দেওয়াল। কেমন অদ্ভুত সেটা। ভেতরে কি আছে বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল।যাইহোক সেই দিক পাত্তা দিলাম না। এখন জানতে হবে কে জানে এই বাংলোর অতীত। একমাত্র সেই বলতে পারবে।

ভেবেই মিশু আবার খোঁজ লাগানো শুরু করে।