আল- কোরআন Bangla Blog

কোরআন একটি অতীব মর্যাদা পূর্ণ গ্রন্থ | প্রতিটি মুসলমানের জন্য কোরআন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থ| কোরআন আল্লাহ তা’ল্লার পক্ষ হতে প্রতিটি মুসলমানের জন্য অতুলনানীয় উপহার| মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে “কোরআন আল্লাহ তা’ল্লার বানী এবং মহানবী (সঃ) এর উপর কোরআন নাযিল হয়েছে | কোরআন একটি প্রকৃত মুসলমানের প্রতিচ্ছবি| কোরআনে বর্ণিত আছে যে ” আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক নেই” এই উক্তি গুলো প্রতিটি মুসলমান মন- প্রান দিয়ে বিশ্বাস করেন | আসমানী চার বড় কিতাব গুলোর মধ্যে কোরআন হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব| একজন প্রকৃত মুসলমান তার দিন অতিবাহিত করে কোরআন অনুসারে| তাঁর সকাল শুরু করে ফজরের নামায দিয়ে | দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায গুরুত্ব সহকারে আদায় করে| কোরআনের প্রতিটি পাতায় পাতায় আছে ইসলামের ছায়া | কোরআনের মধুর বানী যে কারো মন কেড়ে নেয় | আল্লাহ তা’ল্লা বলেন “আমি কোরআন মাজিদ নাযিল করেছি ,আমি এর হেফাযতকারী| প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হল কোরআনে বর্ণিত আল্লাহ তা’ল্লা যা নিষেধ করেছেন সেগুলো হতে বিরত থাকা এবং যা আদেশ করেছেন তা অন্তর থেকে পালন করা| মহানবী (সঃ) এর সাহাবীগন আল্লাহ তা’ল্লার সকল আদেশকে মান্য করে কোরআন তিলাওয়াত করতেন তাই তারা পৃথিবীর নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয়েছিলেন| আল্লাহ তা’ল্লা লওহে মাহফুজে কোরআনকে হেফাযত করে রেখেছেন| পবিত্র কোরআন সর্বপ্রথম নাযিল হয়েছিল কদরের রাতে | দীর্ঘ ২৩ বছর ব্যাপী কোরআন নাযিল হয়| কোরআন সংরক্ষন করার দুটো মাধ্যম ছিল একটি মুখস্থ অন্যটি লিখে রেখে| মহানবী (সঃ) ও তাঁর সাহাবী গন কোরআন মুখস্থ করার সাথে সাথে গাছের কাঠে,বাকলে,পাথরে ইত্যাদি তৎকালিন উৎসে লিখে রাখতেন| যারা কোরআনের আয়াত লিখে রাখতেন তাদেরকে ওহী বলা হয়| ওহী লেখকের সংখ্যা ৪২ জন | সর্বশেষ আয়াত নাযিল না হওয়া পর্যন্ত মহানবী (সঃ) এর মৃত্যুর কারনে আল- কোরআনকে একটি পূর্ণ গ্রন্থ আকারে রূপ দেয়া সম্ভব হয়নি | হাফেজগন কোরআনকে লিখে ও মুখস্তকরনের মাধ্যমে সংরক্ষন করে রাখতেন | তখন কোরআনের হাতে লিখিত অনেক কপি বের হয়েছিল| মহানবী ( সঃ) এর মৃত্যুর পর খলিফা আবু বকর (রাঃ) কোরআনকে একটি পূর্ণ গ্রন্থে আকার দেয়ায় ব্যবস্থা করেন | কিন্তু তার খিলাফত কালে ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক হাফিস শহীদ হন|এতে হযরত ওমর (রাঃ) বলেন “এভাবে হাফেসগন শহীদ হতে থাকলে এক কালে কোন হাফেসই জীবিত থাকবে না| তখন আল- কোরআনকে গ্রন্থ আকারে রূপ দেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়|এরপর হযরত উমর (রাঃ) খালিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) কে কোরআনকে একটি পূর্ণ গ্রন্থে আকার দেয়ার পরামর্শ দেন| প্রথমে আবু বকর (রাঃ) রাজি না হলেও পরবর্তীতে হযরত উমর (রাঃ) তাকে রাজি করিয়ে নেন| কোরআনে একটি পূর্ন গ্রন্থে রূপ দেয়ার দায়িত্ব যায়িদ ইবনে (রাঃ) এর উপর দেয়া হয়| অতঃপর তিনি কিছু কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে কুরআন গ্রন্থায়ন করেন|এরপর কোরআনের মূল কপি হযরত আবু বকর (রাঃ) এর নিকট থাকে| হযরত আবু বকর এর মৃত্যুর পর হযরত উমর (রাঃ) এর নিকট রাখা হয়| এবং তার মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা এবং মহানবী (সঃ) এর স্থী উম্মুল মুমিনীন হযরত হাফসা এর নিকট সংরক্ষিত করা হয়|এরপর বহু সংখ্যক কপি করে বহু শহরে শহরে পাঠানো হয়|কোরআন সাতটি আন্ঞ্চলি রীতিতে পড়ার সুযোগ ছিল| ধীরে ধীরে বিপুল সংখ্যক লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে থাকে| কিন্তু কোরআনের উচ্চারন নিয়ে তাদের মতের ভিন্নতা দেখা দেয় কারন তারা কোরআনের সাতটি আন্ঞ্চলিক রীতির সাথে সম্পর্কিত ছিলেন না| সকলে একে অন্যের ভুল ধরতেন| এইজন্য অনেক ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়| এমনকি মুসলমানরাও একে অন্যের ভুল ধরতেন| তখন হযরত উসমান (রাঃ) কোরআন গ্রন্থায়ন নামে একটি কমিটি গঠন করেন| হযরত উমর (রাঃ) তার প্রধান সাহাবিদের মতে যায়িদ ইবনে সাবিত (রাঃ) ,আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইন (রাঃ) ,সাঈদ ইবনে আস (রাঃ) এই চার জনের মিলিত করনে কমিটি গড়ে উঠে| এই কমিটির প্রধান ছিলেন যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) |তিনি হযরত হাফসা নিকট হতে কোরআনের মূল কপি সংগ্রহ করে তার থেকে আরো অসংখ্য কপি করেন| এবং মূল কপিটি হাফসা (রাঃ) নিকট ফিরিয়ে দেন| এরপর কমিটির মূল কপিটির সমন্বয়ে একই রীতিতে কোরআন পাঠের মাসহাফ তৈরি করা হয়| একে ‘মাসহাফে উসমানি’ বলে| এরপর তা বিভিন্ন রাষ্ট্রে প্রেরণ করা হয়| এভাবেই পবিত্র কোরআনে অবিকৃত রাখার ব্যবস্থা করা হয়| হযরত উসমান (রাঃ) দ্বারা উক্ত ঐতিহাসিক কার্য সম্পাদন হয়েছিল বলে তাকে “জামেউল কোরআন বা কোরআন একত্রকারী উপাধি দেয়া হয় |