মিস্টার সাইকো পর্ব ১ Love Story

-একটা মেয়ে হয়ে তুই ধুমপান করিস কিভাবে?

দিহানের কথা চমকে উঠলো দিয়া।

-তুমি যা ভাবছো তেমন কিছু না। জিজুর সিগারেট এটা। উনি নিচে গেছে বাবা দেখলে লজ্জায় পড়বে তাই আমার কাছে এটা দিয়ে গেছেন।
,
-এখন তো বানিয়ে বানিয়ে কথা বলবিই। কিন্তু আমিও ছেড়ে দেবার পাত্র না।
এই বলে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দিয়ার ছবি তুলে নিলো।
,
-এই ছবি দিয়ে তুমি কি করবে দিহান ভাই?
,
-সারা দুনিয়াকে দেখাবো। যারা তোকে ভদ্র বলে জানে তাদের কাছে তোর মুখোশ উন্মোচন করব। তুই কতটা সাধু সেটা সবাইকে জানাতে তো হবে নাকি?
,
-দেখো দিহান ভাই, তুমি কিন্তু একটা ছোট্ট বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করছো। আমি তো বললাম এটা জিজুর সিগারেট।
,
-নিজেকে বাচানোর জন্য কত কথায় না বলছিস। আমি এখন যায়। নেট ফুরিয়ে গেছে। আগে নেট কিনবো তারপর তোকে সবার সামনে তুলে ধরবো। দুইদিনে তুই সেলিব্রিটি হয়ে যাবি ভাবতে পারছস বিষয়টা?
,
দিহানের এমন আচরণ সব সময় দিয়াকে কষ্ট দেই। দিয়ার ছোটোখাটো ভুল গুলো সবার সামনে তুলে ধরে সব সময় ওকে অপমান করতে চায়।
,
ওহো পরিচয় দেওয়াই তো হয়নি।
,
দিয়া বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় অনার্স করছে। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আর দিহান হলো দিয়ার মামাতো ভাই।
,
ছুটিতে দিয়া বাড়িতে এসেছে। এদিকে বাড়ি আসতে না আসতে সাইকোটা ফুফুর বাড়ি হাজির।
,
এইতো এখনকার ঘটনায় দেখলেন। দিয়ার জিজু মানে দিয়ার বড় আপু হিয়ার বর সেজান আর দিয়া ছাদে বসে গল্প করছিলো। এমন সময় শ্বশুর মশায়ের ডাক পড়ে। সিগারেট হাতে করে শ্বশুরে সামনে জাওয়াটা লজ্জার বিষয় সাথে সাথে শ্বশুরকে অপমানও করা হয়। তাই সেজান। সিগারেট টা দিয়ার হাতে দিয়ে,
,
– এটা ধরো।দেখি তোমার বাবা কি জন্য ডেকেছেন?
,
সেজান নিচে যেতেই দিহানের এন্ট্রি হয় ছাদে। দিয়ার হাতে সিগারেট দেখেই এসব কান্ড করে বসে।
,
দিয়া বারবার বলার পরের কোনো কথা কানে না নিয়ে দিহান বাড়ি থেকে বের হতে ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে ডাটা কিনে নেয়। ফেইসবুকে ঢুকেই দিয়ার সিগারেট খাওয়া ছবি পোস্ট করে ক্যাপশন দেয়,
হাই বন্ধুরা,
এটা আমার ফুফাতো বোন দিয়া। সিগারেট খেতে খুব ভালোবাসে। আজকে আমাকে ডেকে বলল,” দিহান ভাই আমি সেলিব্রেটি হতে চাই, তুমি আমার এই একটা ছবি তুলে ভাইরাল করে দাও”। তাই তার কথা মত কাজ করলাম। আশা করি পোস্ট টি শেয়ার করে আমার ফুফাতো বোন কে সেলিব্রিটি করে দিতে সাহায্য করবেন।
,
দিহান বাড়িতে ফিরে দেখে। দিয়া ওর বাবা আরমান আহমেদের সামনে গালে হাত দিড়িয়ে কান্না করছে আর কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু আরমান আহমেদ বলছে,
,
-ছিহ তোমাকে মেয়ে বলতে আমার ঘৃণা হচ্ছে। শহরে লেখা পড়া করতে পাঠিয়েছি। ভেবেছি মানুষের মত মানুষ হবে। কিন্তু না তুমিতো ছেলেদের ক্যারেক্টার নিয়ে বসে আছো।
,
দিয়া কান্না করতে করতে বলতে লাগলো,
-বাবা তুমি যা ভাবছো তার কোনো সত্যতা নেয়।
,
-কিসের সত্যতার কথা বলছিস তুই। একটা মেয়ে হয়ে সিগারেট খাওয়া ছবি ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছিস কিভাবে?
,
-বাবা আমি কিছুই করিনি যা করেছে সব দিহান ভাই।
,
আরমান আহমেদ দিয়ার গালে আবার একোটা চড় দিয়ে দিলো।
-দোষ করবি নিজে আর দোষী করতে চাইবি আরেকজন কে?
দুর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে।
,
দিয়া একবার ওর জিজুর দিকে তাকালো, যার অর্থ,” জিজু আপনার সম্মান বাচানোর জন্যই তো আমি সিগারেটটা নিয়ে ছিলাম। কিন্তু এই ছোট্ট বিষয় নিয়ে কি একটা হয়ে গেলো দেখুন। আপনিতবে সব জানেন। বাবাকে কিছু একোটা বলুন।”
,
কিন্তু একজনের চোখের ভাষা আরেকজন বোঝে কিভাবে। দিয়া এবার দিহানের দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের ঘরের দিকে কান্না করতে করতে দৌড়ে চলে গেলো।
,
,
হিয়া অনেক্ষণ দরজা ধাক্কানোর পর দিয়া দরজা খুললো,
দরজা খুলে আপুর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না করতে লাগলো দিয়া।
,
হিয়া দিয়াকে নিয়ে যেয়ে খাটের উপর বসালো।
,
-তুই কি বিশ্বাস করিস আপু আমি এমন কাজ করেছি?
,
-সয়ং তুই এসে যদি বলিস সিগারেট খেয়েছিস আমি তবুও বিশ্বাস করবো না। তাছাড়া তোর জিজু আমাকে কথাটা জানিয়েছে। কিন্তু বাবার সামনে কিছু বলতে পারেনি লজ্জায়। জামাই বলে কথা।
,
-আপু এই সামান্য বিষয়টা নিয়ে দিহান ভাই এমন কাজটা কিভাবে করলো বলতে পারিস? আমিতো ছাদেই ওনাকে সব বলেছিলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমাকে নাকি সেলিব্রেটি বানিয়ে ছাড়বে।
,
-তুই মন খারাপ করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
,
-কিভাবে ঠিক হবে আপু? ভালো কাজ মানুষ মনে রাখে না। কিন্তু আমার এই ছোট্ট কাজটা সবাই মনে রাখবে। আমাকে নিয়ে মজা করবে।
,
-কেও কিচ্ছু করবেনা। মনে রাখিস তুই আমার বোন।
কেও তোকে কিছু বললে তাকে আমার সাথে মোকাবেলা করা লাগবে।
,
-কিন্তু ওই সাইকোটা ছবিটা ফেইসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমার ক্যাম্পাসের বন্ধুবান্ধব যদি এটা দেখে আমি মুখ দেখাবো কিভাবে।
,
– তুই এতো চিন্তা করিস না তো বোন। এই তোকে ঘুম পাড়িয়ে দিই।
,
হিয়া দিয়াকে শুয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর হিয়া বলছে,
,
-জানিস আপু, আমার এই ছোট্ট মনটা একজনকে ছাড়া কিছুই ভাবে না। তিল তিল করে গড়ে তোলা আমার এই ভালো বাসা। মনটা চায় সারাজীবন তার সাথে কাটাবো, কোনো এক পবিত্র সম্পর্কে, কোনো এক পবিত্র বন্ধনে। কিন্তু তার কাজকর্ম সব কিছুই তাকে ভালোবাসার বিপরীতে যায়। আমাকে কষ্ট দিয়ে সে কি মজা পায় আমি বুঝিনা।
,
-কাওকে ভালোবাসলে তার দেওয়া কষ্ট গুলোও মেনে নেওয়া শিখতে হয়। এতে সে একসময় দেখবি আর কষ্ট দিতে পারবে না। শুধু ভালোবাসবে।
,
-কিন্তু তার দেওয়া কষ্ট যে সমাজের সবাই দেয়। আমিতো চাই সে একা কষ্ট দিক। কিন্তু সে আমাকে প্রচার করায়। যাতে করে সবাই আমাকে অপমান করতে পারে।
,
-তুই দিহানকে ভালোবাসিস না???
,
হিয়ার কথা শুনে দিয়া ফুপিয়ে ওঠে।
,
-বিশ্বাস কর আপু আমি কোনোদিন ওকে ভালোবাসতে চাইনি। কিন্তু কিভাবে যে কি হয়েগেছে আমি নিজেই বুঝতে পারিনি।
,
-নিজের মনের কথাটা বলছিস না কেন? সময় থাকতে সব বলে দে?
,
-সব সময় আমার সাথে দুঃব্যবহার করে। আমি কিভাবে ওকে বলবো আমার মনের কথা। দেখা যাবে সেই কথাটাও রেকর্ড করে ফেইসবুকে ছেড়ে দিবে। আমি পৃথিবীর কাওকে ভয় পাইনা। কিন্তু ওই সাইকোটা কে দেখলে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।

লেখিকা – রাফিজা আক্তার সাথী

……………………………………………………

আপনার লেখা সরাসরি আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন  আমাদের এডমিনগণ আপনার লেখা যাচাই বাঁচাই করে আমাদের ব্লগে মূল পাতাই আপনার লেখাটি প্রকাশ করবেন ।

হেড এডমিন এর fb.com/YousufRanaDhali

১টি মন্তব্য