মেঘ রোদ্দুর পর্ব ১

“আজকেই এই সংসারে আমার শেষ দিন। আর কোনোদিন ফিরবোনা এখানে। আমি জানি সত্যটা যদি রোদ জেনে যায় তাহলে নিজের জীবন চলে গেলেও আমাকে যেতে দিবে না। তাই আমার কাজিনের সাথে মিথ্যা প্রেমের নাটক করেছি। এই বার রোদ একটু শান্ত হয়েছে। আমার সুখের জন্য সে এখন আমাকে মুক্ত করে দেবে বলেছে।


,
ওর মায়া কাটিয়ে উঠবো কিভাবে আমার জানা নেই কিন্তু ওর সাথে থাকলে যে আমি ওকে পরিপূর্ণতা দিতে পারবোনা। একজন মেয়ের সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি তার মা হওয়া ঠিক তেমবি একজন ছেলের জীবনের সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি তার বাবা হওয়া। আমি তো কোনোদিন মা হতে পারবোনা তাই বলে কি আমার ভালোবাসার মানুষকে অপূর্ণ রাখবো? এটা আমি পারবোনা। আমার ব্যর্থতার ফল শুধু আমি ভোগ করবো। এর ভিতর রোদকে টেনে আনবো না। সে ভালো থাকবে, তার নতুন স্ত্রী হবে , ফুটফুটে একটা রাজকুমার কিংবা রাজকুমারী আসবে। তুল তুলে হাত পা দিয়ে আমার রোদকে ছুয়ে দেবে। তার রৌদ্রময় জীবনে মেঘের কোনো অস্তিত্ব থাকবেনা। সুখে ভরে যাবে তার জীবন।”


,
-তবুও একবার ভেবে দেখিস মেঘ। তাকে ছাড়া কি তুই কোনো দিন ভালো থাকতে পারবি? নাকি সে ভালো থাকতে পারবে।
,
চায়ে চুমুক দিতে দিতে অদিতি মেঘকে জিজ্ঞাসা করলো।
,
মেঘ মাথা নিচু করে জবাব দিলো,
,
-কেন ভালো থাকতে পারবোনা। একশবার ভালো থাকবো আমি। কারণ আমার রোদ যে ভালো থাকবে। ওর ভালো থাকাটাই তো আমার ভালো থাকার কারণ। দুর থেকে যখন দেখবো মেঘ নিজের সন্তানের সাথে খেলছে তখন তার পুর্ণতা দেখে আমিও খুশি হবো।
,
-পারবিনা মেঘ কোনোদিন পারবিনা। সে পূর্ণতা পেলেও অপুর্ণ হয়ে থাকবি তুই। কারণ সন্তান টা হবে অন্য কারো। তাই বলছি সত্যটা রোদকে জানিয়ে দে যে তুই কোনোদিন মা হতে পারবিনা।
,
-তুই তো সব জানিস অদিতি। আমি যদি সত্যটা ওকে বলি তাহলে আমাকে দড়ি দিয়ে হলেও বেধে রাখবে। আমাকে কোনো দিন ওর কাছ থেকে আলাদা হতে দেবে না। তাই সত্যটা ওকে কোনোদিন জানতে দেবো না।

,
অদিতি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল, সে জানে মেঘ যা বলেছে তাই করবে। প্রিয় বান্ধবীর কষ্টের কথা শুনে তারও ভীষণ মন খারাপ। ইশ যদি নিজের ক্ষমতা থাকতো তাহলে মেঘের কোলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা রেখে দিতো। কিন্তু বিধাতার হাতে আছে যেটা সেটা মানুষ কিভাবে কাওকে দিতে পারবে। অদিতি নিজেও যে বিরাট অপূর্ণতায় ভুগছে।
,
মেঘের মত উদার সে না তাই হয়তো আহিলের সাথে সংসার করছে। আদিতির নিজেরও যে মা হওয়ার ক্ষমতা নেই। কিন্তু সে আহিলের কাছে এসবের কিছুই লুকাতে পারেনি। আহিল একটুও কষ্ট পায়নি অদিতির কথা। তার কথা একটাই, তুমি থাকলেই হলো।
,
,
🍁
সেই বিকালে অদিতি চলে গেছে। তারপর থেকে মেঘ চুপচাপ ঘরের ভিতরেই বসে আছে। একবার শুয়ে পড়ছে, একবার বারান্দায় যাচ্ছে। কিন্তু কোনো কোনোভাবেই মনের অস্থিরতা কাটছে না। টেবিলের উপরে থাকা ফ্রেমে বাঁধানো ফটোটা দেখছে। আজ থেকে ৫ বছর আগে ওঠেছিলো ছবিটা। বাসরের দিনের ছবি। ছবিটাতে রোদ ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকলেও মেঘ মাথা নিচু করে ছিলো। নতুন বউ ছিলো সেদিন তাই একটু লজ্জাবোধ কাজ করছিলো তাই মাথা উঁচু করে ক্যামেরার দিকে তাকাতে পারেনি। যদিও প্রেমের বিয়ে ছিলো তবুও নতুন বউ ছিলো তো। সেই হিসেবে একটু লজ্জাতো লাগবেই।
,


,
ছবিটাই হাত বুলাচ্ছে মেঘ। রোদের উজ্জল মুখটা দেখে ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু পরে ক্ষণ মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেলো। টোল পড়া মুখের হাসিটাই একটুকরো মেঘের আবির্ভাব হলো। মেঘ মনে মনে ভাবলো, এবার আমার নামের সার্থকতা এসেছে। হাসি দেওয়া আমাকে সাজে না। আমার নাম মেঘ, বুকে যেমন মেঘের আনাগোনা মুখেও ঠিক তেমনি থাকতে হবে তাহলেই তো মেঘ নামটার সার্থকতা ফুটে উঠবে।
,
,
দরজায় ধাক্কানোর শব্দে মেঘের ভাবনা শেষ হলো। দরজা খুলতেই দেখলো রোদ শুকনা মুখে দাড়িয়ে আছে। মুখে কোনো হাসি নেই আছে শুধু কষ্ট যেটা প্রকাশ করতে পারছেনা রোদ।
,
-অনেক ক্ষন ধরে দরজা ধাক্কাচ্ছি। কি করছিলে?
,
মেঘ তার রোদের মনে আরেকটু বিষ ঢেলে দেওয়ার জন্য বলল,
,
-নিলয়ের সাথে কথা বলছিলাম। গতকাল যাওয়ার পর পরসু আমাকে ডিভোর্স হবে। আগামী সপ্তাহে নিলয় আর আমি বিয়ে করবো।


,
মেঘ কথাটা বলল ঠিকই কিন্তু রোদের মুখের দিকে তাকানোর ক্ষমতা তার নেই৷ মায়া ভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে এতো বড় মিথ্যা বলার সাধ্য যে মেঘের নেই। তাই মাথা নিচু করেই সব বলল।
,
রোদ মেঘের মুখটা হাত দিয়ে ধরে উপরে দিকে ফেরালো।
,
-আমার চোখের দিকে তাকাও মেঘ। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো, তুমি অন্য কাওকে ভালোবাসো। বলো ড্যাম ইট!
,
মেঘ নিজের চোখের দৃষ্টি রোদের চোখের দিকে ফেলল, কিন্তু মিথ্যা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। এই চোখে ভালোবাসা নামক একটা গহীন কুপ আছে যেটা মেঘের সব মিথ্যাকে গ্রাস করে নিচ্ছে নিজের মাঝে। তাই ঐ চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা বলয়ায় ব্যার্থ হলো মেঘ।
,
রোদ হঠাৎ করেই মেঘের কপালে একটা উষ্ণপরশ ছুইয়ে দিলো। মেঘ হালকা কেপে উঠলো রোদের ভালোবাসার ছোয়ায়। মেঘের মন বলছে রোদ তাকে নিয়ে পাড়ি দিক ভালোবাসার এক অন্য জগতে যেখানে মেঘ-রোদ ছাড়া আর কেও থাকবেনা।
,
হঠাৎ মেঘের মনে হলো সেতো রোদ কে ছেড়ে চলেই যাবে তাহলে কে ভালোবাসার ডুব দিতে চায়। না না এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবেনা। এমন হলে রোদের মায়া ত্যাগ করতে পারবেনা মেঘ।
,
,
🍁
মেঘের মন এক কথা ভাবছে মস্তিষ্ক অন্য কথা, মনটা বার বার চায় মেঘ আর রোদ মিলেমিশে একাকার হয়ে যাক।


,

🍁
মেঘের কাপাকাপা ঠোঁট গুলো বারবার রোদলে তাদের কাছে ডাকছে। এই অবস্থায় নিজেকে সামলে রাখতে পারছেনা রোদ। নিজের ঠোঁট দ্বারা মেঘের ঠোঁট আকড়ে ধরলো রোদ।
,
মেঘও জীবনের শেষ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হতে চায়না। কাল থেকে সে আর থাকবেনা তার রোদের জীবনে। তাই আজকের ভালোবাসাটা সারা গায়ে মাখতে চায় সে।
,
মেঘ নিজেও রোদের সাথে জড়িয়ে গেল তাদের ভালোবাসার অজানা ঠিকানায়।
,
,
চলবে

নেক্সট পর্ব পেতে নিয়মিত চোখ রাখুন সোশ্যালব্লগওয়ার্ল্ড এ