তুমি যাকে ভালবাসো পর্ব ১

– আমার ডির্ভোস চাই।- ডিভোর্স?

অহনা তুমি কি বলছো এইসব?

“অহনার কথা শুনেই রিহান থমকে গেলো কয়েক মূহুর্তের জন্য। কয়েক মূহুর্তের জন্য যেনো পৃথিবীটা থমকে যায়। অহনার কাছ থেকে এমন কথা শোনার জন্য কখনোই প্রস্তুতু ছিল না। অবাক আর বিস্ময়ের চোখে তাকাতেই অহনা বলে উঠলো…..

– হ্যা, আমি যা বলছি তাই। আমি আর তোমার সাথে থাকতে পারছি না। আমার সেফারিট চাই। মুক্ত আকাশে নিজের মতো করে বাঁচতে চাই।- অহনা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? কি বলছো তুমি তা একবার ভাবতে পারছো?- হ্যা, আমি পাগল হয়ে গেছি। এখানে থাকতে থাকতে পাগল হয়ে গেছি। এখন এখান থেকে মুক্ত হতে চাচ্ছি।

“রিহান কে কথা গুলো বলেই হাতে থাকা চিরুনি টা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রিহান কিছু বলতে গিয়েও থমকে দাঁড়িয়ে রইল। ” অহনার চলে যাওয়ার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে রইলো। এই অহনার সাথে তাঁর ভালবাসার মানুষ কে কখনোই খুঁজে পাচ্ছে না। কোথায় যেনো হারিয়ে ফেলেছে।

” রিহান সেদিন বুঝতে পেরেছিল ইচ্ছে করে কেউ চলে যেতে চাইলে তাকে কখনোই জোর করে আটকে রাখা যায় না। তবু শেষ চেষ্টা করেছিল রিহান। ” হঠাৎ করেই বাচ্চা টা কান্না শুরু করে দেয়। রিহানের ভাবনায় ছেদ পড়ে। রিহান যেনো কয়েক অতীতের জীবনে ডুবে ছিলো। কান্নার আওয়াজ শুনে সেই অতীত থেকে ফিরে আসে। তাড়াতাড়ি গিয়ে বাবু টাকে কোলে তুলে নেয়। অনেক চেষ্টার পরও বাবু টাকে শান্ত করতে পারছে না। আর পারবেই কি করে??? ” ছয় মাসের বাচ্চা কে একজন মা ছাড়া কি রাখা যায়? এই ছোট বয়সে তো মায়ের আদরে থাকে। যেই বয়সে মায়ের বুকের দুধ খেয়ে আদরে ঘুমানোর কথা সেই বয়সে যে একা থাকতে হয়। আর বাবা যতই করুক না কেনো মায়ের ভালবাসা যার কোন মূল্য নেই।

“যেদিন রিহানের উপর ডির্ভোস পেপার টা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেলো। রিহান অনেক আকুতি মিনতি করেও ফেরাতে পারেনি অহনা কে। রিহান অহনাকে নিজের জন্য চাই নি। তাঁর ছোট্ট তিন মাসের সন্তানের জন্য থাকতে বলছিল। অহনার পায়ে পড়েও ফেরেতে পারেনি। সবকিছু তুচ্ছ করে চলে যায়। এক রাশ কষ্ট বুকের ভেতর জমা রেখে আবার বাবুর দিকে মনোযোগ দিলো। পুরানো অতীত গুলো যতই মুছে ফেলতে চেষ্টা করে জীবন থেকে ততোই যেনো নাড়া দিয়ে এলোমেলো করে দিয়ে যায়।

” এই তো, আব্বু। আমি এসে পড়েছি। খিদে লেগেছি বুঝি, আমার লক্ষী বাবা। তোমাকে এখনি খাইয়ে দিবো। ” রিহান আদর করে বুকের কাছে আগলে তুলে নেয়। টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো বাবুর দুধ টুকু দিয়ে যায় নি। রিহান কাজের মেয়ে কে ডাক দিয়ে বললো……

– রহিমা, তাড়াতাড়ি বাবুর দুধ টুকু দিয়ে যা। “রিহান বাবুকে নিয়ে পায়চারি করতে থাকে। তখনো কান্না করে যাচ্ছে। কোন ভাবেই কান্না থামতে পারছে না। ” রিহান কে পিছন থেকে ডাক দিয়ে বললো…..- ভাইজান, বাবু টাকে আমার কাছে দেন। আপনি অফিস থেকে এই শরীরে বাবুকে কোলে নিলেন কেন??- কি করবো? বাবু যে কান্না করছে। আমার বাবা টা কান্না করবে আর আমি কি ভাবে তা মেনে নিবো?

– হু, যখন বাবু কে এতোই আদর করেন তাহলে একটা মা নিয়ে আসেন না কেনো? এই বয়সে বাবুরা মায়ের কোলে থাকতে চায়। ” বাবুকে কোলে নিতে নিতে বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠেই কথাগুলো বললো। আর বলবেই না কেনো? রহিমার কোলে বাবু কে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। যদিও ফ্রেশ হতে নই নিজেকে আড়াল করতে। বুকের ভিতর আঁকড়ে থাকা ভালবাসা টুকু যে কুড়েঁ কুড়ে খাচ্ছে প্রতিনিয়তই। “এই ছোট্ট বয়সে মা ছাড়া কি ভাবে থাকে? সাহেব কে সেই কবে থেকে বলছে তবু কোন পাত্তা দিচ্ছে না। রহিমা নিজেও যে পারে না বাচ্চা কে আগলে রাখতে। যতই হোক না কেনো সে আর মায়ের মাঝে দিন রাত পাথক্য। ” এমন ফুটফুটে বাচ্চা রেখে কেউ চলে যেতে পারে?

যদি তাঁর মেম সাহেব অহনাকে না দেখতে তাহলে অজানাই থেকে যেতো। এতো সুন্দর সংসার। কি ছিলো না?? তাঁর পরও কোন ছোকরার প্রেমে পড়ে সবকিছুই রেখে চলে গেলো। এটা মা নাকি অন্য কিছু?? রহিমা বাবু কে কোলে নিয়ে দুধ খাইয়ে দিচ্ছিলো। আর নিজে নিজেই একা একা বকবক করছিল। বাবু টাকে কোলে দিয়েই ফ্রেশ হতে চলে যায় রিহান। ফ্রেয় হয়ে এসেই রহিমা কে বললো…… – আমার কোলে বাবুকে দাও।- সাহেব, আমি বলি কি আপনি আরেকটা বিয়ে করেন। আপনার জন্য না হলেও এই ফুটফুটে বাচ্চা টার জন্য। “রিহান বাবুকে চাইতেই বেশ আকুতি সুরে কথা গুলো বললো। রহিমার কথা গুলো শুনে মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। রহিমার দিকে বেশ রাগী আপেক্ষ নিয়ে বললো…..- দেখ, এই কথা আর কখনোই আমার সামনে বলবি না। – কেন বলবো না? ওই ডাইনী টার জন্য আর কত বাবু টাকে কষ্ট দিবেন? আর সব মেয়ে রা এক রকম? যে ছোক*****

– রহিমা……. রিহানের চিৎকার শুনে ভয়ে চুপ হয়ে যায়। রহিমার কোল থেকে বাবু কে একপ্রকার কেড়ে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রহিমা আর কিছু বলার সাহস করতে পারেনি। এতোদিনের এই নিষ্ঠুরতম দিনে সাহেবের চোখে পানি দেখে আর কিছু বলার মতো কিছু খুঁজে পায়নি। পাবে কি করে??

” অনেক বেশি ভালবাসতো যে। হয়তো এখনো ভালবাসে। যা আড়াল থেকে অনেক বার দেখেছে সেই মানুষটির ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে। – দেখ তখন থেকে ছেলেটা দেখেই যাচ্ছে ক্যাবলার মতো,যেন কোনোদিনও মেয়ে দেখেনি।- হ্যা, আর দেখবেই নাহ কেন? আমাদের সুন্দরী বান্ধবী কে না দেখে উপায় আছে?” কলেজের মাঠে বসে বসে তিন বান্ধবী আড্ডা দিচ্ছে। তখন তাকিয়ে দেখে তাঁদের দিকে একজন তাকিয়ে আছে। ” রুমার কথা শুনেই সোমা মুচকি হেঁসে বললো…..- হ্যারে, রুমা। তুই ঠিকই বলেছিস। আর ছেলেটাও কিন্তু কম দেখতে না।- সে যা বলেছিস। এই রাইসা………..- হ্যা….. সোমার কথা শুনেই হকচকিয়ে উঠে রাইসা। রাইসাকে চমকে উঠা দেখেই রুমাকে সোমা বললো……

– আমাদের রাইসা কি আর এই দিকে নজর আছে? সে তো পরে আছে রাহুল কে নিয়ে। “তারা দুজনেই একসাথে হেঁসে উঠলো। রাইসা তাঁদের হাসতে দেখে বেশ কিছুটা রাগ করলেও যখন রাহুলের কথা শুনলো তখন মনের অজান্তেই তাঁর কথা মনে পড়ে গেলো। আর পড়বেই নাহ কেনো?? ” রাহুল কে যে মনে মনে পছন্দ করে রাইসা। কলেজের অনুষ্ঠানে রাহুলের গান শুনেই তাঁর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। যদিও মুখ ফুটে কখনোই রাহুলকে বলতে পারে নি। কি হ্যান্ডসাম দেখতে। রাইসাকে সোমা খোঁজা দিয়ে বললো….- কি রে? আর কত অপেক্ষা করবি। এবার তো রাহুল কে বলে দে মনের কথা টা।- চুপ করবি তুই? আমি আছি আমার চিন্তায় আর ওনি এসেছেন রাহুলের প্রেম নিয়ে। তোর যখন এতোই ইচ্ছে তা তুই বলে দে তুই ভালবাসিস।- হু, আমার বয়ে গেছে। আমি কি ভালবাসি নাকি?- সে তো জানি। পাশে থাকার জন্য যে ঘুরঘর করিস। “রাইসা সোমাকে বলতেই সোমা ভেংচি কাটলো। রাইসার কান্ড দেখে দুজনেই হেসে উঠলো। হাসি থামিয়ে রুমা রাইসাকে বললো….

– হ্যারে, তুই সেই কখন থেকে কি ভাবছিস। কি হয়েছে বলবি তো?- কি আর বলবো? আমার জন্য পাত্র দেখেছেন। তাও ডিভোর্সি ছেলে, একটা ছয় মাসের বাবুও আছে। তুই বল, আমি কি করে বাসায় না করি। “রাইসার কথা শুনেই একে অন্যের মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। রাইসা মন খারাপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। বাসায় মুখ ফুটে বলতেও পারছে না এমন ছেলে কে বিয়ে করবে না। রাইসার কথা শুনেই সোমা খোঁজা দিয়ে বললো…..- রাহুলের মতো ছেলের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে শেষ পর্যন্ত কি-না ডিভোর্সী কাউকে বিয়ে করবি? ” রাইসার মনের অবস্থা রুমা বুঝতে পারে। রাইসা কে অভয় দিয়ে বললো….- তুই চুপ কর তো। এই তুই টেনশন করবি না। এতো ভাবতে হবে না। আমরা থাকতে তোর সাথে এমন হতেও পারে না। মনে কর বিয়ে ঠিক হবে না। তবে আমাদের ট্রিট দিতে হবে। ” রুমার কথা শুনেই হা করে তাকিয়ে রইল। রাইসা তাঁর আব্বু কে এতো ভয় পায় যে সাহস হচ্ছে না বলার জন্য। রুমার হাত চেপে ধরে বললো…..

– কি করে?- সেটা তোর ভাবতে হবে না। তুই শুধু যেদিন দেখতে আসে আমাদের বলিস। বাকী টা দেখে নিবো।- ওকে, যদি পারিস তাহলে ট্রিট দিবো। রাইসা তাঁর মায়ের শাড়ি পড়ে বাধ্য মেয়ের মতো গিয়ে বসতে হলো। যদিও কোন দিন শাড়ি পড়েনি। “খুব বেশি সময় থাকতে হয় নি। রাইসাকে একনজর দেখেই অন্য রুমে পাঠিয়ে দিল। রাইসার চোখের অশ্রু গুলো টলমল করছিলো। যদিও কারো চোখে পড়েনি। ” অন্য রুমে চলে আসতেই রাইসা রুমাকে বললো…… – রুমা, এখন কি করবো? বাবা যে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে?- বিয়ে ঠিক হয়েছে বিয়ে তো আর হয়ে যায় নি। আর ছেলেও কেমন? একটু লজ্জা নেই? ডির্ভোসী হয়ে কুমারী মেয়ে খুঁজে। কেনো দেশে কি ডির্ভোসী মেয়ের আকাল পড়েছে?- হ্যা, তা যা বলেছিস। এই একটা দেষ সব পুরুষের। নিজের কেমন সে খেয়াল নেই বিয়ে করার সময় কচি মেয়ে খুঁজে। “রুমা আর রাইসার কথার রেশ ধরেই কথাগুলো বললো সোমা। তিনজনেই এক বাক্যে সায় দিয়ে উঠলো। রাইসার দিকে তাকিয়ে রুমা তখন বললো…..

– রাখ, ব্যাটা কে এমন শায়েস্তা করবো না যে কচি মেয়ে বিয়ে করার শখ মিটে যাবে। “রিহান তাঁদের কথা গুলো আড়াল থেকে সবকিছুই পেলো। একটা সময় মনে হয়েছিল গিয়ে সরাসরি বলে দিক তাঁর বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। শুধু রাইসা কেনো? কোন মেয়ে কে বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। কেননা মেয়ে রা অনেক লোভী হয়। শুধু মা-বাবার মুখের কতা মনে হতে আর কিছু বলতে পারেনি। বলতে পারেনি তাঁদের সামনে গিয়ে কথা গুলো বলার প্রতিবাদ করতে। তাঁদের ধারণা গুলো সম্পূর্ণ ভূল ছিল। ” চুপচাপ দরজার সামনে থেকে চলে আসে। বিয়ের তারিখ একপ্রকার ঠিক করে ফেলে হয়। ” রিহানের একটু দেরি হয়ে যায়। কফি শপে এসেই দেখে রাইসা তাঁদের বান্ধবীদের সাথে বসে আছে। প্রথম বার দেখতে গিয়ে তাঁর বান্ধবীদের সাথে পরিচয় হয়েছিল। রিহান এসেই তাড়াতাড়ি এগিয়ে বললো…..

– সরি, একটু দেরি হয়ে গেলো। কি খাবেন কফি বা…….- দেখেন মিস্টার, আমি এখানে আপনার সাথে চা কফি খেতে আসি নি। রিহানকে থামিয়ে দিয়ে রাইসা কথা গুলো বললো। রাইসার কথা গুলো শুনেই মুচকি হেঁসে দিয়ে রিহান বললো….- হুম, জানি কি জন্য এসেছেন। আপনি আমি কিংবা আমার ছেলেকে মেনে নিতে পারবেন নাহ সেটাই তো। এই কথা গুলো বলার জন্য ডেকেছেন তাই নাহ…. ভয় নেই। বিয়ে টা আমি ভেঙে দিবো। রিহানের কথা গুলো শুনে একটু অবাক হলেও রাইসা বললো….

– আপনি নিজেকে কি…………(চলবে)

Writer:- Khairozaman Akash